প্রশান্ত মৃধা
সিলেটের পশ্চিমের জেলা সুনামগঞ্জের অনেক জায়গা তখনো পানির নিচে। মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে। সে ছবি দেখলে সিলেট শহরের বাসিন্দাদেরও জীবন খানিক স্থবির হয়। এর কারণ এই শহরের অন্তত ৩০ ভাগ লোকের স্থায়ী ঠিকানা সুনামগঞ্জ। সেখানে প্রত্যেকেরই বাড়িঘর তলিয়েছে। সেই দুর্দশায় এখানকার মহানাগরিক জীবন খানিকটা অচল। সিলেটের তিনটি উপজেলাও বন্যা উপদ্রুত। সে ছাপও অনেকের কথায়। তবু মধ্যবিত্তের যে অংশ ‘গ্রামের বাড়ি’র সঙ্গে যোগাযোগ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর করে এনেছে, তার সঙ্গে যার এখনো সব সংযোগ আছে, দুই পক্ষের চোখে-মুখের ভাষা বুঝে নিতে চাইলে অনায়াসে ফারাক ধরা পড়ে। ওদিকে সুরমার পানি কমে কুশিয়ারার পানি বাড়তির দিকে।
এমন পরিস্থিতিতে শহরের কেন্দ্র জিন্দাবাজার এলাকায় দাঁড়িয়ে, মানুষের চোখমুখ পড়ে নেওয়ার চেষ্টায় যে কৌতূহল, তাকে অক্ষমের মৃত সৈনিকের ভূমিকায় অভিনয়ের মতো লাগে। আর মনে হয়, কিছু করার নেই বটে, প্রকৃতির খেয়াল আর এর প্রতি বৈরী আচরণে শোধ তো সে কিছু তুলবেই। এমন ভেবে আড্ডায় টেবিলও খানিকটা গরম করে তোলা যায়। তখন কেউ আমরা আবহাওয়াবিদ, কেউ পানি বা নদী কিংবা পাহাড় বিশেষজ্ঞ, কেউ বৃক্ষের আচরণ সম্পর্কে আগাপাছতলা জেনেবুঝে একেবারে ঠুঁটো জগন্নাথ। ওদিকে নির্মম পাহাড়ি ঢল যাদের জীবনের ওপর দিয়ে রথ দেখা আর কলা বেচা দুটোই সেরে নিয়ে যাচ্ছে, সেখানে টেবিলে দাবড়ানো রথযাত্রা সত্যিই মূল্যহীন।
রাত ১০টা নাগাদ জিন্দাবাজার পয়েন্টে বেশ ভিড়। পয়েন্ট, অর্থাৎ মোড় বা চত্বর। ঈদুল আজহার বাজার জমেনি। এই রাস্তায় রিকশা ঢুকেছে। ঘণ্টাখানেক আগে নিষিদ্ধ ছিল। ইঞ্জিন রিকশাও আছে। কিন্তু এত জোরে চলে যে ভয়ে প্রাণ কাঁপে। আশপাশে খুঁজে এক নওজোয়ান রিকশাওয়ালাকে গন্তব্য বললাম। যাবেন তিনি। ফলে সওয়ারিও অবাক। গন্তব্য মনঃপূত না হলে এত রাতে সাধারণত যেতে চায় না। তাহলে এটি বন্যার প্রভাব, সওয়ারি যেদিকেই যেতে চাক যাবেন। অন্য সময়? বেশ বিড়ম্বনাই।
ওঠার পরেই, একি! এই তরুণ তো ইঞ্জিনরিকশাকে হার মানান! চাইলে সিএনজি অটোরিকশাকেও পাশ কাটাতে পারেন। এমন তরুণের পক্ষে তা সম্ভব। সিটে বসার দরকারই যেন নেই তাঁর।
চৌহাট্টা পয়েন্টের ভিড়ে বাঁয়ে ঘুরতেও তাঁর গতি কমল না। এই বলগাহীনতাকে বুঝে নিতে তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, ‘বাড়ি কোথায়, আপনার?’ নিচু গলায় বললেন, ‘বিশম্ভরপুর!’
সুনামগঞ্জের বিশম্ভরপুর। যেখানে জেলা শহরের অনেক বাড়ির নিচতলা পানির নিচে ছিল দিন তিনেক আগে, সেখানে বিশম্ভরপুরের অবস্থা কল্পনা করে নিতে পারলাম। এবার তাঁর কাছে কী জানতে চাইব! বাড়িঘরের অবস্থা কেমন? তা জানা অপ্রয়োজনীয়। একটু আগে তাঁর গতি দেখে অনুমান করেছিলাম উত্তরবঙ্গের মানুষ হয়তো। শহরের ডেরা আমার গন্তব্যের দিকে, সেখানে ফেরার তাড়া। এখন মনে হলো, এমন বানভাসি মানুষ, আমাকে যত তাড়াতাড়ি নামিয়ে দিতে পারবেন, পাবেন আরেকটি ট্রিপ!
একটা কিছু তবু বলতে হয় বলেই যেন বললাম, ‘বাড়ি তো তলাইছে! সেখানে আছে কে কে?’
‘মায় আর ভাই।’ একটু থামলেন। গাড়ির হর্ন ও অন্যান্য শব্দে মাঝখানের কথার খানিকটা শোনা যায়নি। সে জায়গাটা আবার জানতে চাইলাম। বলতে বলতে দ্রুত প্যাডেল মারলেন, ‘সব তলাইছে। নাই কিছু। চাইর-পাঁচ দিন বাড়ির খবরও পাই নাই। চেয়ারম্যান-মেম্বার কেউর চেহারা দেখি নাই।’
অমন জোয়ান, পায়ে এমন শক্তি, এখনকার তুলনায় একটু নির্জন রাস্তায় গলার সব তেজ হারিয়ে ফেললেন নাকি? বাড়ি গেলে খাওয়াও জুটবে না, মহাজনের বাড়িতেও গোলার ধান ভেসেছে, এ অবস্থায় তাঁর মতো মানুষও সত্যি খাবে কী?
সেই মিয়ানো গলায় যখন আরও বললেন, ‘দুইটা গরু আছিল, তা-ও ভাসি গেছেগি!’ গলার স্বরে প্রায় কান্না। বাঁ দিকে খালের উল্টো পাশে মণিপুরি শ্মশান। অন্ধকার। তাঁর গলার নীরবতা ওই শ্মশানের নিস্তব্ধতাকেও হার মানাল!
এখনো রিকশা উড়ছে। হাওয়া গায়ে লাগে না। কান্নার স্বর কানের পাশে!
প্রশান্ত মৃধা,কথাসাহিত্যিক
সিলেটের পশ্চিমের জেলা সুনামগঞ্জের অনেক জায়গা তখনো পানির নিচে। মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে। সে ছবি দেখলে সিলেট শহরের বাসিন্দাদেরও জীবন খানিক স্থবির হয়। এর কারণ এই শহরের অন্তত ৩০ ভাগ লোকের স্থায়ী ঠিকানা সুনামগঞ্জ। সেখানে প্রত্যেকেরই বাড়িঘর তলিয়েছে। সেই দুর্দশায় এখানকার মহানাগরিক জীবন খানিকটা অচল। সিলেটের তিনটি উপজেলাও বন্যা উপদ্রুত। সে ছাপও অনেকের কথায়। তবু মধ্যবিত্তের যে অংশ ‘গ্রামের বাড়ি’র সঙ্গে যোগাযোগ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর করে এনেছে, তার সঙ্গে যার এখনো সব সংযোগ আছে, দুই পক্ষের চোখে-মুখের ভাষা বুঝে নিতে চাইলে অনায়াসে ফারাক ধরা পড়ে। ওদিকে সুরমার পানি কমে কুশিয়ারার পানি বাড়তির দিকে।
এমন পরিস্থিতিতে শহরের কেন্দ্র জিন্দাবাজার এলাকায় দাঁড়িয়ে, মানুষের চোখমুখ পড়ে নেওয়ার চেষ্টায় যে কৌতূহল, তাকে অক্ষমের মৃত সৈনিকের ভূমিকায় অভিনয়ের মতো লাগে। আর মনে হয়, কিছু করার নেই বটে, প্রকৃতির খেয়াল আর এর প্রতি বৈরী আচরণে শোধ তো সে কিছু তুলবেই। এমন ভেবে আড্ডায় টেবিলও খানিকটা গরম করে তোলা যায়। তখন কেউ আমরা আবহাওয়াবিদ, কেউ পানি বা নদী কিংবা পাহাড় বিশেষজ্ঞ, কেউ বৃক্ষের আচরণ সম্পর্কে আগাপাছতলা জেনেবুঝে একেবারে ঠুঁটো জগন্নাথ। ওদিকে নির্মম পাহাড়ি ঢল যাদের জীবনের ওপর দিয়ে রথ দেখা আর কলা বেচা দুটোই সেরে নিয়ে যাচ্ছে, সেখানে টেবিলে দাবড়ানো রথযাত্রা সত্যিই মূল্যহীন।
রাত ১০টা নাগাদ জিন্দাবাজার পয়েন্টে বেশ ভিড়। পয়েন্ট, অর্থাৎ মোড় বা চত্বর। ঈদুল আজহার বাজার জমেনি। এই রাস্তায় রিকশা ঢুকেছে। ঘণ্টাখানেক আগে নিষিদ্ধ ছিল। ইঞ্জিন রিকশাও আছে। কিন্তু এত জোরে চলে যে ভয়ে প্রাণ কাঁপে। আশপাশে খুঁজে এক নওজোয়ান রিকশাওয়ালাকে গন্তব্য বললাম। যাবেন তিনি। ফলে সওয়ারিও অবাক। গন্তব্য মনঃপূত না হলে এত রাতে সাধারণত যেতে চায় না। তাহলে এটি বন্যার প্রভাব, সওয়ারি যেদিকেই যেতে চাক যাবেন। অন্য সময়? বেশ বিড়ম্বনাই।
ওঠার পরেই, একি! এই তরুণ তো ইঞ্জিনরিকশাকে হার মানান! চাইলে সিএনজি অটোরিকশাকেও পাশ কাটাতে পারেন। এমন তরুণের পক্ষে তা সম্ভব। সিটে বসার দরকারই যেন নেই তাঁর।
চৌহাট্টা পয়েন্টের ভিড়ে বাঁয়ে ঘুরতেও তাঁর গতি কমল না। এই বলগাহীনতাকে বুঝে নিতে তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, ‘বাড়ি কোথায়, আপনার?’ নিচু গলায় বললেন, ‘বিশম্ভরপুর!’
সুনামগঞ্জের বিশম্ভরপুর। যেখানে জেলা শহরের অনেক বাড়ির নিচতলা পানির নিচে ছিল দিন তিনেক আগে, সেখানে বিশম্ভরপুরের অবস্থা কল্পনা করে নিতে পারলাম। এবার তাঁর কাছে কী জানতে চাইব! বাড়িঘরের অবস্থা কেমন? তা জানা অপ্রয়োজনীয়। একটু আগে তাঁর গতি দেখে অনুমান করেছিলাম উত্তরবঙ্গের মানুষ হয়তো। শহরের ডেরা আমার গন্তব্যের দিকে, সেখানে ফেরার তাড়া। এখন মনে হলো, এমন বানভাসি মানুষ, আমাকে যত তাড়াতাড়ি নামিয়ে দিতে পারবেন, পাবেন আরেকটি ট্রিপ!
একটা কিছু তবু বলতে হয় বলেই যেন বললাম, ‘বাড়ি তো তলাইছে! সেখানে আছে কে কে?’
‘মায় আর ভাই।’ একটু থামলেন। গাড়ির হর্ন ও অন্যান্য শব্দে মাঝখানের কথার খানিকটা শোনা যায়নি। সে জায়গাটা আবার জানতে চাইলাম। বলতে বলতে দ্রুত প্যাডেল মারলেন, ‘সব তলাইছে। নাই কিছু। চাইর-পাঁচ দিন বাড়ির খবরও পাই নাই। চেয়ারম্যান-মেম্বার কেউর চেহারা দেখি নাই।’
অমন জোয়ান, পায়ে এমন শক্তি, এখনকার তুলনায় একটু নির্জন রাস্তায় গলার সব তেজ হারিয়ে ফেললেন নাকি? বাড়ি গেলে খাওয়াও জুটবে না, মহাজনের বাড়িতেও গোলার ধান ভেসেছে, এ অবস্থায় তাঁর মতো মানুষও সত্যি খাবে কী?
সেই মিয়ানো গলায় যখন আরও বললেন, ‘দুইটা গরু আছিল, তা-ও ভাসি গেছেগি!’ গলার স্বরে প্রায় কান্না। বাঁ দিকে খালের উল্টো পাশে মণিপুরি শ্মশান। অন্ধকার। তাঁর গলার নীরবতা ওই শ্মশানের নিস্তব্ধতাকেও হার মানাল!
এখনো রিকশা উড়ছে। হাওয়া গায়ে লাগে না। কান্নার স্বর কানের পাশে!
প্রশান্ত মৃধা,কথাসাহিত্যিক
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
২ ঘণ্টা আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৩ ঘণ্টা আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৫ ঘণ্টা আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫