Ajker Patrika

জার্মানিতে ক্যারিয়ার: আগ্রহী ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই

জুবায়ের আহম্মেদ
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২২, ১৬: ১৭
জার্মানিতে ক্যারিয়ার: আগ্রহী ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই

উচ্চশিক্ষা বা স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের দেশগুলো। আর ইউরোপের প্রসঙ্গ এলেই সবার প্রথম পছন্দ জার্মানি। জার্মানিতে পেশাগত সুযোগ-সুবিধা নিয়ে লিখেছেন রবিউল এইচ চৌধুরী। তিনি জার্মানি থেকে রসায়নে স্নাতকোত্তর শেষ করে বর্তমানে অ্যানালাইটিক্যাল কেমিস্ট হিসেবে একটি ইউরোপিয়ান কোম্পানিতে কর্মরত। কাজ করছেন খাবারের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে।

শিল্পকারখানানির্ভর এ দেশটিতে শ্রমবাজার সব সময় বেশ ভালো। ইউরোপের কম বেকারত্ব থাকা কয়েকটি দেশের মধ্যে জার্মানি অন্যতম (৩ শতাংশের মতো)। ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য ভালো সুযোগ রয়েছে এ দেশে। এ ছাড়া আইটি, ডেটা সায়েন্স, বিজ্ঞান, বিজনেস অ্যানালিস্ট এবং করোনা-পরবর্তী সময় ডাক্তার-নার্সের ব্যাপক সুযোগ তৈরি হয়েছে এ দেশে। জার্মানির সরকারি তথ্য মতে, বর্তমানে ১ লাখ ৭৪ হাজার দক্ষ কর্মীর সংকট আছে, যা আগামী চার বছরে আড়াই লাখে উন্নীত হবে। বিদেশি দক্ষ ও উচ্চশিক্ষিতদের মাধ্যমে এই সংকট উত্তরণের পথ খুঁজছে জার্মানি, যে সুযোগটা কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশিরাও।

পড়াশোনার ব্যয় 
জার্মানিতে পড়তে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো টাকা দেওয়া লাগে না। তবে সেমিস্টার শুরুর আগে বিশ্ববিদ্যালয় অনুযায়ী, ২০০-৩৫০ ইউরো পর্যন্ত এনরোলমেন্ট ফি দেওয়া লাগে। এই ফির বিনিময়ে আপনাকে একটা কার্ড দেবে, যা দিয়ে আপনি পুরো স্টেটে (কোথাও কিছু শহর) ফ্রি যাতায়াত করতে পারবেন। এর মানে এখানে গাড়ি ভাড়ার কোনো খরচ নেই। এ ছাড়া প্রতি মাসে হেলথ ইনস্যুরেন্সের জন্য টাকা দিতে হবে এবং জার্মানিতে থাকা পর্যন্ত সব চিকিৎসা ব্যয় তারাই বহন করবে। থাকা-খাওয়া, বাসা ভাড়া শহর অনুসারে ভিন্ন (যেমন ঢাকা-চট্টগ্রামের জীবনধারণ খরচ অন্য শহর অপেক্ষা বেশি)। তবে সব খরচ যোগ করলে জীবনযাত্রার ব্যয় ৬০০-৯০০ ইউরোর মতো এবং তা অবশ্যই লাইফস্টাইলের ওপর নির্ভর করে। 

টাকা কীভাবে জোগাড় হবে? 
জার্মানিতে স্কলারশিপ নিয়ে আসতে পারলে টাকাপয়সা নিয়ে ভাবতে হবে না। এ ছাড়া আসার পরও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অল্প কিছু স্কলারশিপ দেওয়া হয়; দ্বিতীয় সেমিস্টার থেকে আবেদন করা যায় এসব ফান্ডিংয়ের জন্য। এখানে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপেরও সুযোগ আছে, যা মাস্টার্সেও পেতে পারেন; তবে পিএইচডি লেভেলে সর্বাধিক। পড়াশোনা করা অবস্থায় এখানে চাকরি করার অনুমতি মিলবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি, বিভিন্ন কোম্পানিতে স্টুডেন্ট জব এবং ইন্টার্নশিপের সুযোগ আছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের অনেকে নন-স্কিলড চাকরি করে পর্যাপ্ত আয় করেন। ছাত্রাবস্থায় বছরে ১২০ পূর্ণ দিনের এবং অর্ধেক দিনের ক্ষেত্রে ২৪০ দিন অনুমতি রয়েছে। প্রতি ঘণ্টার জন্য ন্যূনতম মজুরি ১২ ইউরো। সাধারণ শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা (মাসে ৮০ ঘণ্টা) কাজ করেন। সেই হিসাবে পার্টটাইম চাকরি করে নিজের খরচ নিজে বহন করে ইউরোপে ঘোরাঘুরির জন্য কিছু টাকাও জমিয়ে ফেলা যায়। এখন প্রশ্ন হলো, চাকরি পাওয়া যাবে তো? চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও বলতে হয় শহরের ভূমিকা বেশ উল্লেখযোগ্য; অর্থাৎ বড় শহরে চাকরি যতটা সহজে পাওয়া যাবে, ছোট শহরে ততটা নয়। পড়াশোনা বুঝে উঠে, নতুন জায়গায় অভ্যস্ত হওয়া, ভাষাগত ব্যাপার, সব মিলিয়ে অনেকে এক মাসেও পায়, অনেকে ছয় মাসেও পায় না। তবে জার্মান ভাষা দ্রুত রপ্ত করতে পারলে চাকরি পাওয়া সহজতর হয়ে যায়।

পেশাগত কাজের সুযোগ 
পড়াশোনা শেষ করে প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের ১৮ মাসের ভিসা দেওয়া হয় পেশাগত চাকরি খোঁজার জন্য। চাকরি পাওয়ার পর কাজের ভিসা নিয়ে জার্মানিতে স্থায়ীভাবে থাকা যাবে। চাকরির ক্ষেত্রে কম-বেশি সব সেক্টরে সুযোগ আছে। তবে উপরোল্লিখিত সেক্টরগুলোর সুযোগ অপেক্ষাকৃত বেশি। চাকরি খোঁজার জন্য স্টেপস্টোন, লিঙ্কডিন, জিং, ইনডিড প্রভৃতি সেক্টর প্রসিদ্ধ। সাধারণ আইটি এবং বিজ্ঞান গবেষণাসহ কিছু চাকরি জার্মান ভাষার দক্ষতা এতটা প্রয়োজন না হলেও কম-অন্যান্য সেক্টরে ন্যূনতন B1 লেভেলের জার্মান জানা থাকলে চাকরি পাওয়া সহজতর হয়। এ ছাড়া জার্মান লেভেল C1 শেষ করে ডাক্তার, ফার্মাসিস্টরা লাইসেন্স পরীক্ষা দিতে পারেন। চাকরির বেতনের ক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতার ভিত্তিতে আলোচনা সাপেক্ষে বেতন কম-বেশি করা যায় এবং এখানকার বেতন সুন্দর জীবনধারণের জন্য যথেষ্ট। চাকরি এবং জীবনধারণের মানের ওপর ভিত্তি করে বার্লিন, হামবুর্গ, মিউনিখ, ফ্রাঙ্কফুর্ট, কোলন ইত্যাদি শহর সবার পছন্দ। 

চাকরি নিয়ে জার্মানি আসা
মেধাবী শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে ২০১২ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ব্লু কার্ড সুবিধা শুধু যার মাধ্যমে দক্ষ কর্মী এবং বিভিন্ন সেক্টরের স্পেশালিস্টরা সরাসরি চাকরি নিয়ে জার্মানি আসতে পারেন। বাংলাদেশ থেকে নিজ নিজ কাজের দক্ষতা এবং প্রয়োজন অনুসারে জার্মান ভাষায় পারদর্শিতা অর্জন করে চাকরির জন্য সরাসরি আবেদন করা যায়। এ ছাড়া সম্প্রতি চালু হয়েছে জব খোঁজার ভিসা। বাংলাদেশ বা অন্য দেশে ডিগ্রি অর্জন করে ছয় মাসের জন্য চাকরি খুঁজতে জার্মানি আসা যাবে; তবে এ ক্ষেত্রে নিজের ব্যয়ভার নিজের বহন করতে হবে।

রবিউল এইচ চৌধুরী, এনালাইটিক্যাল কেমিস্ট ডিপার্টমেন্ট অব ইনঅরগানিক কেমিস্ট ইউরোফিনস হামবুর্গ, জার্মানি।

অনুলিখন: জুবায়ের আহম্মেদ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত