Ajker Patrika

নগর জীবনের ক্লান্তি ভোলায় দিঘির পাড়ের নির্মল বাতাস

কুমিল্লা প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২২, ১৪: ০০
নগর জীবনের ক্লান্তি ভোলায় দিঘির পাড়ের নির্মল বাতাস

ব্যাংক ও দিঘির নগরী হিসেবে পরিচিত কুমিল্লা। কালের বিবর্তনে এগুলোর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তবে এখনো যেসব টিকে রয়েছে সেগুলোতে লেগেছে নগরের ছোয়া। বিভিন্ন দিঘি ও বড় পুকুরের পাড় বাঁধিয়ে এর দুই পাশে করা হয়েছে হাঁটার ব্যবস্থা। আর রাতে দৃষ্টি নন্দন করতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে সময় কাটিয়ে এবং শরীরচর্চা করে নগর জীবনের ক্লান্তি ভুলেন বাসিন্দারা।

সন্ধ্যার পর পরই পুকুর ও দিঘির পাড়ে জ্বলে ওঠা আলোক রশ্মিতে ঝিলমিল করে পানি। এতে চারপাশের এলাকায়ও আলোকিত হয়ে উঠে।

নগরীর ধর্মসাগর দিঘি, নানুয়াদিঘি, রানীর দিঘি, আমির দিঘি, সংরাইশ বড় দিঘি, ছোট দিঘি, কলের পুকুর, সালেহা স্কুল সংলগ্ন পুকুর, উজির দিঘি, কাপ্তান বাজার ব্যাপারী পুকুর, নবাববাড়ি পুকুর, দারোগা বাড়ি পুকুর, তালপুকুর, থিরা পুকুর, মুরাদপুর ভূঁইয়া পুকুর, ধনেশ্বর স্কুল সংলগ্ন দুটি পুকুর, ২০ নম্বর ওয়ার্ড ওনাইশা পুকুর, ঢুলিপাড়া পুকুরসহ বিভিন্ন এলাকার পুকুরের চারপাশে এখন রাতেও থাকে জমজমাট।

নগরীর সংরাইশ তরুণ সংঘের সভাপতি এম এ এইচ বাবেল বলেন, ‘সম্প্রতি সংরাইশ এলাকার চারটি দিঘি ও পুকুর পরিচ্ছন্ন করে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। ফলে পুরো এলাকাটির সৌন্দর্যে পরিবর্তন হয়েছে। নতুন রূপে সেজেছে মহল্লাটি। এতে এলাকাবাসী আনন্দিত।’

নগরীর পুলিশ লাইন এলাকার বাসিন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিক আফরোজা বেগম বলেন, ‘চাকরি শেষে সন্ধ্যার পর নগরীর ধর্মসাগর পাড়ে হাঁটাহাঁটি করি। এ পাড়ের হাঁটাহাঁটির জন্য সুন্দর ব্যবস্থা, দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা সত্যিই মুগ্ধকর। এতে আমাদের মনের প্রশান্তি এনে দেয়।’

একটি বেসরকারি ব্যাংকের চাকরি করেন মো. শফিকুল ইসলাম। তাঁর সঙ্গে আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন, ‘ডায়াবেটিক থাকায় অফিস শেষে ফিরে সন্ধ্যার পর নানুয়া দিঘির পাড়ে একটু হাঁটাহাঁটি করি। পাড়ে হাঁটাহাঁটির জন্য সুন্দর ব্যবস্থা, পাশের ফুলের বাগান, আলোকসজ্জা সব মিলিয়ে সুন্দর একটা পরিবেশ। সারা দিনের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়।’

চকবাজার এলাকার বাসিন্দা মাসুদ আল হক জছি বলেন, ‘চকবাজার আমীর দিঘির পাড় ছিল ময়লার ভাগাড়। এগুলো পরিষ্কার করে বসার স্থানসহ সুন্দর বাগান, আলোকসজ্জা করে পুরো এলাকাটিকে নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে। এটি সিটি করপোরেশনের একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ।’

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেয়র হওয়ার পর থেকে চেষ্টা করছি। নগরীকে সব সময় পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর নগরী রাখতে চাই। দিঘির নগরী কুমিল্লার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এবং নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করছি। নগরের পুরোনো দিঘি ও পুকুরগুলো সংস্কার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে পাড় বাঁধাই, ফুলের বাগান, আলোকসজ্জা ও হাঁটাহাঁটি করার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য পুকুর ও দিঘিগুলোকে এই রূপ দেওয়া হবে।’

কুমিল্লার দিঘিগুলোর মধ্যে ধর্মসাগর দিঘি সবচেয়ে জনপ্রিয়। ত্রিপুরার অধিপতি মহারাজা প্রথম ধর্মমাণিক্য ১৪৫৮ সালে ধর্মসাগর খনন করেন। এই অঞ্চলের মানুষের খাবার পানির সংকট নিবারণ করাই ছিল রাজার মূল উদ্দেশ্য। রাজমালা গ্রন্থ আনুসারে মহারাজা ৩২ বছর রাজত্ব করেন। ধর্মমাণিক্যের নামানুসারে এর নাম রাখা হয় ধর্মসাগর। এসব দিঘি বর্তমানের পানির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয় না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত