Ajker Patrika

‘আপকো লে যায়ে গা’

সম্পাদকীয়
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮: ১৪
‘আপকো লে যায়ে গা’

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সকালে জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা আর বাসন্তী গুহঠাকুরতা গিয়েছিলেন তাঁদের বাগানে। বাগানের গেটে হলের ছেলেরা লাগিয়েছিল কাগজের পতাকা। সে সময় জ্যোতির্ময় জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ।

ঘরেফিরে পত্রিকায় চোখ রাখলেন জ্যোতির্ময়। বললেন, ‘পত্রিকা বলছে সমঝোতা হচ্ছে। কিন্তু আমার পলিটিকসের বিদ্যায় তো তা বলে না। শহীদ মিনারের পাশ দিয়ে যত মিছিল যায়, তারা তো সমঝোতার কথা বলে না। তবে কী হবে?’

পলাশী বাজারে ইলিশ পাওয়া গেল না। ইলিশ কেনা হলো নিউমার্কেট থেকে। ভাপে রান্না হলো। পারিবারিক বন্ধু বজলে মওলা এলেন। তিনিও খেলেন একসঙ্গে।

রাত ১০টার দিকে জ্যোতির্ময় এমএ প্রথম পর্বের খাতা দেখতে বসলেন। এরপর ঘুমোতে গেলেন।

রাত সাড়ে ১২টা-১টার দিকে হঠাৎ গোলাগুলির শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। অনবরত গুলি হতে লাগল। জোত্যির্ময় বাসন্তীকে বললেন, ‘মাথা নিচু করো, গুলি লাগবে।’

রোকেয়া হলের দিক থেকে জিপসহ একটি গাড়ির বহর আসতে লাগল শিক্ষকদের বাড়ির দিকে। ৩৪ নম্বর ভবনে উঠে এল তারা। গুলি করতে লাগল।

একজন অফিসার বলল, ‘প্রফেসর সাহাব হ্যায়?’

‘হ্যায়!’ বললেন বাসন্তী। ‘উনকো লে যায়ে গা।’

বাসন্তী পাঞ্জাবি পরিয়ে দিয়ে জ্যোতির্ময়কে বললেন, ‘তোমাকে অ্যারেস্ট করতে এসেছে।’

‘আপ প্রফেসর হ্যায়?’ ‘ইয়েস।’ ‘আপকো লে যায়ে গা।’ ‘হোয়াই?’ কোনো কথা না বলে হিড় হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে গেল পেছনের বাগান দিয়ে। বাসন্তী ভাবলেন, ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে গেছে জ্যোতির্ময়কে। কিন্তু আসলে ঘাড়ের ডান দিকে গুলি করে ফেলে রেখেছে বাগানে।

জ্যোতির্ময়কে নিয়ে আসা হলো বাড়িতে। কারফিউর কারণে তাঁকে সেদিন মেডিকেলে নেওয়া গেল না। শরীর অবশ হয়ে গেছে। ২৭ মার্চ ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হলেও ঘাড় থেকে বুলেট বের করা গেল না। ৩০ মার্চ শহীদ হলেন জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা।

সূত্র: বাসন্তী গুহঠাকুরতা, একাত্তরের স্মৃতি, পৃষ্ঠা: ১-২২

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত