Ajker Patrika

চীনের সামরিক বাহিনী কতটা শক্তিশালী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২১, ১৩: ৫৪
চীনের সামরিক বাহিনী কতটা শক্তিশালী

তাইওয়ানের আকাশসীমায় বারবার চীনা বিমানবাহিনীর ‘অনুপ্রবেশ’ এবং সম্প্রতি দেশটি হাইপারসনিক অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর আসার পর বিশ্বের নজর এখন বেইজিংয়ের দিকেই। কারণ, চীন এখন সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণের পাশাপাশি আরও অত্যাধুনিক অস্ত্র সমৃদ্ধ করায় মনোযোগ দিয়েছে বলেই ধারণা বিশ্লেষকদের।

অতীতে শুধু ‘মিলেট প্লাস রাইফেল’ দিয়েই প্রতিপক্ষকে পরাজিত করার ইতিহাস রয়েছে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) এখন বিশ্বের বৃহত্তম যুদ্ধবাজ বাহিনীতে পরিণত হয়েছে, যাদের ২০ লাখের বেশি সক্রিয় সদস্য রয়েছেন।

দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের অধীনে চীন কূটনৈতিকভাবে আরও দৃঢ় হয়ে উঠেছে এবং সামরিক শক্তি প্রয়োগ কিংবা পরিদর্শনের মাধ্যমে বিতর্কিত অঞ্চলের ওপর নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবির সমর্থনে কার্যক্রমও বাড়িয়েছে। আর প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রও চীনের এসব কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

বেইজিংভিত্তিক চীনা সামরিক বিশ্লেষক ইন ডংইউ সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘দক্ষিণ চীন সাগরে সম্ভাব্য চীন-মার্কিন সংঘর্ষের আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে। এর অন্যতম বড় কারণ সামরিক শক্তির দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র এখন চীনকে নিজেদের সমকক্ষ মনে করছে। অর্থাৎ এটি চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তির একটি বড় ইঙ্গিত।’

ডংইউর মতে, ‘তাইওয়ান বা দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বেইজিং এবং ওয়াশিংটন যে সত্যিকার অর্থেই সংঘর্ষে লিপ্ত হতে পারে, সেটি যে কেউ বিনা দ্বিধায় বলতে পারে। তবে চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তির সামনে কেউ এ ধরনের সংঘর্ষ দেখতে চাইবে না।’

_china2পিএলএর স্থলবাহিনী এই অঞ্চলে ক্ষমতা এবং প্রভাব বজায় রাখার ক্ষেত্রে চীনের মূল শক্তি। পেন্টাগন-চীন মিলিটারি পাওয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, পিএলএর র‍্যাঙ্কের মধ্যে ৯ লাখ ১৫ হাজারের বেশি দায়িত্বরত সক্রিয় সৈন্য রয়েছে।

২০১৯ সালে উন্মোচন করা ডিএফ-৪১ আন্তমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। বিশেষজ্ঞদের মতে, যা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে আঘাত হানতে পারে। উন্মোচন করা হয় অত্যাধুনিক ডিএফ-১৭ হাইপারসনিক মিসাইলও, যা অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।

এদিকে দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে চীনের মতবিরোধ বাড়তে থাকায় নৌবাহিনীর সক্ষমতাও বৃদ্ধি করছে পিএলএ। দেশটির প্রতিরক্ষা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভি (পিএলএএন) এখন বিশ্বের বৃহত্তম নৌবাহিনী এবং তাদের সাবমেরিনের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার ক্ষমতা রয়েছে। নৌবাহিনীকে সমর্থন করার জন্য চীনের তথাকথিত সামুদ্রিক মিলিশিয়াও রয়েছে, যা সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত এবং ‘লিটল ব্লু ম্যান’ নামে পরিচিত। চীনের নৌবাহিনীতে ৩৬০টির বেশি জাহাজ রয়েছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, আড়াই হাজারের বেশি এয়ারক্রাফট এবং ২ হাজারের বেশি যুদ্ধবিমান নিয়ে চীনের বিমানবাহিনী এখন এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বৃহত্তম এবং বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বিমানবাহিনীতে পরিণত হয়েছে। চীনের বিমানবাহিনীর কাছে স্টিলথ ফাইটার জেটের একটি বহরসহ রয়েছে উন্নত প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান জে-২০।

সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে অস্ত্র রপ্তানিও শুরু করেছে চীন। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে, গত এক দশকে চীন বেশির ভাগ অস্ত্রই রপ্তানি করেছে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আলজেরিয়ায়।

পারমাণবিক বোমা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা

নিজেদের পরমাণু অস্ত্র নির্মাণ প্রকল্পকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে এক হাজারেরও বেশি পারমাণবিক বোমা তৈরির লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে চীন। ‘মিলিটারি অ্যান্ড সিকিউরিটি ডেভেলপমেন্টস ইনভলভিং দ্য পিপলস রিপাবলিক অব চায়না (পিআরসি) ২০২১’ নামের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তর পেন্টাগন।

গত বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৭ সালের মধ্যে চীনের ৭০০টি পারমাণবিক বোমা থাকতে পারে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা হাজারে পৌঁছাতে পারে। কারণ, গত বছর থেকে পারমাণবিক প্রকল্প উন্নয়নে বড় মাত্রায় বিনিয়োগ শুরু করেছে চীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত