Ajker Patrika

বারামখানায় স্মরণোৎসব

মিলন উল্লাহ, কুষ্টিয়া
বারামখানায় স্মরণোৎসব

আজ ১ কার্তিক। ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩২তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়া আখড়াবাড়িতে শুরু হয়েছে তিন দিনের লালন স্মরণোৎসব। ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর লালন সাঁই ১১৬ বছর বয়সে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় নিজ আখড়ায় মৃত্যুবরণ করেন। লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবসে প্রতিবছর স্মরণোৎসব করেন তাঁর অনুসারীরা।

এ উপলক্ষে কয়েক দিন আগে থেকেই ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ি মুখর হয়ে উঠেছে সমবেত ভক্ত, সাধু ও লালন অনুসারীর পদচারণে।

জানামতে, চৈত্রের এক দোলপূর্ণিমার দিনে দুরারোগ্য ব্যাধি নিয়ে লালন সাঁইয়ের আবির্ভাব ঘটেছিল ছেঁউড়িয়ার কালীগঙ্গা নদীর ঘাটে। এর পর থেকে তিনি সেখানেই থেকে যান। তাই দেহত্যাগের পর তাঁর স্মৃতি ধরে রাখা এবং বাণী প্রচারের জন্য অনুসারীরা এই দিনটিতে তাঁকে বিশেষভাবে স্মরণ করেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার বসেছে লালন সাঁইয়ের ১৩২তম তিরোধান দিবসের বিশাল আয়োজন।

আজ সকালে অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বাউল সাধুসঙ্গ। চলবে ১৯ অক্টোবর বা ৩ কার্তিক পর্যন্ত। উৎসবকে কেন্দ্র করে লালনের মাজার সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। মাজারের ভেতরে বসেছে বাউল ফকিরদের আসর আর কালীগঙ্গা নদীর পারে বসেছে বিশাল মেলা। লালন মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে আলোচনা সভা এবং রাতভর লালন গানের জন্য। সিসি ক্যামেরাসহ রয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা।

এখানে আসা লালনের ভক্ত ও অনুসারীদের বিশ্বাস, সাধু দর্শনে মনের ময়লা কেটে যায়। তাই সাধুসঙ্গ করতে তাঁরা বারবার ফিরে আসেন সাঁইজির বারামখানায়।
ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধুগুরুরা এসে জড়ো হয়েছেন ছেঁউড়িয়ায়। গতকাল রোববার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, বাউলসম্রাটের তিরোধান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই স্মরণোৎসব কেন্দ্রের এক দিকে চলছে শিল্পীদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। অন্যদিকে সাধুগুরুরা ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁদের প্রাণপুরুষকে স্মরণ করতে। সেই সঙ্গে লালন মেলাকে কেন্দ্র করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন কালীগঙ্গা নদীর পারের বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে।

লালন মাজারের খাদেম মশিউর রহমান রাজন বলেন, এবার বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই লালনের অনুসারীরা এসে ছেঁউড়িয়ায় এই আখড়াবাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন। আশা করা যায়, এবারের তিরোধান দিবসে ফকির লালন সাঁইকে স্মরণ করতে অনেক বেশি সাধুগুরু এবং তাঁর অনুসারীরা এখানে জড়ো হবেন।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এবং লালন একাডেমির আয়োজনে স্মরণোৎসব সম্পন্ন করতে সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ। সাধুগুরুদের থাকা-খাওয়াসহ নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, ‘লালন স্মরণোৎসব উপলক্ষে দেশ-বিদেশ থেকে লাখো মানুষ এখানে আসবেন। এই উৎসবে যোগদানে যাতে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয়, সে জন্য তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলাম বলেন, সাধুগুরুদের থাকা-খাওয়াসহ সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মূল মঞ্চে যেমন থাকবে আলোচনা সভা, তেমনি রাতভর দেশবরেণ্য লালনশিল্পীরা তাঁদের গান পরিবেশন কবেন।

আজ সন্ধ্যায় লালন স্মরণোৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত