Ajker Patrika

আলুর বাজার অস্থির হওয়ার কারণ কী

হাসান মামুন
আলুর বাজার অস্থির হওয়ার কারণ কী

আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য চাল নিয়ে সংকট উপস্থিত হলে আটা-ময়দার পরিভোগ বাড়িয়ে দেওয়ার কথা অনেকে বলে থাকেন। কখনো কখনো এমন সময় অবশ্য আসে, যখন চাল ও আটা দুটোরই দাম বাড়ে।

তখন এই স্লোগান সামনে আনার চেষ্টা হয় যে ‘বেশি করে আলু খান, ভাতের ওপর চাপ কমান’। কিছু দেশ ও জনগোষ্ঠীতে আলু কালক্রমে প্রধান খাদ্য হয়ে উঠেছে বৈকি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এর ব্যবহার বেড়েছে বিশ্বজুড়ে। এ দেশেও আলুর ব্যবহার অনেক বেড়েছে। উৎপাদনও বেড়েছে দ্রুত।

আলু চাষে জমির ব্যবহার ও একরপ্রতি ফলন বেড়েছে ধারাবাহিকভাবে। উন্নত বীজের ব্যবহার বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কৃষিবিজ্ঞানীদের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। আমরা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি আলু উৎপাদন করছি। তাতে এ কথাটাও উঠেছে যে আলুর রপ্তানি বাড়ানো দরকার। তাতে বিদেশি মুদ্রার আয়ই শুধু বাড়বে না; দেশে চাহিদার চাপ বাড়লে এতে করে বেড়ে যাবে আলুচাষির লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা।

মালয়েশিয়াসহ গোটাকতক দেশে আমরা খুব অল্প পরিমাণ আলু রপ্তানি করি। আরও যেসব দেশে রপ্তানি বাড়ানো যায়, সেখানে কিছু প্রতিবন্ধকতা নিশ্চয়ই রয়েছে। সম্প্রতি খবর মিলেছিল, রাশিয়ায় আলু রপ্তানি আবার শুরু হবে। আলু উৎপাদনে এগিয়ে থাকা দেশ হলেও রাশিয়া কম আলু আমদানি করে না।

এমন আরও কিছু দেশ খুঁজে বের করতে হবে, যেখানে আলু রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের চেয়ে অনেক কম আলু উৎপাদন করে পাকিস্তান অনেক বেশি রপ্তানি করে কীভাবে, সে প্রশ্নও আছে। তারা সম্ভবত রপ্তানিযোগ্য ও শিল্পে ব্যবহারযোগ্য আলু উৎপাদনে আছে এগিয়ে।

নিজ দেশে প্রক্রিয়াকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠা করে আলুপণ্য; যেমন চিপস, ওয়েজেস, বিস্কুট উৎপাদন করা গেলে অনেক বেশি দাম পাওয়ার সম্ভাবনা। সব ক্ষেত্রেই যতটা সম্ভব মূল্য সংযোজন বাড়াতে হবে। তাতে ওই সব ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বাড়ারও সম্ভাবনা।

নিজেদের চাহিদা মেটানোর পরও কিছু আলু থেকে যাচ্ছে বলেই রপ্তানির ওপর এভাবে জোর দেওয়া। খোদ কৃষি মন্ত্রণালয় আলু রপ্তানিতে জোর দিচ্ছে। রপ্তানির প্রসঙ্গ এলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও এসে যায়। আসে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতার প্রশ্ন। আলু রপ্তানিতে তাদের অভিজ্ঞতাও আমরা জানতে চাইব।

এতে সরকার কিছু প্রণোদনা দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকঋণ পরিস্থিতি কেমন, সে প্রশ্নও উঠবে। তবে আলুর উৎপাদন থেকে নিয়ে এর বাজারজাতকরণ, হিমাগারে সংরক্ষণ ও রপ্তানি—সবখানেই সযত্ন দৃষ্টি দিতে হবে সরকারকে। কৃষক, ব্যবসায়ী ও ভোক্তা যেন একটা স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে থাকে।

নইলে আলুর উৎপাদন অনেক বাড়ানো গেলেও এর অংশীজনদের মধ্যে আস্থা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ধারাবাহিক হয়ে উঠলে শেষে উৎপাদনেই আগ্রহ হারাবেন কৃষক। আলুর বদলে তিনি তখন অন্য ফসল উৎপাদনে মনোনিবেশ করবেন। নিত্যনতুন ফসলে কৃষকের আগ্রহ কিন্তু বেড়েছে। বেড়েছে তাঁর চয়েস বা পছন্দ। বাণিজ্যিক মনোভাবও বেড়েছে বৈকি। সেটা দোষেরও নয়।

নিবন্ধের শুরুতে রপ্তানির প্রসঙ্গ এলেও এবার কিন্তু আলুর বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ায় এ প্রশ্নও কেউ কেউ তুলছেন, দাম কমিয়ে আনতে পেঁয়াজ আর কাঁচা মরিচের মতো আলুও আমদানি করতে হবে কি না।

কারণ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে যদিও বলা হচ্ছে, ১ কোটি ১০ লাখ টনের বেশি আলু উৎপাদিত হয়েছে; কিন্তু হিমাগারমালিক ও বড় ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদন এবার উল্লেখযোগ্যভাবে কম। এর প্রমাণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, হিমাগারগুলোয় ধারণক্ষমতার চেয়ে কম আলু এবার সংরক্ষণ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

হিমাগারমালিকেরাও কিছু আলু কিনে সংরক্ষণ করে থাকেন। উত্তোলনের পর যেটুকু ইতিমধ্যে ভোগে চলে গেছে, তার বাইরে খোদ কৃষকের হাতে আলু আর তেমন সংরক্ষিত আছে বলে মনে হয় না। কিছু কৃষক আলু সংরক্ষণ করে ক্ষতিগ্রস্তও হয়ে থাকেন। সংরক্ষণে তাঁরা প্রশিক্ষিত নন। বীজ নির্বাচনেও রয়েছে দক্ষতার অভাব। আলু চাষে উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে, যেটা ঘটেছে অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রেও। সিংহভাগ কৃষকের পক্ষে বেশি দামের আশায় আলু ধরে রাখার সুযোগও কম।

তাঁর দ্রুত চাই নগদ অর্থ—সেটা ঋণ পরিশোধ বা অন্যান্য জরুরি ব্যয় নির্বাহের জন্য। এর সুযোগ ব্যবসায়ীরা নেবেন, সেটাই স্বাভাবিক। আলু কিনে দীর্ঘ সময় ধরে রাখার ক্ষমতাও তাঁদের রয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরাও কেনার মতো আলু নাকি এবার পেয়েছেন কম। তাই হিমাগারে আলু কম সংরক্ষিত হয়েছে। ব্যবসায় ব্যর্থ কিছু হিমাগার বন্ধও হয়ে গেছে।

এদিকে সরকার তো চালের মতো আলু সংরক্ষণ করে না। এ অবস্থায় হিসাব করে বলা হচ্ছে, এক কোটি টন আলু উৎপাদিত হওয়ার তথ্যও সঠিক নয়। উৎপাদন নাকি হয়েছে ঘোষিত তথ্যের চেয়ে ২০ শতাংশ কম! শুধু কৃষিপণ্য নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত দেশে কম বলে অভিযোগ কিন্তু জোরালো।

সম্প্রতি আমাদের প্রধান রপ্তানিপণ্য তৈরি পোশাকের প্রকৃত রপ্তানি নিয়েও দুই রকম তথ্য দেওয়া হয়েছে দুই সরকারি সূত্র থেকে। প্রকৃত খেলাপি ঋণ ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়েও বিতর্ক আছে। উন্নয়ন-সহযোগীর চাপে এসব ক্ষেত্রে হিসাবায়ন পদ্ধতিও করতে হচ্ছে সংশোধন। কথা হলো, কোনো খাতের সঠিক তথ্য পাওয়া না গেলে সে ক্ষেত্রে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

ভুল পদক্ষেপও নেওয়া হয়। উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে ঘটে বিলম্ব। তাতে বাজার হয়ে পড়ে অস্থির। কিছুদিন আগে কাঁচা মরিচের ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটেছিল। বৃষ্টিবাদল শুধু নয়, তাপপ্রবাহেও যে এর ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সেদিকে দৃষ্টি ছিল না কৃষি বিভাগের। বিভ্রান্ত হয়েই বোধ হয় তারা সময়মতো আমদানির অনুমোদনে গা করেনি।

এই ফাঁকে মূল্যবৃদ্ধিতে রেকর্ড হয়ে যায়। আলুর দামও কিন্তু লাফিয়ে বেড়েছে এবং বৃদ্ধি অব্যাহত। নিবন্ধটি লেখার সময় খোঁজ নিয়ে জেনেছি, লম্বাটে সাদা ও ঈষৎ লাল আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা কেজি। গত বছর এই সময়ে দাম ২৮-৩০ টাকার বেশি ছিল না। গেল কোরবানি ঈদের সময়ও আলু এ দামেই বিক্রি হচ্ছিল।

আলুর দাম এভাবে বেড়ে যাওয়াটাকে কি শুধু ‘ব্যবসায়ীদের কারসাজি’ বলে ব্যাখ্যা করা যাবে? তাঁরা দলবদ্ধ হয়ে, সঙ্গে হিমাগারমালিকদের নিয়ে ধীরগতিতে আলু ছেড়ে সংকট তৈরি করে অস্বাভাবিক মুনাফা তুলছেন, এমন অভিযোগ তোলা গেলেও সেটা প্রমাণ করা কঠিন। দৃশ্যত বাজারে আলুর ঘাটতি নেই। আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিবহনসহ অন্যান্য ব্যয় মিটিয়ে হিমাগার থেকে আলু আনতে হচ্ছে বেশি দামে। তাই বেশি দামে বেচতেও হচ্ছে।

আলু এবার অনেক বেশি রপ্তানি হয়ে গেছে বলেও খবর নেই। দেশীয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে এর ব্যবহার দ্রুত বেড়েছে বলেও মনে হয় না। এদিকে অন্যান্য কৃষিপণ্যের মতো বিভিন্ন পর্যায়ে আলুর অপচয় বেশি। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আলুবীজ হিসেবেও সংরক্ষণ করা হয়। সব মিলিয়ে দেখলে, উৎপাদন এবার কম হয়েছে বলে পর্যবেক্ষণটাই সঠিক মনে হতে পারে।

বিশেষ করে কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়িয়ে দেখানো, ‘স্বয়ংসম্পূর্ণতা’ অর্জন এবং তা ধরে রাখার দাবিতে সত্যতা না থাকলে সেটা কিন্তু মুশকিলের। তখন দেখা যাবে, ঘাটতি মেটাতে আমদানি জরুরি হলেও আমরা আত্মতুষ্ট হয়ে সেটা করছি না। হয়তো দেখা যাবে, উল্টো তখন করে চলেছি রপ্তানি। আলুর ক্ষেত্রে সেটাই হচ্ছে কি না, কে জানে! উৎপাদন কম হয়ে থাকলে আমাদের কিন্তু এর রপ্তানি অবিলম্বে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

সম্প্রতি ভারত এমনকি চাল রপ্তানি নিরুৎসাহিত করার নীতি নিয়েছে—যদিও দেশটি এখন সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক। সামনে ভারতের জাতীয় নির্বাচন এবং সে কারণেও অভ্যন্তরীণ চালের বাজার শান্ত রাখা প্রয়োজন। এই পূর্বাভাসও আছে যে আবহাওয়ার বিচিত্র আচরণে এবার বিশ্বজুড়েই খাদ্যশস্য উৎপাদন কমবে। 

আমাদের আলুর উৎপাদন কমে গিয়ে থাকলে দেখতে হবে, ঠিক কী কারণে কমেছে। উৎপাদন তো অব্যাহতভাবে বাড়ছিল। কৃষকও যে কখনোই ভালো দাম পাচ্ছিলেন না, তা নয়। ভোক্তাও আলুর স্বাভাবিক দামে সন্তুষ্ট ছিল বেশির ভাগ সময়। এই বাজারে আলুর মতো নিত্যপণ্যের দাম ৭০-৭৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার কারণ কি তবে এর চাহিদা বৃদ্ধি? অন্যান্য সবজির দাম বেড়ে যাওয়া? চাল, আটার দাম বেড়ে যাওয়াতেও কি আলুর পরিভোগ বেড়েছে দরিদ্র জনগোষ্ঠীতে? 

এই মুহূর্তে কিন্তু মোটা চাল ও আলুর দাম সমান। তিন নম্বর গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যপণ্য হিসেবে আলুর সহজলভ্যতার প্রভাব নিশ্চয়ই আমরা বুঝি। এর মূল্যবৃদ্ধি রোধে তাই দ্রুতই যা করার করতে হবে। সেটা এ জন্যও যে অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও বাড়ছে কিংবা ‘উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল’।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

হাদিকে গুলি: মৌলভীবাজার সীমান্তে বিজিবির একাধিক বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

হাদিকে গুলি: মৌলভীবাজার সীমান্তে বিজিবির একাধিক বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

হাদিকে গুলি: মৌলভীবাজার সীমান্তে বিজিবির একাধিক বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

হাদিকে গুলি: মৌলভীবাজার সীমান্তে বিজিবির একাধিক বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার বন্ধ ঘোষণা

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ শান্তিরক্ষী নিহত, যুদ্ধ চলমান: আইএসপিআর

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

হাদিকে গুলি: মৌলভীবাজার সীমান্তে বিজিবির একাধিক বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত