Ajker Patrika

অধিগ্রহণ জটিলতায় বন্ধ কাজ

রহিম বাদশা, চাঁদপুর 
আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ২০
অধিগ্রহণ জটিলতায় বন্ধ কাজ

দুই বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার চুক্তি থাকলেও নানা জটিলতায় ছয় বছরেও শেষ হয়নি হাজীগঞ্জের টোরাগড়-বড়কুল ডাকাতিয়া নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ। অধিগ্রহণের টাকা না পাওয়ায় জমিমালিকদের বাধার মুখে নির্মাণাধীন সেতুর সংযোগ সড়ক (অ্যাপ্রোচ) নির্মাণকাজও বন্ধ রয়েছে।

সেতুর দুই পাড়ে প্রায় ২৭৭ দশমিক ৩৫ মিটার লম্বা সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ বাবদ ক্ষতিপূরণ ১৫ কোটি ১৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা ধরা হয়। তবে মালিকদের দাবি, জমি অধিগ্রহণের টাকা বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ পাঁচ বছর বারবার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তবে দেওয়া হচ্ছে না অধিগ্রহণের টাকা।

উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে অ্যাপ্রোচ নির্মাণে টেন্ডার আহ্বান করা হয় ১৯ কোটি ৯০ লাখ টাকার। কাজ পায় চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আহসান হাবিব অরুণের মালিকানাধীন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। যথাসময়ে কাজও শুরু হয়। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের টাকা না পেয়ে জমির মালিকপক্ষ গত জানুয়ারি মাসে কাজ বন্ধ করে দেয়। জমি অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারিত মাত্র ২ কোটি ৬১ লাখ টাকার জন্য আটকে আছে সরকারের মেগা প্রকল্পের ৩৭ কোটি ৪ লাখ টাকার সেতুর নির্মাণকাজ।

টোরাগড়-বড়কুল সেতুটি সরকারের একটি পাইলট প্রকল্প। মহান মুক্তিযুদ্ধের ১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার ও চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনের সাংসদ মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল এ সেতুটি। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল টোরাগড়-বড়কুল সেতুটির। এতে নদীর দক্ষিণ অংশের সঙ্গে উত্তর অংশের যোগাযোগ স্থাপন সহজ হবে। এ ছাড়া ব্রিজটি নির্মাণ হলে বড়কুল অঞ্চলসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের শিক্ষা ও জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।

এ বিষয়ে সাংসদ জানান, ২০২২ সালের মার্চে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা ছিল ব্রিজটি। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কারণে আটকে গেছে সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ। এতে আগামী মার্চে উদ্বোধন হচ্ছে না সেতুটি।

তিনি জানান, অ্যাপ্রোচ নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে জমির মৌজার মূল্য অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের তালিকা তৈরি করে হাজীগঞ্জ এলজিইডি কার্যালয় থেকে ১৫ কোটি ১৮ লাখ ১৫ হাজার ৬৪৫ টাকা ৯০ পয়সা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয় হেড অফিসে। ইতিমধ্যে এলজিইডির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের নির্ধারিত অ্যাকাউন্টে ১২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। আর মাত্র ২ কোটি ৬১ লাখ ১৫ হাজার ৬৪৫ টাকা বাকি রয়েছে। বাকি টাকাগুলো দ্রুত দেওয়ার কার্যক্রম চলমান।

জানা যায়, সেতুটির নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৭ কোটি ১৪ লাখ ৫৫ হাজার ৯৭২ টাকা, অ্যাপ্রোচ ও ভায়াডাক্ট নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা, জমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি ১৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা। সর্বসাকল্যে ব্রিজটি নির্মাণে সরকারের ব্যয় হচ্ছে ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা।

২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সুরমা-আরবিএল-জেভী কোম্পানিকে হাজীগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি অফিস কার্যাদেশ প্রদান করেন। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ব্রিজের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সুরমা-আরবিএল-জেভী কোম্পানির অদূরদর্শিতার কারণে ব্রিজের কাজটি সঠিক সময়ে শেষ করতে পারেনি। এরই মধ্যে কেটে গেছে ৪ বছরেরও বেশি সময়। কয়েকবার সময় নিয়েও সঠিক সময়ে ব্রিজের কাজটি শেষ করতে পারেনি তারা। তবে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী ইউনুস বিশ্বাস চাঁদপুরে যোগদান করার পর কাজের কিছুটা গতি আসে।

প্রকৌশলী মো. ইউনুস বিশ্বাস মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমি চাই দ্রুত সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হোক। তিনি বলেন জেলা প্রশাসকের নির্ধারিত ফান্ডে জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ১২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা প্রদান করেছে। বাকি টাকা চলতি মাসে বা আগামী মাসের শুরুর দিকে প্রদান করা হবে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে।’

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, ‘টোরাগড়-বড়কুল সেতুর অ্যাপ্রোচ ও ভায়াডাক্ট নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ বাবদ যে টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে তার মধ্যে এলজিইডি ১২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ফান্ডে জমা দিয়েছে। সম্পূর্ণ টাকা এখনো আমাদের নির্ধারিত ফান্ডে জমা হয়নি। সম্পূর্ণ টাকা এলেই আমরা জমির মালিকদের অধিগ্রহণের টাকা বুঝিয়ে দেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত