Ajker Patrika

হাতুড়ে চিকিৎসকের হাতে ভাঙা হাড়ের চিকিৎসা

আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সিরাজদিখান (মুন্সিগঞ্জ)
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ১০
হাতুড়ে চিকিৎসকের হাতে ভাঙা হাড়ের চিকিৎসা

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে আধুনিক যুগেও চলছে সনাতনী পদ্ধতিতে হাত-পা ভাঙা জোড়া দেওয়ার চিকিৎসা। উপজেলার রশুনিয়া ইউনিয়নের চোরমদন ও দানিয়াপাড়া গ্রামে ৫-৬ জন হাতুড়ে কবিরাজ দোকান নিয়ে দীর্ঘদিন নিয়মিত এ চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রথম কয়েক দিন ভাঙা হাত-পায়ে গাছের ছাল-বাকল-লতাপাতা লাগিয়ে রাখা হয়। তারপর টানা ৬ দিন হাত ও পায়ের দুই পাশে ইট দিয়ে চেপে রাখা হয়। পরে প্রতিদিন চলতে থাকে ঝাড়ফুঁক-মালিশ।

গতকাল রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, সিরাজদিখান-নিমতলা সড়কের চোরমদন শ্মশানঘাট থেকে ১০০ ফুট সামনে দোকান খুলে দীর্ঘদিন রাস্তার দুই পাশে অনুমোদনহীন ৫-৬টি হাড়ভাঙা চিকিৎসালয় গড়ে উঠেছে। তাঁরা বাঁশের কঞ্চি ও গাছের ছাল-বাকল-লতাপাতা, ঝাড়ফুঁক-মালিশ দিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন। এতে দরিদ্র-অসহায় মানুষ স্বল্প খরচে চিকিৎসার জন্য এসব কথিত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

কেরানীগঞ্জ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা ইমন হোসেন বলেন, ‘আমার পায়ের হাড় ভেঙে গেছে বেশ কিছুদিন আগে। লোকমুখে শুনে এইখানে চিকিৎসা নিতে এসেছি। কবিরাজ বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বেঁধে দিয়েছেন, আর ব্যথা কমানোর জন্য রোলাক নামের ট্যাবলেট দিয়েছেন। প্রায় এক মাস হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এখনও সুস্থ হয়ে উঠতে পারিনি।’

আরেক ভুক্তভোগী আওলাদ হোসেন বলেন, ‘আমি সোহেল কবিরাজের থেকে আমার হাত ভাঙার চিকিৎসা করেছি। তিনি দীর্ঘদিন আমার থেকে তেল মালিশ দিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে গেছেন। কিন্তু আমার এখন পর্যন্ত হাত ভালো হয়নি।’

বিখ্যাত হাড় ভাঙা চিকিৎসালয়ের কবিরাজ রতন বলেন, ‘১৭-১৮ বছর এই পেশায় জড়িত আছি। অনেকে আমার কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়েছেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স আছে, তবে সরকারি কোনো অনুমোদন নেই।

কবিরাজ হাওলাদার সোহেল বলেন, ‘আমার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও জানি কী কী করতে হয়। আমি গর্ভবতী নারী এবং রোগীর ডায়াবেটিস থাকলে কাজ করি না। তাই কাজের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যাও হয় না।’

অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ও সার্জন মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম বলেন, অর্থোপেডিকস বিশেষজ্ঞ হাড় ভাঙার চিকিৎসা করে থাকেন। এটা তাঁদের কাজ, কবিরাজের কাজ না। যথাস্থানে ভাঙা হাড় না বসিয়ে প্লাস্টার করলে হাত বা পা পরবর্তীতে বাঁকা হয়ে যেতে পাড়ে। ছাল-বাকল-লতাপাতা থেকে ইনফেকশন হয়ে পচন ধরতে পারে।

রশুনিয়া ইউপির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবু সাইদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি জানতাম না। আমি এবার নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি, খোঁজ-খবর নিয়ে দেখব।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আঞ্জুমান আরা বলেন, ‘তাঁদের সরকারিভাবে কোনো অনুমোদন নেই। এই কবিরাজি পদ্ধতি চিকিৎসা তাঁরা দিতে পারেন না। এর আগে একবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাঁদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেব।’

মুন্সিগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন মো. মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘আমি জানতাম না, আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। খোঁজ-খবর নিয়ে দেখব, সরকারি অনুমতি ছাড়া হাড় ভাঙার চিকিৎসা করে থাকলে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফরিদপুরে পালিয়ে যাওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার, থানার ওসিকে বদলি

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় ভারতের উদ্বেগ

কাতারের রাজপরিবারের দেওয়া বিলাসবহুল বিমান না নেওয়াটা বোকামি: ট্রাম্প

সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করে নিজের রেকর্ড ভাঙল যুক্তরাষ্ট্র

পুলিশ হত্যাকারী ফোর্স হতে পারে না: আইজিপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত