Ajker Patrika

ফলন বাড়াতে লবণ দেওয়ায় জমি হারাচ্ছে উর্বরতা শক্তি

রানা আহমেদ, নলডাঙ্গা (নাটোর)
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫: ৫৪
ফলন বাড়াতে লবণ দেওয়ায় জমি হারাচ্ছে উর্বরতা শক্তি

নাটোরের নলডাঙ্গায় অধিক ফলনের আশায় জমিতে রাসায়নিক সারের সঙ্গে আয়োডিনযুক্ত লবণ মিশিয়ে প্রয়োগ করছেন কৃষকেরা। এতে উর্বরতা শক্তি নষ্ট হওয়াসহ দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি ও হুমকির মুখে পড়ছে কৃষিজমি।

এদিকে, মাটির ক্ষতি জেনেও কৃষকেরা জমিতে লবণ প্রয়োগ করলেও এ বিষয়ে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কৃষি বিভাগের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, জমিতে লবণ ব্যবহার না করার জন্য কৃষকদের সচেতন করতে চেষ্টা করা হচ্ছে।

জানা যায়, নলডাঙ্গা উপজেলার হালতি বিলসহ বিভিন্ন মাঠে প্রতিবছর সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান ও ২ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ-রসুন চাষ হয়। এসব ফসলে ব্যাপক হারে আয়োডিনযুক্ত লবণ প্রয়োগ করেন কৃষকেরা। জমি চাষের আগে ও পরে অধিক ফলনের আশায় জমিতে রাসায়নিক সারের সঙ্গে মিশিয়ে এ লবণ প্রয়োগ করা হয়। এতে মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হওয়াসহ দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষিজমি।

হালতি বিলের কৃষক রাজু হোসেন বলেন, ‘জমির মূল মালিক লবণের ব্যবহার না করলেও বর্গাচাষি ও লিজ নেওয়া চাষিরা অধিক ফলনের আশায় জমিতে সারের সঙ্গে লবণ মিশিয়ে প্রয়োগ করছেন।’

কৃষক আসাদ আলী বলেন, ‘লবণ ব্যবহার করলে ফসলের গাছ তরতাজা হয়, বেশি ফলন পাওয়া যায়। এ কারণে জমিতে লবণ ব্যবহার করি। লবণ ব্যবহার করলে সার ও কীটনাশক কম লাগে। রসুন-পেঁয়াজ ও বোরো ধানে অধিক ফলনের আশায় রাসায়নিক সারের সঙ্গে মিশিয়ে প্রতি বিঘায় ২০-২৫ কেজি হারে লবণ দিই।’

শেখপাড়া গ্রামের কৃষক রেন্টু বলেন, ‘একবার যে জমিতে লবণ ব্যবহার করা হয়, সেই জমিতে লবণ না দিলে ফসল ভালো হয় না। তাই প্রতিবছর আমরা অধিক ফলনের আশায় লবণ ব্যবহার করি। ৮-১০ বছর ধরে লবণ ব্যবহার করলেও কৃষি বিভাগ থেকে কেউ নিষেধ করেননি।’

নলডাঙ্গার শহীদ নজমুল হক সরকারি কলেজের প্রভাষক সুপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, ‘অধিক ফলনের আশায় অন্যান্য সার ব্যবহারের পাশাপাশি জমিতে আয়োডিনযুক্ত লবণ প্রয়োগ করা কোনোভাবে ঠিক নয়। আয়োডিনযুক্ত লবণ সোডিয়াম ক্লোরিন দিয়ে গঠিত। মাটিতে এর পরিমাণ বেড়ে গেলে বিরূপ প্রভাব দেখা দেয়। আয়োডিনযুক্ত লবণ জমিতে দিলে সাময়িক ভালো ফল দেখা গেলেও পরবর্তী সময়ে তা জমির ফসল উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। জমিকে অনুর্বর করে তোলে।’

নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফৌজিয়া ফেরদৌস বলেন, ‘কিছু কৃষক অধিক ফলনের লোভে পেঁয়াজের জমিতে লবণ প্রয়োগ করছেন। জমিতে লবণ প্রয়োগ না করার বিষয়ে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মাহমাদুল ফারুক বলেন, ‘লবণ জমির জন্য ক্ষতিকর। লবণের কারণে গাছের কচি শিকড়ের মুখ পুড়ে যায়। কারণ, লবণ মাটিতে ক্ষারীয় অবস্থা সৃষ্টি করে। এ কারণে শিকড় দিয়ে গাছ পুষ্টি নিতে পারে না। ফলে গাছে রোগবালাই দেখা দেয়। ফসলি জমিতে লবণ প্রয়োগে মাটির গঠন ভেঙে দেয়। গাছ সহজে পানি গ্রহণ করতে পারে না। লবণ ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত