Ajker Patrika

সুন্দরীশূন্য বাংলাদেশ

সুন্দরীশূন্য বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে হচ্ছিল দুই দিনব্যাপী সাহিত্য সম্মেলন। গুণী লোকের মেলা বসেছিল সেখানে। সকাল আর বিকেলে নানা রকম সাহিত্য সভা আর সেমিনার চলছে। রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রথম দিন বক্তৃতা করলেন বাদল সরকার, কেতকী কুশারী ডাইসন, আনিসুজ্জামান, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। দ্বিতীয় দিন সুধীর চক্রবর্তী, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদসহ আরও কজন।

মুশকিল বাধল দ্বিতীয় দিনে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আসার কথা ছিল আসাদুজ্জামান নূর আর আফসানা মিমির। তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছেন দর্শক-শ্রোতা। কিন্তু এই দুই জনপ্রিয় মুখকে দেখা গেল না সেখানে, তাঁরা আসতে পারেননি। ফলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটাই পড়ে গেছে ফাঁপরে। কীভাবে উদ্ধার করা যায়? আয়োজকেরা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে অনুরোধ করলেন, সম্মেলনে কথা বলা শেষ করে তিনি যেন দ্রুত গিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের হাল ধরেন।

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের মনে হলো, এ এক কঠিন কাজ। কোথায় আসাদুজ্জামান নূর, আফসানা মিমি, আর কোথায় বৃদ্ধ তিনি! তারপরও তাঁর আগের জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে দাঁড়িয়ে গেলেন মঞ্চে।

এই দর্শক-শ্রোতার মন ভালো করে দেওয়া যায় কীভাবে? ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। মঞ্চে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘কবিতার জন্য বিখ্যাত বাংলাদেশের কবিরা এখন আর কবিতা লিখছেন না; বিশেষ করে প্রেমের কবিতা। লিখবেন কী করে বলুন? প্রেমের কবিতা লিখতে হলে তো চারপাশে সুন্দরী রূপসীদের ভিড় থাকা চাই। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশ আজ এ ব্যাপারে নিঃস্ব।’

দর্শক-শ্রোতাদের মনে তখন কৌতূহল জেগে উঠেছে।

বলে চলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ‘অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম, আমাদের এই সুন্দরীরা গেল কোথায়? এখন বুঝতে পারছি, তাঁরা কোথায় গেছেন। তাঁরা কোনো পরীরাজ্যে যাননি। দল বেঁধে চলে এসেছেন ডালাসে। ওই তো তাঁরা আমার সামনে বসে মিটিমিটি হাসছেন। হায় সুন্দরীরা, কেন বাংলাদেশ ছেড়ে চলে এলেন? আপনাদের জন্যই না বাংলাদেশ আজ সুন্দরীশূন্য, প্রেমশূন্য, কবিতাশূন্য।’

এরপর কি আর অনুষ্ঠানস্থল বিষণ্ন থাকতে পারে? 

সূত্র: আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, ওড়াওড়ির দিন, পৃষ্ঠা ৫২-৫৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত