Ajker Patrika

ট্রাম্প-বাইডেন কী বদলাবেন

ক্রিস্টোফার রোডস
ট্রাম্প-বাইডেন কী বদলাবেন

গত শনিবার এক নির্বাচনী সমাবেশে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। এতে সাবেক প্রেসিডেন্ট রক্তাক্ত হয়েছেন, কিন্তু গুরুতর আহত হননি। এই গুলির ঘটনায় একজন দর্শক এবং হামলাকারী ওই বন্দুকধারী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আরও দুজন দর্শক গুরুতর আহত হয়েছেন।

এর কয়েক ঘণ্টা পরে এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গুলি চালানোর নিন্দা করেন এবং তাঁর প্রতিপক্ষের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন। তিনি তাঁকে ‘ডোনাল্ড’ বলে অভিহিত করেন, যা এই দুই ব্যক্তির মধ্যকার বিদ্বেষের সাময়িক বিরতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং রাজনীতির বৃহত্তর পরিসরের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা ট্রাম্প ও অন্য ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ এবং রাজনৈতিক এই সহিংসতার নিন্দা করেছেন। এর বিপরীতে, অনেক লোক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এফবিআই নিহত বন্দুকধারীকে ২০ বছর বয়সী টমাস ম্যাথিউ ক্রুকস হিসেবে শনাক্ত করার পরও ট্রাম্পের বিরোধিতাকারীদের ধারণা, এটি একটি সাজানো হামলা। অন্যদিকে তাঁর সমর্থকদের ধারণা, এটি বামপন্থীদের হামলা। যদিও হামলাকারী একজন নিবন্ধিত রিপাবলিকান।

উভয় পক্ষের এই সংশয় যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান গভীর রাজনৈতিক বিভাজনকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকানরা নিঃসন্দেহে আগামী দিনে এ ঘটনা থেকে সর্বাধিক সুফল তুলতে চাইবে। কিন্তু রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য দুই পক্ষেরই রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়ার বিষয়কে উপেক্ষা করা উচিত নয়; বরং তা জরুরিভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

প্রেসিডেন্টের দৌড়ে নতুন নিয়ম
এ ঘটনা থেকে ট্রাম্প বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। যখন সিক্রেট এজেন্টরা তাঁকে মঞ্চ থেকে দূরে নিয়ে যান, তখন তাঁর সমর্থকেরা ‘ইউএসএ, ইউএসএ’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট তখন জনগণের পাশাপাশি সব সংবাদমাধ্যমের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। বাস্তবতা হলো, এই ঘটনার পর সব আলো গিয়ে পড়েছে ট্রাম্পের ওপর। এটা বাইডেনের শিবিরও চায়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট বাইডেনের অফিস করার মতো শারীরিক ও মেধাগত সক্ষমতা তাঁর প্রতি সমর্থন ক্রমে কমিয়ে দিচ্ছে।

এখন আশা করা যায়, ট্রাম্পের ওপর সব মনোযোগ তাঁর চরমপন্থা, আইনি সমস্যা এবং তাঁর দলের অতিডান অ্যাজেন্ডা, প্রজেক্ট ২০২৫ দিকে ধাবিত হবে। কারণ তিনি এখান থেকে নিজেকে দূরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে ডেমোক্র্যাটরা বিশ্বাস করেন, এটি সুইং ভোটারদের তাঁর থেকে দূরে সরে যেতে উৎসাহিত করতে পারে।

ট্রাম্প হত্যাচেষ্টার শিকার হওয়া সত্ত্বেও, তিনি হলেন সেই প্রার্থী, যিনি রাজনৈতিক সহিংসতাকে উৎসাহিত করার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর সমর্থকেরা ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে আক্রমণ, সাবেক হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির স্বামীর ওপর হামলা এবং একজন কংগ্রেস উইম্যানকে অপহরণের চেষ্টা করে। এর সবই ট্রাম্পের সমর্থন ছিল।

উল্লেখ্য, হাউসের সাবেক স্পিকারই ট্রাম্পের ওপর গুলির বিষয়ে মন্তব্য করা প্রথম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের একজন। তিনি সোশ্যাল হ্যান্ডেল এক্সে লেখেন, ‘রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্য হিসেবে আমি নিজেই জানি যে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার স্থান নেই।’
গুলি ছোড়ার ঘটনা গত নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয়-সম্পর্কিত ব্যাখ্যার সঙ্গে বেশ খাপ খায়। ট্রাম্পের মতে, তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের জয় ছিনতাই করা হয়েছে; তিনি আক্রমণের শিকার হয়েছেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে তাঁর পরাজয়ের পর থেকে তিনি নিজেকে বাইডেন প্রশাসনের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ‘নির্বাচনী হস্তক্ষেপ’-এর যে অভিযোগ আনা হয়েছিল, তাকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। তাঁর বিরুদ্ধে চালু হওয়া সব মামলাকে তিনি রাজনৈতিক নিপীড়ন হিসেবে তুলে ধরেন। ট্রাম্প এমনকি ২০২২ সালে তাঁর মার-এ-লাগোর বাসভবনে এফবিআইয়ের রাষ্ট্রীয় গোপন নথি উদ্ধার অভিযানকে তাঁকে হত্যার চেষ্টা বলে বর্ণনা করেন।

ট্রাম্পের কট্টর সমর্থকেরা তাঁর ক্ষতি করার মতো যেকোনো কাজের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানায়। উদাহরণস্বরূপ, মে মাসে নিউইয়র্কের একটি জুরিবোর্ড ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করে। পরে তাঁর সমর্থকেরা জুরিদের ওপর হামলা, বিচারকের মৃত্যু এবং সহিংসতার আহ্বান জানান।

শনিবারের সমাবেশে গুলি চালানোর ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকেরা ঘটনার পরপরই জনতার কাছ থেকে হুমকি পান এবং কটূক্তি শোনেন। অ্যাক্সিওসের একজন প্রতিবেদক কিছু ট্রাম্প-সমর্থককে মিডিয়া এলাকায় প্রবেশের চেষ্টা করতে দেখেছেন। তবে নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের বাধা দেন।

এখন পর্যন্ত ট্রাম্প নিজের বক্তব্যকে 
সংযত রেখেছেন। তিনি ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন এবং ‘মন্দকে জয়ী হতে দেবেন না’ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বরাবর ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ও বিভাজনমূলক বার্তার ওপরেই তিনি নির্ভর করেছেন। গুলির ঘটনার পর তাঁর সমর্থকদের তিনি ওই একই অবস্থানে থাকতে নিরুৎসাহিত করেন কি না, তা দেখা যাক।

ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার চেয়ে ট্রাম্পের সামনে দেশের শান্তি ও নিরাপত্তাকে এগিয়ে রাখার সুযোগ রয়েছে। সম্ভবত মৃত্যু খুব কাছ থেকে দেখার পর সমর্থকদের উসকানি দেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তিনি সরে আসবেন। তা না হলে শনিবারের গুলিবর্ষণের ঘটনা আমেরিকার জন্য খুব বিপজ্জনক সময়ের সূচনা করতে পারে। আমরা দেখেছি, তাঁর সমর্থকেরা কল্পিত নিপীড়নের জন্য গত ৬ জানুয়ারি ব্যাপক সহিংসতা বাঁধিয়েছিলেন। ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বিস্তার এবং ডানপন্থীদের মধ্যে বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তৃতা এ ধরনের সহিংস কাজকে উৎসাহিত করেছে। হত্যার চেষ্টা সহিংস মৌলবাদের আগুনে আরও ইন্ধন ঢালতে পারে।

এ কারণেই ট্রাম্প এবং তাঁর রিপাবলিকান মিত্রদের পাশাপাশি বাইডেন এবং ডেমোক্র্যাটদের জন্য দেশে ক্রমবর্ধমান মেরুকরণ মোকাবিলা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক সহিংসতা অবশ্যই আমেরিকান রাজনীতির প্রধান বিষয় হয়ে উঠবে না।

শনিবারের গুলির ঘটনা ছিল এমন এক ট্র্যাজেডি, যা আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার দিনগুলোর একটি হয়ে উঠতে মাত্র কয়েক ইঞ্চি দূরে ছিল। এই ঘটনা এ বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য এবং আমাদের রাজনীতির চারিত্রিক একটি পরিবর্তন বিন্দু ছিল। বর্তমান এবং সাবেক প্রেসিডেন্টদের প্রত্যেকের কাছে মার্কিন সমাজের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি বন্ধ করার এবং দেশটির রাজনীতিতে শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে সহায়তা করার সুযোগ রয়েছে। 

ক্রিস্টোফার রোডস, প্রভাষক, হার্ভার্ড ও বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়

(আল জাজিরায় প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনূদিত)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত