Ajker Patrika

লজ্জা

সম্পাদকীয়
লজ্জা

মারপিট করাটা কত সহজ হয়ে গেছে! চাইলেই যেন যে কাউকে আঘাত করা যায়! সহিষ্ণুতা বলে কিছু আর অবশিষ্ট থাকছে না। কুয়াকাটার সমুদ্রসৈকতে গিয়ে সমুদ্র দেখার সাধ আছে যাঁদের, তাঁদের সতর্ক করে দিয়ে বলতে হয়, এখানে কিন্তু সমুদ্রের পাশাপাশি দলীয় কোন্দল দেখার ‘সৌভাগ্য’ হতে পারে আপনার এবং সেই কোন্দলের ফলে পৌর মেয়রকেও মার খেতে দেখতে পারেন আপনারা। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, ‘কারা এই মেয়রের শরীরে হাত তুলল?’ উত্তরে কিন্তু কেউ বলবে না, এটা বিরোধী দলের কাজ। কারণ, পৌর মেয়র মার খেয়েছেন সাবেক পৌর মেয়রের সমর্থকদের হাতে। একবার নয়, তিনবার। এককালে লুডু খেলার সময় আমরা বলতাম, ‘দানে দানে তিন দান।’ সে কথা মনে রেখেই কি পৌর মেয়রের ওপর তিনবার ঝাঁপিয়ে পড়ল সাবেক মেয়রের সমর্থকেরা? আর সেরের ওপর সোয়া সেরের মতো এই ঘটনা ঘটল খোদ এলাকার সংসদ সদস্যের সামনে!

রাজনীতি থেকে শিষ্টাচার উঠে যাচ্ছে। পারস্পরিক সম্মানবোধ এসে তলানিতে ঠেকেছে। যেন প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে, কেউ কাউকে সম্মান করবেন না। দলীয় পদ-পদবি অর্জনের জন্য প্রয়োজনে প্রতিদ্বন্দ্বীর খোল-নলচে বদলে ফেলতে হবে। যেকোনোভাবে তাঁকে অসম্মান করে নিজেকে বিজয়ী বেশে উপস্থাপন করতে হবে।
এবার যা বলা হবে, তাকে কৌতুক বলে মনে হতে পারে। পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় যে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে, তা ছিল সেখানে আওয়ামী লীগের শান্তি উন্নয়ন সমাবেশের প্রাক্কালে। বুঝে দেখুন অবস্থাটা। অশান্তি দিয়ে শুরু হয়েছে শান্তি সমাবেশ! সমাবেশটি ছিল বিএনপি-জামায়াত জোটের নৈরাজ্য ও আগুন-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি যদিও গত সপ্তাহের কিন্তু এ নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে—নিজেরাই যেখানে শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় রাখতে পারছেন না, তাঁরা কীভাবে অন্যের সন্ত্রাস আর নৈরাজ্য থেকে জনগণকে রক্ষা করবেন?

পটুয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. মহিব্বুর রহমান যদিও বলছেন, এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই, এ হলো নির্বাচন-সংক্রান্ত কোন্দল। যদিও বলছেন, এই মারপিটের ঘটনার পরও শান্তি সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবেই সমাপ্ত হয়েছে, তবু আমরা সার্বিক পরিস্থিতির ওপর আস্থা রাখতে পারছি না। নিজ দলেই নির্বাচন-সংক্রান্ত দলাদলির কারণে যদি এলাকার সম্মানীয় একজন মানুষকে আরেকজন সম্মানীয় মানুষের সমর্থকেরা পেটাতে পারেন, তাহলে তাঁরা পৌর পিতা হিসেবে মানুষের মনে আস্থা আনবেন কী করে?

ঘটনাটি শুধু পটুয়াখালীর স্থানীয় পরিসরে সীমাবদ্ধ নয়। সার্বিকভাবে রাজনৈতিক মহলে যে মানসিকতার বিকাশ ঘটছে, তা ভয়াবহ এক ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। দলের মধ্যে গণতন্ত্র না থাকলে, সম্মান-শ্রদ্ধা ও স্নেহের সম্পর্কগুলো নষ্ট হয়ে গেলে, শৃঙ্খলা ভঙ্গ হলে, আদর্শের প্রতি বিশ্বস্ত না থাকলে যা যা ঘটতে পারে, তারই প্রতিযোগিতা যেন আমরা দেখছি সর্বত্র। শুধু আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার নয় এটি। একটু খেয়াল করে দেখলেই বোঝা যাবে, সব দলের ভেতরেই এই দুর্বিনীত অশান্তির বীজ ঢুকে পড়েছে। এই লজ্জা থেকে রাজনৈতিক দলগুলো কি বের হতে পারবে?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চাকরির নামে মিরপুর-শেওড়াপাড়ায় বাসায় ডেকে নারীর সঙ্গে ভিডিও ধারণের পর টাকা হাতিয়ে নিত ‘হানি ট্র্যাপ’ চক্র

দনবাস চান পুতিন—ন্যাটো তো নয়ই, পশ্চিমা সেনাও থাকবে না ইউক্রেনে

দুস্থদের ৩৪ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা মোহনগঞ্জ সমাজসেবা কর্মকর্তা

তথ্য যাচাইয়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করবেন—ইউটিউব চ্যানেলে সিইসির বার্তা

ফরিদপুরে চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে সেবা বন্ধের ঘোষণা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত