Ajker Patrika

মাওলানার ফাঁদ

ডা. আলীম চৌধুরী
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ৪৫
মাওলানার ফাঁদ

ডা. আলীম চৌধুরী বিশ্বাস করেছিলেন মাওলানা মান্নানকে। একাত্তরের জুলাই মাসে মাওলানা মান্নান এসে ঠাঁই নিয়েছিলেন ডা. আলীম চৌধুরীর বাড়ির নিচতলায়। পিডিএমের মতিন সাহেব এই মাওলানাকে নিয়ে এসেছিলেন। বলেছিলেন, ভদ্রলোক খুব বিপদে পড়েছেন। তিনি নিরাশ্রয়। আলীম-জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী প্রবল আপত্তি করেছিলেন। কিন্তু আলীম চৌধুরী বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সাহায্যের হাত। মাওলানা তাঁর স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে উঠলেন আলীম চৌধুরীর বাড়ির নিচতলায়।

মাওলানা মান্নান স্বরূপে ফিরে এলেন কয়েক দিন কাটতে না কাটতেই। তাঁর বাড়িতে তখন পাকিস্তানি সেনাদের আনাগোনা। রাতভর হুল্লোড়। তাঁকে পাহারা দিত আলবদরের দল। মাওলানা প্রবোধ দিতেন আলীম চৌধুরীকে, ‘ডাক্তার সাহেব, আপনার উপকার আমি জীবনে ভুলব না।’

১৫ ডিসেম্বর আলীম চৌধুরী মিটফোর্ড হাসপাতালে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী এই বাড়ি ছাড়ার কথা বললেন আলীম চৌধুরীকে। তিনি রাজি হলেন। বললেন, ‘ঠিক আছে, আজ যাব। জায়গা ঠিক করে আসি।’

কারফিউ সরে গেলে গাড়ি নিয়ে বের হলেন তিনি। হাসপাতালে এমন ব্যস্ত ছিলেন যে সময়মতো ফিরতে পারলেন না। সবকিছু গোছানো হয়েছিল, কিন্তু রওনা হওয়া গেল না। বাড়িতে ফেরার পর হঠাৎ বাড়ির সামনে গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ। কাদালেপা একটা মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। আলীম ভাবলেন, মাওলানার কাছে এসেছে ওরা। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই দরজায় করাঘাত। আলীম চৌধুরী মাওলানা মান্নানের বাড়ির দিকে রওনা হলেন। বলে গেলেন দরজা খুলে দিতে। মাওলানার দরজায় বারবার আঘাত করলেও মান্নান দরজা খোলেননি। শুধু বললেন, ‘আপনি যান, আমি আছি।’

মাওলানার কথায় আস্থা রেখেছিলেন ডা. আলীম চৌধুরী। উঠলেন কাদালেপা মাইক্রোবাসে।

শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীকে মিথ্যা কথা বললেন মাওলানা, ‘ডাক্তার সাহেবকে আমার ছাত্ররা নিয়ে গেছে চোখের চিকিৎসা করাতে।’ শ্যামলী নাসরিন বুঝলেন, মাওলানা আগে থেকেই সব জানতেন। আলীম চৌধুরী আর ফেরেননি।

সূত্র: শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ১৯৭১: ভয়াবহ অভিজ্ঞতা, পৃষ্ঠা ২৪৬-২৪৮

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত