Ajker Patrika

গণতন্ত্রের আমেরিকান ও চায়না মডেল

শওগাত আলী সাগর
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ১১
গণতন্ত্রের আমেরিকান ও চায়না মডেল

জো বাইডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনের আগেই চীন পাল্টা একটি গণতন্ত্র সম্মেলন করে ফেলেছে। গত শনিবার ‘ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম অন ডেমোক্রেসি’ নামে একটি সম্মেলন করেছে, যেখানে ‘চায়না: ডেমোক্রেসি দ্যাট ওয়ার্ক’ নামে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। একটি মাত্র রাজনৈতিক দল নিয়েও চীন ‘কীভাবে কার্যকর একটি গণতন্ত্রের মডেল তৈরি করতে পেরেছে’ তার বিশদ বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে সম্মেলনে।

চীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা গণতন্ত্রের ‘চায়না মডেল’ নিয়ে ব্যাপক প্রচারণায় নামবে। মার্কিন গণতন্ত্রের অসারতা তুলে ধরার পাশাপাশি চায়না গণতন্ত্রের মডেল নিয়ে বড় ধরনের প্রচারণার উদ্যোগ নেবে তারা। ফলে সারা বিশ্ব এখন ‘চায়না ডেমোক্রেসি’ এবং ‘জো বাইডেন ডেমোক্রেসি’—এই দুই গণতন্ত্রের লড়াইয়ের উত্তেজনা উপভোগকরার সুযোগ পাবে।

৯-১০ ডিসেম্বর ১১১টি দেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে গণতন্ত্র সম্মেলন করতে যাচ্ছেন, সেখানে চীন ও রাশিয়াকে বাদ রাখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবেই বলেছে, কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের শাসনকে উৎসাহ দিতেই তার এ সম্মেলন। কিন্তু কোনো কোনো দেশকে ‘কর্তৃত্ববাদী’ আখ্যা দিয়ে প্রচারণাকেই গণতন্ত্রের মূল্যবোধের পরিপন্থী হিসেবে বিবেচনা করছেন অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। ফলে জো বাইডেনের সম্মেলনটি সেই অর্থে ইনক্লুসিভ এবং গ্রহণযোগ্য একটি উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হতে পারেনি।

অনেক পশ্চিমা রাজনীতি-বিজ্ঞানীর কাছেই জো বাইডেনের গণতন্ত্র সম্মেলন আসলে চীনবিরোধী বৈশ্বিক একটি মোর্চা গঠনের প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। চীনের ‘কর্তৃত্ববাদী’ শাসনের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের স্লোগানকে সামনে নিয়ে এসেছে। ঠিক এই জায়গাটায় চীন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের নানা ত্রুটিকে প্রচারণায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোচ্ছে।

চীন অবশ্য জো বাইডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনকে নিতান্তই একটি ‘তামাশা’ মনে করছে। চীনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রকাশ্যেই বলছেন, খোদ আমেরিকাতেই তো প্রকৃত গণতন্ত্র নেই, তাদের আবার গণতন্ত্র সম্মেলন কিসের!

জো বাইডেনের গণতন্ত্র সম্মেলনের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পলিসি রিসার্চ অফিসের ডেপুটি ডিরেক্টর তিয়ান পেইয়ান গণতন্ত্র সম্মেলনের সমালোচনা করে বলেছেন, মার্কিন রাজনীতিকেরা আসলে নানা স্বার্থবাদী গ্রুপের এজেন্ট। তাঁরা অধিকাংশই জনগণের তো নয়-ই, রাষ্ট্রের স্বার্থের প্রতিনিধিত্বও করেন না।

তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে গণতন্ত্র আছে, সেটি প্রকৃত গণতন্ত্র নয় এবং চীনারা এই গণতন্ত্র চায় না। তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে নিজস্ব ধারার গণতন্ত্রের নেতা এবং তাদের লক্ষ্য হচ্ছে—চাপ সৃষ্টি করে ভিন্নধারার উন্নয়নের মডেলকে দমিয়ে দেওয়া।

ঘোষণার পর থেকে জো বাইডেনের গণতন্ত্র সম্মেলন আলোচনায় থাকলেও শেষ মুহূর্তে এসে চীন সেটিকে চ্যালেঞ্জ করে বসেছে। ৯-১০ ডিসেম্বরের গণতন্ত্র সম্মেলনের দিকে তীক্ষ্ণভাবে মনোযোগ রাখলে আগামী কয়েক দিনে বিশ্বরাজনীতির আরও চমকপ্রদ নানা ঘটনাপ্রবাহ নজরে পড়বে নিশ্চিত। তবে গণতন্ত্রের চায়না বনাম মার্কিন মডেল নিয়ে বিতর্ক কিংবা আলোচনাটাও কম কৌতূহলোদ্দীপক নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত