Ajker Patrika

ঘাড়ের গামছা থুইয়া যাও রে

রজত কান্তি রায়, ঢাকা
আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২২, ১৫: ৫৪
ঘাড়ের গামছা থুইয়া যাও রে

‘যদি বন্ধু যাবার চান
ঘাড়ের গামছা থুইয়া যাও রে…’

কাজল ভ্রমরা বন্ধু যখন নিধুয়া পাথারে গরুর গাড়ি নিয়ে ছুটে চলেছে দিনের পর দিন, তখন প্রিয়তমা আকুতি জানিয়ে বলছে, যেতে চাইলে যাও। শুধু ঘাড়ের গামছাটা রেখে যাও। সেটাই আমার কাছে থাক তোমার স্মৃতি হয়ে।

গামছা এ দেশের, এ মাটির ঐতিহ্য—শত শত বছরের। গামছার ইতিহাস কত পুরোনো? সেটা বলা কঠিন। তবে আজ থেকে প্রায় সোয়া পাঁচ শ বছর আগে লিখিত ‘মনসামঙ্গল’ কাব্যে গামছার উল্লেখ পাওয়া যায় বেহুলার বিয়ের অনুষ্ঠানে। কবি নারায়ণ দেব লিখেছিলেন, ‘গামছা লইয়া ঔসদ লাগে মুছিবার।…’ ফলে গামছা যে আমাদের সুদীর্ঘ কালের যাপন অনুষঙ্গ, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

গা মোছা এই বস্ত্রখণ্ডের মূল কাজ শরীর মোছা বা পরিষ্কার করা, সে পানি থেকেই হোক বা ঘাম থেকেই হোক। আবার এটি পুরুষের পরনের কাপড় হিসেবে কিংবা নারীর ঊর্ধ্বাঙ্গ আবৃত করার কাজেও ব্যবহার হয়ে থাকে। অল্প শীতে গায়ে জড়িয়েও নেওয়া যায় চাদর হিসেবে উষ্ণতার জন্য। নারীদের লম্বা চুলের পানি শুষে নেওয়ার জন্য এর বিকল্প একমাত্র টাওয়েল। ভীষণ গ্রীষ্মে এটি পেতে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়া যায় বড় কোনো গাছের ছায়ায়।

বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বসবাসকারী তাঁতিরা তাঁত যন্ত্রে গামছা তৈরি করে আসছেন শত শত বছর ধরে। সম্প্রতি তাঁতে যুক্ত হয়েছে পাওয়ার লুম। ৩০-৪০ কাউন্ট সুতির সুতায় তাঁতে উৎপাদন বেড়েছে। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, এনায়েতপুর, উল্লাপাড়া, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, বগুড়ার কিছু এলাকায়, খুলনার ফুলতলা, বরিশাল ও ঝালকাঠির বিভিন্ন এলাকায় তাঁতে তৈরি হয় সুতির গামছা। সিরাজগঞ্জের পাঁচলিয়া, কুষ্টিয়ার কুমারখালী ও খুলনার ফুলতলা গামছার হাট হিসেবে বিখ্যাত।

চেক হলো গামছার মূল নকশা। লাল, সবুজ, হলুদ ও সাদা এ রংগুলোই গামছার আদি রং। এগুলো দিয়ে বানানো হতো গামছার বিখ্যাত চৌখোপা চেক নকশা। এখন গামছার রঙে পরিবর্তন এসেছে বেশ খানিকটা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গামছার রং নিয়ে বেশ পরীক্ষা–নিরীক্ষা করেছে এবং করছে। ফলে তাঁতিদের মধ্যেও বিভিন্ন রঙের গামছা তৈরির প্রবণতা তৈরি হয়েছে।

গামছার আদি ও অকৃত্রিম ব্যবহারের জায়গা যেমন এখনো আছে, তেমনি তৈরি হয়েছে তার নতুন উপযোগিতা। এখন গামছা দিয়ে তৈরি হচ্ছে শাড়ি, ফতুয়া, ওড়না, কামিজ, ব্লাউজ কিংবা কটি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডে সেগুলো বিক্রিও হয় বেশ চড়া দামে। এ ছাড়া কোনো কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠান বাংলা নববর্ষের উপহার হিসেবেও ব্যবহার করছে গামছা। 
বাংলাদেশ ছাড়াও আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ওডিশায় গামছা ব্যবহার হয়।

কোথায় পাবেন-দরদাম

পুরো বাংলাদেশের কাপড়ের দোকানগুলোতে গামছা পাওয়া যায়। এ ছাড়া ঢাকা শহরে বিভিন্ন ব্যস্ত রাস্তার ফুটপাতে চোখে পড়বে গামছার দোকান। আকৃতিভেদে ৩০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০ টাকায় গামছা পাওয়া যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যাবে বর্ণিল রং ও নকশার গামছা। সেগুলো কেনা যাবে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

কোটি টাকা ‘ভর্তুকি’র জিম্বাবুয়ে সিরিজে বাংলাদেশ যা পেল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত