Ajker Patrika

ঊর্ধ্বতনদের বার্তার অভাবে মাঠে প্রাণ যায় পুলিশের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২৪, ১১: ০৩
ঊর্ধ্বতনদের বার্তার অভাবে মাঠে প্রাণ যায় পুলিশের

৫ আগস্ট সকাল থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে ছিল সরকার পতনের গুঞ্জন। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এ বিষয়ে পরিষ্কার কোনো বার্তা পাচ্ছিলেন না মাঠ সামলাতে থাকা পুলিশ সদস্যরা। ফলে রাস্তায় রাস্তায় তাঁদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছিল।

অনেক জায়গায় কোণঠাসা করে পুলিশ সদস্যদের ওপর চড়াও হয় আন্দোলনকারী ও দুর্বৃত্তরা। হামলা হয় পুলিশের ওপর। আন্দোলনকেন্দ্রিক সহিংসতায় প্রাণ হারানো ৪১ পুলিশ সদস্যের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নিহত হন ওই দিন। 

পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় সারা দেশে মোট ৪১ জন পুলিশ সদস্য নিহত হন। তাঁদের মধ্যে ৫ আগস্ট ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে মারা যান ২৩ জন। এর আগের দিন ৪ আগস্ট মারা যান ১৪ জন। সব মিলিয়ে নিহত ৪১ পুলিশ সদস্যের মধ্যে ৩ জন পরিদর্শক, ১১ জন উপপরিদর্শক (এসআই), ৭ জন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই), ১ জন নায়েক ও ১৯ কনস্টেবল রয়েছেন। এ ছাড়া আন্দোলনকেন্দ্রিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) দুই সদস্য। 

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, সবচেয়ে বেশি নিহত হন সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশের সদস্যরা। জেলায় মোট ১৫ জন পুলিশের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে এনায়েতপুর থানাতেই এলাকাবাসীর পিটুনিতে মারা যান ১৪ জন। এর বাইরে ঢাকা মহানগর পুলিশের ১১, কুমিল্লায় ৩, নোয়াখালীতে ২, ঢাকার জেলা এসবি ও ডিএসবি, গাজীপুর, চাঁদপুর, হবিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের একজন করে মারা যান। 

নিহত হওয়া ছাড়া আহত হয়ে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫০৭ জন। গুরুতর আহত ২৭ জন এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁদের একজন আইসিইউতে রয়েছেন। 

পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের জন্য তো কিছু করতে পারছি না। তবে আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার পাশাপাশি ট্রমার শিকার পরিবারগুলোর আশ্রয় ও দেখভালের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’ 

এদিকে পুলিশ সদরের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নিহত পুলিশ সদস্যদের কারও কারও লাশ ঘটনাস্থলে দুই দিন পর্যন্ত পড়ে ছিল। পরে উদ্ধার করা সেই লাশের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত না করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তা ছাড়া এখন পর্যন্ত পুলিশ মৃত্যুর ঘটনায় কোনো মামলাও হয়নি। 

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক ডিএমপির পরিদর্শক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শুধু সরকার টিকিয়ে রাখতে পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা আমাদের মাঠে মৃত্যুর মুখে ফেলে দেন। সব জেনেও বাহিনীকে বিপদে ফেলা কোনো কর্মকর্তার কাজ হতে পারে না।’ 

জুলাইয়ে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন এক মাসের মাথায় সহিংস রূপ নেয়। তারপর তা পরিণত হয় সরকার পতনের আন্দোলনে। ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে চলে গেলে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এই আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতায় তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়, যাঁদের অনেকে শিক্ষার্থী। আবার সরকার পতনের আগে সংঘর্ষে এবং সরকার পতনের পর থানায় থানায় হামলায় বহু পুলিশ সদস্যও হতাহত হন। 

এরপর পুলিশি ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়ে। সহকর্মীদের হত্যার বিচার, নিরাপত্তাসহ ১১ দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্যরা। পুলিশহীন রাজধানীতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে নামানো হয় আনসার। রাতে ঢাকা পরিণত হয় ডাকাত-আতঙ্কে এক ভয়ের নগরীতে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইস্পাহানে বাংকার বাস্টার মারেনি যুক্তরাষ্ট্র, অক্ষত ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম

বাবুই পাখির কান্না কেউ শুনল না, কেটে ফেলা হলো তালগাছটি

ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভারতের সংসদীয় কমিটির দীর্ঘ বৈঠক

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা: নান্দাইলে সাবেক এমপি-মন্ত্রীকন্যার বিরুদ্ধে মামলা

গোষ্ঠীস্বার্থে বহু মানুষের স্বপ্ন নষ্ট করেছে এই প্ল্যাটফর্ম: দায়িত্ব ছেড়ে উমামা ফাতেমার পোস্ট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত