Ajker Patrika

শিশুযত্ন কেন্দ্র নিয়ে এ কি কাণ্ড

সম্পাদকীয়
শিশুযত্ন কেন্দ্র নিয়ে এ কি কাণ্ড

আমাদের দেশে, বিশেষ করে বাচ্চা শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণের ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলছে। কত মা-বাবার বুক খালি হয়ে যাচ্ছে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায়। অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এ জন্য দরকার শিশুদের কমিউনিটি পর্যায়ে সাঁতার শেখা বাধ্যতামূলক করা। পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতন করার বিকল্প নেই। এসব করা গেলে শিশুদের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হতে পারে। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে সরকারি উদ্যোগ নেওয়ার দাবি ছিল অনেক দিন থেকেই।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ‘সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশুযত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং শিশুর সাঁতার সুবিধা প্রদান’ নামে প্রকল্প হাতে নেয় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্পের অধীনে ১৬ জেলার ৪৫ উপজেলায় ৮ হাজার শিশুযত্ন কেন্দ্রের মধ্যে নতুন হবে ৫ হাজার; বাকি ৩ হাজার কেন্দ্র বেসরকারি উন্নয়ন-সহযোগীদের মাধ্যমে আগে থেকেই পরিচালিত হচ্ছে। এগুলো আবার প্রকল্পের সঙ্গে একীভূত হওয়ার কথা। কেন্দ্রগুলোয় তিন বছরে এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী ২ লাখ শিশুকে সেবা প্রদান এবং ছয় থেকে দশ বছর বয়সী ৩ লাখ ৬০ হাজার শিশুকে সাঁতার শেখানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু তিন বছর মেয়াদি প্রকল্প আড়াই বছর চলে গেলেও এখনো প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি। পরে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। অথচ এরই মধ্যে খরচ হয়ে গেছে সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। এ নিয়ে রোববার আজকের পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

পানিতে ডুবে মৃত্যু নিয়ে দেড় দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করছে বেসরকারি সংগঠন ‘সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ (সিআইপিআরবি)’। এই প্রতিষ্ঠানের গবেষণামতে, দেশে পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মারা যায় দুই থেকে নয় বছরের শিশুরা। বেশির ভাগ মৃত্যু হয় সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টার মধ্যে। এ সময়ে শিশুদের দেখভালের ব্যবস্থা রাখা হলে মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। আবার পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের সাঁতারের প্রশিক্ষণ দিলে তাদেরও মৃত্যুর হার অনেকটাই কমবে।

সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ কেন এখনো আলোর মুখ দেখছে না—প্রশ্নটা যেকোনো সচেতন মানুষের মনে উঁকি দেবে। প্রকল্পটির কাজ এখনো শুরু না হওয়ার দায় বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান শিশু একাডেমির ওপর বর্তায়। তারা কেন এখনো কাজটি শুরু করতে পারল না? প্রকল্পের কাজ শুরু না হলেও অনেক টাকা কোন খাতে ব্যয় হলো, তা-ও স্পষ্ট করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের অনেক জায়গার শিশুরা এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হতো। ৮ হাজার কেন্দ্রে ১৬ হাজার নারীর কর্মসংস্থানও হতো। এটা স্পষ্ট যে প্রধানত শিশু একাডেমির গাফিলতিতে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি। এ জন্য তাদের জবাবদিহি করা দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত