Ajker Patrika

প্রবীণ আর নবীন

পিয়াস সরকার, সাংবাদিক
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ৫০
প্রবীণ আর নবীন

ধানমন্ডি লেকে নিয়মিত হাঁটেন তাঁরা। হাঁটা শেষে বজরায় বসে আড্ডা। ঘড়িতে সময় তখন ৭টা ছুঁই ছুঁই, সকাল। আড্ডায় বসেছেন আটজন। সবাই পঞ্চাশোর্ধ্ব। আড্ডার বিষয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। পোশাক ও কথাবার্তায় অনুমেয় তাঁরা সবাই উচ্চশিক্ষিত ও ধনী।

আলোচনা শুরু হয়েছে এক ব্যক্তির নাতি ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে আন্দোলনে গিয়েছে, এ নিয়ে। এটা তাঁর একদমই পছন্দ নয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করা কি উচিত? এ নিয়েই আলোচনা।

আন্দোলনের পক্ষের একজন বলেন, ‘এরশাদবিরোধী আন্দোলন বলেন আর মুক্তিযুদ্ধ; সবটাতেই কিন্তু শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ছিল শক্ত।’ বিপক্ষের যুক্তি, ‘আন্দোলন করার জন্যও একটা বয়স লাগে। স্কুল ড্রেস পরে তো আর আন্দোলন হয় না।’ আলোচনা জমে ওঠে আরও। দেশের প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়েও কথা হলো। একজন বললেন, ‘এই দেশের কিছুই হবে না। আইন করে কী লাভ? কেউ আইন মানে? একবার জার্মানি গেলাম, সেখানে দেখলাম, গ্রামে যেখানে সিসি ক্যামেরা নেই, সেখানেও কেউ যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলে না।’

আরেক ব্যক্তি বললেন, ‘দেশে শিক্ষার যে বড্ড অভাব।’

‘এই চা-গরম। স্যার, চা খাবেন?’

‘এই তোমার কাছে কি প্লাস্টিকের কাপ? এটা তো বিষ।’

যাই হোক, আটজনই চা নিলেন। আট টাকা করে চায়ের বিল হলো ৬৪ টাকা। ১০০ টাকা দিলেন চাওয়ালাকে। ৩৬ টাকা বকশিশ পেয়ে খুশিমনেই বজরা ছেড়ে গেলেন চাওয়ালা।

এবার আলোচনায় যোগ দিলাম আমিও। আমার সঙ্গে ছিলেন আরেকজন গণমাধ্যমকর্মী। পরিচয় পাওয়ার পর আন্দোলন নিয়ে নানা কৌতূহল তাঁদের। শিক্ষার্থীদের ১১ দফা নিয়ে প্রধানতপ্রশ্ন তাঁদের।

‘এই দাবিগুলো কি শিক্ষার্থীরাই লিখছে নাকি কেউ লিখে দিচ্ছে? আর আন্দোলনে কেউ কি ইন্ধন দিচ্ছে?’ আলোচনা কিছুটা ইনিয়ে-বিনিয়ে এগোলাম। কারণ, এই দুই প্রশ্নের জবাব আমার কাছেও নেই।

আলোচনা জমে উঠেছে বেশ। একসময় তাঁরা তাঁদের ছেলেমেয়েকে কেন দেশে না পড়িয়ে বিদেশে পড়িয়েছেন, তা নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন। কার সন্তান কতটা উচ্চ স্থানে গিয়েছেন, তা নিয়েও গর্ব করছেন একেকজন। এর এক ফাঁকে আমাদেরও চা খাওয়ালেন তাঁরা।

তাঁদের আড্ডা শেষ পর্যায়ে। এবার যাওয়ার পালা। ড্রাইভারকে ফোন দিয়ে দু-একজন গাড়ি আনতে বললেন। বাকিদের বাড়ি লেকপাড়েই।

তাঁদের চলে যাওয়ার পর ছয়টি প্লাস্টিকের কাপ পড়ে রইল সেখানেই। আর দুটি ভাসল ধানমন্ডি লেকের পানিতে। যদিও কয়েক হাত দূরেই ছিল ডাস্টবিন।

ধানমন্ডি লেকে প্রায়ই যাওয়া হয়। একদিন বন্ধুরা মিলে আড্ডায় মেতেছিলাম। সময় তখন রাত ৯-১০টা। এসএসসি ফলপ্রত্যাশী কিছু শিক্ষার্থী আড্ডায় বসেছে। সেখানেও কথা আন্দোলন নিয়ে।

এক শিক্ষার্থী গালি দিয়ে বলল, ‘আমারে কয় লাইসেন্স দেখা আপনার কাজ? পুলিশ দেখব।’ এর জবাবটাও যে অকথ্য ভাষায় দিয়েছে, তা গর্ব করেই বলল সে। বুঝলাম, দেশের সড়কব্যবস্থার সংস্কারের আন্দোলনের সম্মুখে ছিল তারা। পরিকল্পনা করছে কীভাবে আন্দোলন বেগবান করা যায়। তবে এই বয়সে দুই আঙুলের ফাঁকে জ্বলন্ত সিগারেটটা যে বড্ড বেমানান। আর আড্ডা শেষে বাবার বয়সী দোকানদারকে তুমি ও দোকানের সহযোগী (তাঁদের থেকে আনুমানিক ৫-১০ বছরের বড়) তুই করেই সম্বোধন করল তারা।

আর আড্ডার ফাঁকে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনাও হলো—ঘুরতে গিয়ে কী কী নেবে সঙ্গে, বাসে পুলিশের চেকিং হয় কি না, আর সেখানে ‘মাল’ পাওয়া যায় কি না, কোন হোটেলে ঝামেলা হয় না ইত্যাদি।

না, তাদের ওঠা হলো না। আরও কিছু বন্ধুর সঙ্গে দেখা। সবাই আবার বসল একসঙ্গে। বুঝলাম, কোনো এক শিক্ষার্থীর প্র্যাকটিকেল খাতা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। এক বন্ধু বলল, ‘আরে ব্যাপার না।’ অশালীন ভাষায় সংশ্লিষ্ট সেই শিক্ষককে সম্বোধন করে বলল, ‘মার্ক দিবো না মানে? ওর বাপে দিবো।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাস্তি পাচ্ছেন বিটিআরসির মহাপরিচালকসহ ৩০ জনের বেশি কর্মকর্তা

ভূমি অফিসের কাণ্ড: এসি ল্যান্ড দপ্তরের নামে দেড় কোটি টাকা আদায়

‘তেলের ক্রেতা’ হিসেবে ভারতকে আর পাবে না রাশিয়া, জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

হোলি আর্টিজানের ঘটনায় ‘জঙ্গি সন্দেহে’ আটক ছিলেন অনিন্দ্য, রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের চাচাতো ভাই তিনি

বরখাস্ত সৈনিককে অস্ত্র দিয়েছেন বিএনপি নেতা, অডিও নিয়ে তোলপাড়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত