Ajker Patrika

নতুন স্বপ্নে নদীতে জেলেরা

রহিম বাদশা, চাঁদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ১৩
নতুন স্বপ্নে নদীতে জেলেরা

মা ইলিশ রক্ষায় টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গত মধ্যরাতে। তার আগে রাতেই পুরোদমে জাল-নৌকা নিয়ে নদীতে নেমেছেন চাঁদপুরের জেলেরা। তাঁদের আশা—মৌসুমের সামনের দিনগুলোতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাবেন। আজ থেকে নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরায় নেই কোনো মানা।

গত ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২২ দিন চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার নৌ-সীমানায় ইলিশ আহরণ বন্ধ ছিল। এ সময় দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। গতকাল মধ্যরাতে সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে।

সোমবার চাঁদপুরের জেলেপাড়াগুলোয় সরেজমিনে দেখা গেছে, নৌকা ও জাল প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলে পরিবারের সদস্যরা। জেলে, নারী, শিশু-কিশোর সবাই জাল-নৌকার সর্বশেষ মেরামত ও সংস্কারে ব্যস্ত। এর মধ্যে জাল সেলাইয়ে বেশি ব্যস্ত তাঁরা। মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত চাঁদপুরের ৭০ কিলোমিটার এলাকার অর্ধলাখ জেলে তাঁদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।

এদিকে নিষেধাজ্ঞার সময়টাতে নদীতে মাছ ধরতে না পারায় মানবেতর জীবনযাপন করেছেন অনেক জেলে। তবে অনেক অসাধু জেলে এবার নিষেধাজ্ঞা না মেনেই নদীতে মাছ শিকার করেছেন। এ ছাড়া অনেকে পুলিশের ওপরও হামলা করেছেন। সব মিলিয়ে এ বছর নদীতে এবার পর্যাপ্ত মাছ শিকার করেছেন জেলেরা।

চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিনা এলাকার জেলে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় আমরা আর নদীতে নামিনি। মাছও ধরি নাই। কিন্তু বাইরের জেলেরা চাঁদপুরের সীমানায় এসে ইলিশ ধরেছেন। নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরতে না পারায় আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন পার করেছি। এখন মৌসুম শেষের দিকে। যদি বেশি করে ইলিশ পাই, তাহলে দেনা পরিশোধ করতে পারব।’

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান জানান, আশ্বিন মাসের অমাবস্যা ও ভরা পূর্ণিমায় মা ইলিশ প্রচুর ডিম পাড়ে। এই সময় মা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য পদ্মা-মেঘনা নদীতে চলে আসে। ইলিশের ডিমের পরিপক্বতা ও প্রাপ্যতার ভিত্তিতে মা ইলিশ রক্ষায় গত ৪ অক্টোবর থেকে চাঁদপুরের ৭০ কিলোমিটার পদ্মা-মেঘনা নদীর সীমানায় শুরু হয় নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম। সেই নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গতকাল মধ্যরাতে। নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে ইলিশ আহরণ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ ছিল।

গোলাম মেহেদী হাসান আরও বলেন, মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমকে সফল করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকেরা অনেক সহযোগিতা করেছেন। বিগত বছরের ন্যায় এ বছরও চাঁদপুরে মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম অত্যন্ত সফল হয়েছে। দিন-রাত নদীতে টহল দিয়ে মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দেওয়া এবং ইলিশের অভয়াশ্রম সংরক্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। অভিযানের কারণে এবার ইলিশ প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে এবং কম দামে জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে।

গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, ‘ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সামনে জাটকা রক্ষা আরও জোরদার করা হবে। যারা প্রকৃত জেলে, তাঁরা সহযোগিতা করেছেন। কিছু অসাধু জেলে নদীতে মাছ ধরেছেন, তাঁদের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে নেমেছি। আমরা যেভাবে প্রচার চালিয়েছি, প্রকৃত জেলেরা উদ্বুদ্ধ হয়েছেন তাতে। যার কারণে তাঁরা নদীতে নামেননি। আশা করি, জেলেরা নদীতে নেমে ইলিশ পাবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত