Ajker Patrika

অভিনয়ের ৫০ বছরে আলমগীর

আপডেট : ২৪ জুন ২০২২, ১১: ৫৩
অভিনয়ের ৫০ বছরে আলমগীর

যেভাবে হলো শুরু
পরিচালক আলমগীর কুমকুমের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা একটি ফটোস্টুডিওতে। আমি ছবি আনতে গিয়েছিলাম। আমার ছবি দেখে তিনি জানতে চাইলেন, সিনেমায় কাজ করতে চাই কি না। আমি কোনো উত্তর না দিয়েই চলে আসি। দ্বিতীয়বার যখন দেখা হয়, তিনি বাসাভাড়া নিতে এসেছিলেন আমাদের ওখানে, সেখানে একটি চলচ্চিত্রের অফিস করতে চান। আমি চলচ্চিত্রের অফিস শুনে ভাড়া দেব না বলে দিই। তখন তিনি আমাকে আবারও চলচ্চিত্রে কাজ করতে বলেন। 
এবার বিষয়টি নিয়ে আমি পরিবারের সঙ্গে কথা বলি। মুক্তিযুদ্ধের সিনেমার কথা শুনে সম্মতি পেলাম পরিবার থেকে। একদিন তেজগাঁওয়ে উনার অফিসে গিয়ে কথা বললাম। কিছুক্ষণ কথা বলার পর জানালেন, আমাকে দিয়ে হবে না। কারণ আমার উচ্চারণে আঞ্চলিক টান আছে। উচ্চারণ ঠিক করে পরের সপ্তাহে আবার যাই। এক সপ্তাহের চেষ্টার পর আমার উচ্চারণ শুনে আলমগীর কুমকুম হেসে বলেন, ‘এক সপ্তাহের চেষ্টায় যে ভাষা চেঞ্জ করতে পারে, সে অবশ্যই চলচ্চিত্রের জন্য উপযুক্ত।’

প্রথম শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা 
প্রথমে শুটিং করতে যাই মহেরায়। সেখানে নায়করাজ একটি রুম পেলেন থাকার জন্য। কবরী ম্যাডাম রুম পেলেন, সবাই সবার মতো জায়গা নিয়ে শুয়ে পড়লেন। আমি আর ক্যামেরাম্যান মাহফুজ কোনো থাকার জায়গা পেলাম না। তখন ম্যানেজার গিয়ে কুমকুম স্যারকে বিষয়টি জানালে আমাদের দুজনকে বারান্দায় খড় বিছিয়ে শুতে দেওয়া হলো। আমরা সেখানেই ঘুমিয়েছিলাম। কবরী ম্যাডাম কুমকুম স্যারের কাছে জানতে চাইলেন কেন আমাদের বারান্দায় শুতে দিলেন! উত্তরে তিনি বলেন, এভাবে কষ্ট করে যদি চলচ্চিত্রে কাজ করতে পারে তাহলে থাকুক, নাহয় চলে যাক। যদি থাকতে পারে, তবেই চলচ্চিত্রের জন্য কিছু করতে পারবে। আমি চলচ্চিত্রের জন্য কী করতে পেরেছি জানি না, কিন্তু আমি মানুষ হতে পেরেছি। এখানে কাজ করতে না পারলে হয়তো অন্য কোনো কাজ করতাম, কিন্তু মানুষ হতে পারতাম কি না; জানি না।

সাফল্যের সূত্র
যেকোনো ক্ষেত্রে সফলতা পেতে সাধনার বিকল্প নেই। কাজ করতে হবে সিনসিয়ারলি। ছোটবেলা থেকে একটি জিনিস জেনেছি, আর তা হলো—গাছ যত বড় হয়, গাছের ডালপালা তত ঝুঁকে যায়। সাধনা হলো সাফল্যের সবচেয়ে বড় সোপান। সাধনা, একাগ্রতা, নিষ্ঠা—এ সবকিছু মিলিয়ে হলো সাফল্য।

রাশভারী নই
সবাই মনে করে আমি খুব রাশভারী লোক। আসলে তা নই। সময়োপযোগী একজন মানুষ। যখন যেখানে যেমন পরিস্থিতি থাকে, আমি সেই পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারি। মানুষের সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারি। আমার সম্মানবোধ অনেক বেশি। যেখানে আমার সম্মান থাকবে না মনে হয়, সেখান থেকে সব সময় দূরে থাকি।

নতুন প্রজন্মের প্রতি
নতুন প্রজন্মকে বলব, তোমরা সাধনা করো। চলচ্চিত্রকে আগে ভালোবাসো আর নিজের মধ্যে ধারণ করো। চলচ্চিত্র এমন একটি জায়গা, যেখানে অর্থের পেছনে ছুটলে নিজে এবং চলচ্চিত্র ধ্বংস হবে। আর চলচ্চিত্রকে সাধনা ও ভালোবাসা দিয়ে ধারণ করলে অর্থ তোমাদের পেছনে ছুটবে। এতে তোমাদের ও চলচ্চিত্রের উন্নয়ন হবে।

জানা-অজানা

  • ১৯৫০ সালের ৩ এপ্রিল ঢাকায় জন্ম আলমগীরের। বাবা কলিম উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে দুদু মিয়া ছিলেন ঢালিউডের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর অন্যতম প্রযোজক।
  • আলমগীরের পুরো নাম মহিউদ্দিন আহমেদ আলমগীর। ব্যক্তিজীবনে তাঁরা ৩ ভাই ২ বোন।
  • মোবাইল ফোনের ওয়ালপেপারে সব সময়ই প্রথম সিনেমা ‘আমার জন্মভূমি’র স্থিরচিত্র রেখে দেন তিনি।
  • প্রথম সিনেমা মুক্তির আগেই ‘দস্যুরানী’, ‘অতিথি’, ‘মমতা’ ও ‘হীরা’ সিনেমায় কাজ শুরু করেন।
  • ১৯৭৩ সালের ২৪ অক্টোবর, ঈদের দিন বড় পর্দায় অভিষেক হয় তাঁর। একসঙ্গে দুটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল—‘আমার জন্মভূমি’ ও ‘দস্যুরানী’।
  • মাত্র ২২ বছর বয়সে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন আলমগীর।
  • ১৯৮৫ সালে ‘মা ও ছেলে’ চলচ্চিত্রের জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
  • দেশের অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে ৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ আজীবন সম্মাননা পদক পাওয়ার রেকর্ড একমাত্র তাঁরই রয়েছে।
  • ১৯৮৯ থেকে ১৯৯২ টানা চার বছর শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে নতুন এক রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি, যা আজও ভাঙতে পারেননি কেউ।
  • আলমগীর ছয়টি সিনেমা পরিচালনা করেছেন। তাঁর পরিচালিত সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘নির্মম’, ‘নিষ্পাপ’, ‘বউ মা’, ‘মায়ের দোয়া’ উল্লেখযোগ্য।
  • প্রযোজনাও করেন আলমগীর। তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম আইকন এন্টারটেইনমেন্ট।
  • বাংলাদেশে জুটি হিসেবে আলমগীর-শাবানা সবচেয়ে বেশি (১০৬টি) সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
  • সিনেমায় রোমান্টিক দৃশ্যে অভিনয় করলেও বাস্তব জীবনে শাবানা ও আলমগীর দুজন দুজনকে ‘আপনি’ করে সম্বোধন করেন।
  • দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর পরিচালনায় সর্বাধিক সংখ্যক (৩০টিরও বেশি) সিনেমায় অভিনয় করেছেন আলমগীর।

রুনা লায়লাঅভিনয়ে তাঁর এখনো প্রবল আগ্রহ
রুনা লায়লা, সংগীতশিল্পী ও আলমগীরের জীবনসঙ্গী

আলমগীর সাহেব ওয়ান অব দ্য ফাইনেস্ট অ্যাক্টর অব বাংলাদেশ। শুরু থেকেই আমি তাঁর অভিনয়ের ভীষণ ভক্ত। তিনি খুব ন্যাচারাল অ্যাক্টিং করেন। পুরোনো সিনেমাগুলো এখনো যখন দেখি, আমার কাছে তাঁর অভিনয় ফ্রেশ মনে হয়। আমার মনে হয়, এখনো ভালো স্ক্রিপ্ট পেলে, তিনি ভালো করবেন। কারণ অভিনয়ে তাঁর এখনো প্রবল আগ্রহ। 
একদিন ঢাকার একটি সিগন্যালে গাড়ি থামার পর আমার কাছে এসে একটি ছেলে সালাম দিয়ে বলল, ‘ম্যাডাম, আমি একসময় ভিক্ষা করতাম। কিন্তু একদিন স্যার আমাকে পথে পেয়ে কিছু টাকা দিয়েছিলেন। সেটা দিয়ে ভিক্ষা ছেড়ে আমি এখন টুকটাক ব্যবসা করছি। স্যার আমার জীবন বদলে দিয়েছেন।’ এই ঘটনা আমি আগে জানতাম না। আমি চাই, মানুষ হিসেবে তাঁর সঠিক মূল্যায়ন হোক, অভিনেতা হিসেবে তাঁকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো হোক।

ববিতামানুষ হিসেবে আলমগীর ভাই অপূর্ব
ববিতা, অভিনেত্রী

অভিনয়ে ৫০ বছর পূর্ণ করা একজন শিল্পীর জন্য বিরাট ব্যাপার। কিছুদিন আগে আমার জীবনেও এ সময়টি এসেছিল। মানুষ হিসেবে আলমগীর ভাই অপূর্ব। সব সময়ই শিল্পীদের খোঁজখবর রাখেন। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল তাঁর প্রযোজিত ‘ঝুমকা’ ও ‘নির্দোষ’ সিনেমায় অভিনয় করার। বেশ কিছু সিনেমায় আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। আমার প্রযোজিত ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ সিনেমায় অভিনয় করে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। অথচ এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি কোনো সম্মানী নেননি। বরং আমার সিনেমাটি যাতে ভালোভাবে শেষ হয়, সে জন্য নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। এমন মহান মানুষের অভিনয়জীবনের সুবর্ণজয়ন্তীতে আমার শ্রদ্ধা, সম্মান, শুভেচ্ছা।

আঁখি আলমগীরআমার বাবাই সেরা নায়ক
আঁখি আলমগীর, সংগীতশিল্পী ও আলমগীরের মেয়ে

বাবা হিসেবে তাঁকে যখন যেভাবে প্রয়োজন, সেভাবেই পেয়েছি। ছোটবেলায় তিনি খুব কঠোর ছিলেন আর এখন বন্ধুর মতো। ছোটবেলায় আমাদের তিন ভাইবোনের আস্থার জায়গা ছিলেন আমাদের বাবা। এত সৎমানুষ জীবনে খুব কম দেখেছি। তাঁকে কখনো কাউকে নিয়ে হিংসা করতে দেখিনি। কাউকে নিয়ে নিন্দা, মন্দ সমালোচনা—এসব থেকে আব্বু দূরে থাকার চেষ্টা করেন। নায়ক হিসেবে আমি কারও সঙ্গেই তুলনা তাঁর করব না। আমি বলব, আমার বাবাই সেরা নায়ক। তবে দর্শক হিসেবে আমার একটি অভিযোগ আছে—বাবার মতো এমন একজন শক্তিমান অভিনেতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না, এটা এক অর্থে দর্শকদের ঠকানো হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত