Ajker Patrika

‘আমাদের আলোকবর্তিকা’ নিভে গেলে পরে...

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ০৫
‘আমাদের আলোকবর্তিকা’ নিভে গেলে পরে...

মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন তাঁর স্বামী ও ছোট ভাই। তবে থেমে যাননি শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী; বরং আরও সোচ্চার হন। হয়ে ওঠেন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শব্দসৈনিক। ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, নারীনেত্রী ও সাহিত্যিক। প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামের সোচ্চার কণ্ঠ। চট্টগ্রামে তাঁর পরিচিতি ছিল প্রগতিশীল চেতনার বাতিঘর হিসেবে। চট্টগ্রামের মানুষ তাঁকে ভালোবেসে ডাকতেন ‘আমাদের আলোকবর্তিকা’ বলে। সেই আলোকবর্তিকা নিভে গেলে পরে নেমে আসে শোকের ছায়া। তাঁর অভাব ভীষণভাবে বোধ করছে নাগরিক সমাজ।

চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী ও নাগরিক আন্দোলন-সংগ্রামের সামনের সারির মহীয়সী নারী শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী (৮৩) গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক (সিএমএইচ) হাসপাতালে মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি ও রক্তে সংক্রমণসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।

মুশতারী শফীর জন্ম ১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস ফরিদপুরে। ষাটের দশকে তিনি চট্টগ্রামে ‘বান্ধবী সংঘ’ নামে নারীদের একটি সংগঠন করেন। এ সংগঠন থেকে তিনি ‘বান্ধবী’ নামে একটি নিয়মিত পত্রিকা প্রকাশ করেন ও ‘মেয়েদের প্রেস’ নামে ছাপাখানা চালু করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৭ এপ্রিল তাঁর স্বামী চিকিৎসক মোহাম্মদ শফী ও ছোট ভাই এহসানুল হক আনসারীকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হত্যা করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে শব্দসৈনিক হিসেবে কাজ করেন মুশতারী শফী।

নব্বইয়ের দশকে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন জোরদার হলে মুশতারী শফী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠনেও ভূমিকা রাখেন। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের প্রয়াণের পর দেশজুড়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনে মাঠে নামেন তিনি।

আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি মুশতারী শফী কলমও চালিয়ে গেছেন সমানতালে। স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি একাধিক গ্রন্থ লিখেছেন। মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৬ সালে তাঁকে ফেলোশিপ দেয় বাংলা একাডেমি। ২০২০ সালে পান বেগম রোকেয়া পদক।

মুশতারী শফীর প্রস্থানে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)। গতকাল সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, চট্টগ্রামের সব প্রগতিশীল আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন শহীদ জায়া মুশতারী শফী। তাঁর মৃত্যুতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা কখনো পূরণ হওয়ার নয়।

বিশিষ্ট নারীনেত্রী, শহীদজায়া, উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সভাপতি বেগম মুশতারী শফীর মরদেহে আজ সকাল ১১টায় ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ও জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল বুধবার সকাল ৯টায় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর মরদেহ আনা হবে। এরপর দুপুর ১২টায় জামাআতুল ফালাহ মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তীতে তাঁকে পরিবার কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে দাফন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত