Ajker Patrika

‘মাইরের ওপর ওষুধ নাই’

সম্পাদকীয়
‘মাইরের ওপর ওষুধ নাই’

ওপরের কথাটা শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। চলচ্চিত্রে তো ব্যবহার হয়ই, বাস্তব জীবনেও এই শব্দমালা উচ্চারণ করে মাস্তানি করার দৃষ্টান্ত কম নয়। কিন্তু এই বারোয়ারি ভাষা যখন নির্বাচনে দলীয় প্রতীক পাওয়া প্রার্থীর হয়ে প্রচারণা চালানোর সময় মতবিনিময় সভা চলাকালে কোনো ছাত্রলীগ নেতা ব্যবহার করেন, তখন তা আর সাধারণ কথা হয়ে থাকে না। বরং কথাটি তখন অন্য প্রার্থীদের ওপর সরাসরি হুমকি হিসেবেই বিবেচিত হয়।

ছাত্রলীগের নেতাদের উচিত ছাত্রলীগের ইতিহাস পড়া। এই ছাত্রসংগঠনের নেতারা বিরুদ্ধ আবহের মধ্যে কীভাবে আন্দোলন করে, ত্যাগ শিকার করে সংগঠনটিকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছেন, সে কথা জানা থাকলে মতবিনিময় সভায় কোনো ছাত্রলীগ নেতা এ রকম ভাষা ব্যবহার করতে পারতেন না। নরসিংদী-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় আহসানুল হক রিমন নামে এক ছাত্রলীগ নেতা এই হুমকি দেন।

আমরা বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনে শিষ্টাচারবহির্ভূত নানা আচরণ করতে দেখেছি। গণতান্ত্রিক মনমানসিকতার চর্চা না থাকলে শিষ্টাচার বিষয়টিই অনেক সময় অনেকের জীবনে অজ্ঞাত থাকে। এই ‘অনেক’-এর মধ্যে ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরাও পড়েন। একটি সংগঠনে যোগ দিলে সেই সংগঠনের নিয়মকানুন রপ্ত করা খুব দরকার। যাঁরা পুরোনো কর্মী, তাঁরা নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন কর্মীদের গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি শেখাবেন, সেটাই কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, গণতান্ত্রিক আচরণের চেয়ে পেশিবহুল আচরণের মাধ্যমেই কেউ কেউ দলের কণ্ঠস্বর হতে চাইছেন। শুরুতেই এ ধরনের ঔদ্ধত্যকে বিনাশ করতে না পারলে ছাত্রসংগঠনগুলোও হয়ে ওঠে লাগামহীন। তখন পেশিশক্তিকেই কেউ কেউ ভেবে বসতে পারেন মুশকিল আসানের একমাত্র তরিকা। আলোচ্য ছাত্রলীগ নেতাও হয়তো সেই শক্তিতে বলীয়ান হয়েই কথা বলতে ভালোবাসেন।

পরস্পরবিরোধী ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যেও একসময় যথেষ্ট ভদ্র সম্পর্ক ছিল। ১৯৬২ সালে আইয়ুবের তখ্‌তে-তাউস কাঁপিয়ে দিয়েছিল ছাত্ররাই। সে সময় ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন কিন্তু ছাত্রশক্তি আর এনএসএফকেও নিয়েছিল আন্দোলনে। তারা একসঙ্গে বৈঠক করেছে।

তখন পর্যন্ত ছাত্রসংগঠনগুলোর সম্পর্ক সাপে-নেউলে হয়ে ওঠেনি। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ করে সব ছাত্রসংগঠন একযোগে আন্দোলন করেছে। বাষট্টির আন্দোলনের পথ ধরে উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানেও রয়েছে ছাত্রসংগঠনগুলোর মিলিত যাত্রার উদাহরণ। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদের মধ্যেও পারস্পরিক দূরত্ব যেমন বেড়েছে, তেমনি নিজ সংগঠনের মধ্যেও বিভেদ বেড়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই দলীয় প্রতীকের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের যেকোনো নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন বলে ঘোষণা দিলেও যখন ছাত্রলীগের কোনো নেতা বলেন, ‘স্বতন্ত্র-মতন্ত্র আমরা চিনি না, মাইরের ওপর ওষুধ নাই’, তখন বুঝতে হয়, গণতন্ত্রের প্রতি বিন্দুমাত্র আস্থা নেই এই নেতার।

এই নেতাদের গণতন্ত্রের সবক দেওয়ার দায় কিন্তু সংগঠনের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের ওপর বর্তায়। তাঁরা এই নেতার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চাকরির নামে মিরপুর-শেওড়াপাড়ায় বাসায় ডেকে নারীর সঙ্গে ভিডিও ধারণের পর টাকা হাতিয়ে নিত ‘হানি ট্র্যাপ’ চক্র

দনবাস চান পুতিন—ন্যাটো তো নয়ই, পশ্চিমা সেনাও থাকবে না ইউক্রেনে

দুস্থদের ৩৪ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা মোহনগঞ্জ সমাজসেবা কর্মকর্তা

ফরিদপুরে চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে সেবা বন্ধের ঘোষণা

তথ্য যাচাইয়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করবেন—ইউটিউব চ্যানেলে সিইসির বার্তা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত