Ajker Patrika

প্রভাব বিস্তার সম্পর্কের মাধুর্য নষ্ট করে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
প্রভাব বিস্তার সম্পর্কের মাধুর্য নষ্ট করে

প্রশ্ন: সাত বছর আগে আমার বোনের স্বামীর সঙ্গে রাজশাহীর এক মেয়ের ফেসবুকে পরিচয় হয়। ঠিক দুই বছর পর তিনি আমার বোনকে তালাক দিয়ে ওই মেয়েকে বিয়ে করেন।

এ ঘটনার পর থেকে ছেলেদের বিশ্বাস করতে আমার কষ্ট হয়। আমি বিয়ে করেছি ছয় মাস হয়েছে। আমি আমার স্বামীকে শর্ত  দিয়েছি, তার ফেসবুকের বন্ধুতালিকায় যেন কোনো মেয়ে না থাকে। কিন্তু সে এ কথা মানতে চায় না। এ নিয়ে আমাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হয়। সে অফিস থেকে বাসায় ফিরলেই আমি তার মোবাইলের কললিস্ট, মেসেজ, ফেসবুক চেক করি। তবে, কোনো সময় সন্দেহজনক কিছু দেখিনি। বাড়িতে না থাকলে আমার মনে হয় সে অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে কথা বলছে। তখন আমার খুব অস্থির লাগে। আমি মানসিক চিকিৎসকের কাছে গেলে কি আমার কোনো সমাধান হবে?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ঝাউতলা, কুমিল্লা

পরামর্শ: মানসিক চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করলে লাভ হবে কি না, এই প্রশ্ন নির্দেশ করছে আপনি ধরতে পারছেন, আপনি যে অসুবিধায় আছেন তার উৎস হয়তো আপনার ভেতরেই আছে। বোনের বিবাহবিচ্ছেদকে আপনি নেতিবাচকভাবে ধরে নিয়ে সব ছেলেকে অবিশ্বাস করা শুরু করেছেন। স্বামীর সামাজিক জীবনযাপনে আপনি কঠোর নিয়মকানুন আরোপ করেছেন। আপনি যে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, এগুলো তারই উপসর্গ মাত্র।

বিয়ে একটি সামাজিক সম্পর্ক, যা আমাদের সাংস্কৃতিক কাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একটি স্বাভাবিক জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য নয়। দুজন মানুষের মধ্যে বোঝাপড়া আর যথাযথ আদান-প্রদানের মাধ্যমে একটি সম্পর্ক তৈরি হয়। যেকোনো সম্পর্কই দুজন মানুষের মধ্যে ঘটে। কিন্তু সব সম্পর্কের ক্ষেত্রেই দুজন মানুষ সব সময় দুটি পৃথক সত্তা। নিজের মতো থাকতে চাওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এখানে একজন আরেকজনকে খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে চাইলে, বিরক্তি বোধ হয়। সম্পর্কের মাধুর্য নষ্ট হয়ে যায়। কড়াকড়ি আরোপ করে কোনো সম্পর্কই সুস্থ রাখা যায় না।

তাহলে প্রশ্ন আসে, কেন একজন তার সম্পর্কের মানুষের সঙ্গে এত নিবিড়ভাবে জড়াতে চায়, তার সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ পেতে চায়? এই চাহিদার একটা কারণ হতে পারে, ব্যক্তির নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা। 
আপনি একজন কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টের কাছে কাউন্সেলিং সেবা নিতে পারেন। তিনি আপনার সামগ্রিক অসুবিধার মূলে কী আছে, তা বুঝতে সহযোগিতা করতে পারেন। 

প্রশ্ন: আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। আমি দীর্ঘদিন ধরে কোনো কথার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দিতে পারছি না; বিশেষ করে কোনো অভিযোগের ক্ষেত্রে উত্তর দিতে আমার মধ্যে বেশ অনীহা কাজ করে। এ কারণে সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক, পারিবারিক-সব ক্ষেত্রেই হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়। এ কারণে প্রায়ই নিজের মধ্যে হীনম্মন্যতা কাজ করে। প্রায় চার বছর ধরে নিজের মধ্যে এ সমস্যা উপলব্ধি করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, রাজশাহী।

পরামর্শ: চার বছর আগে আপনি ভালোভাবে প্রতিক্রিয়া দিতে পারতেন কি না, জানলে ভালো হতো। প্রতিক্রিয়া বলতে কি আপনি স্বাভাবিক কথোপকথনকে বোঝাচ্ছেন, নাকি নিজের মতামত সঠিক জায়গায় সঠিকভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হচ্ছেন, সেটা পরিষ্কার হওয়া দরকার। পারস্পরিক যোগাযোগ করতে গিয়ে আপনি উদ্বিগ্নতায় ভুগতে পারেন। এর পেছনে থাকতে পারে ‘অন্যদের দ্বারা প্রত্যাখ্যান’ এবং ‘অন্যের দ্বারা বিচার’ হওয়ার ভয়। এসব কারণে অন্যের সঙ্গে কথা বলার সময় অস্থিরতা বোধ হয়, ভয় লাগে। এ ছাড়া কথা বলা নিয়ে অতীতের কোনো নেতিবাচক অভিজ্ঞতা, বর্তমান সমস্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

সামাজিক যোগাযোগের উদ্বিগ্নতা মোকাবিলার কৌশল মানুষভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। আপাতত আপনি শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের মাধ্যমে উদ্বিগ্ন পরিস্থিতিতে নিজের শরীর ও মনকে শিথিল করতে পারেন। অপরিচিত পরিবেশে বা জটিল পরিস্থিতিতে কথা চালাতে বেশি অসুবিধা হতে পারে। তাই স্বল্প পরিসরে মেলামেশা শুরু করতে পারেন। ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করে সেগুলো পূরণ করলে, নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়ে। প্রতিটি লক্ষ্য হাসিল হওয়ার পর নিজেকে পুরস্কৃত করতে পারেন। এ ছাড়া একজন পেশাদার কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টের কাছে সরাসরি সেবা নিলে লাভবান হবেন।

পরামর্শ দিয়েছেন: ড. আজহারুল ইসলাম, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট, সহযোগী অধ্যাপক, এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মৌচাকে গাড়িতে লাশ: ২৫ লাখ টাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলে জাকিরকে শ্রীলঙ্কায় নিয়েছিল দালাল

যেভাবে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর পরিকল্পনা চলছিল, স্বীকারোক্তিতে জানালেন মেজর সাদিকের স্ত্রী জাফরিন

পুলিশের এডিসিকে ছুরি মেরে পালিয়ে গেল ছিনতাইকারী

টেলিটক এখন গলার কাঁটা পর্যায়ে চলে এসেছে: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

সিন্ধু পানিবণ্টন নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় পাকিস্তানের বড় জয়: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত