Ajker Patrika

পুনরাবৃত্তি নয়

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১১ জুন ২০২২, ১১: ০২
পুনরাবৃত্তি নয়

যখন প্রশংসিত হচ্ছেন চারদিকে, তখন একদিন হুট করে লেখালেখি ছেড়ে দিলেন মাহমুদুল হক। মারা গেছেন ২০০৮ সালে, অথচ লেখালেখির পাট চুকিয়েছেন ১৯৮০ সালে। লেখালেখি ছেড়ে দেওয়ার পর আর আক্ষেপও করেননি। এমনকি না লিখতে লিখতে বানানও ভুল করা শুরু করলেন। চিঠিপত্র লেখাতেও এল অনীহা। অথচ ‘জীবন আমার বোন’, ‘কালো বরফ’সহ বইগুলো এখনো সুখপ্রদ বিস্ময় সৃষ্টি করে চলেছে পাঠকের মনে।

কেন লেখা ছেড়ে দিয়েছেন, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে, ‘আমার আর লিখতে ভালো লাগেনি।’

তাঁকে নিয়ে পাঠকের কৌতূহল অনেক। কিন্তু খুব যে মুখ খুলতেন, এমনো তো নয়। সমসাময়িক লেখকদের, বিশেষ করে কথাশিল্পীদের লেখা পড়তেন খুব কম। প্রায় পড়তেনই না। তিনি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি বইয়ে পড়েছিলেন, মানিক কারও বই পড়েন না। অন্যের লেখা পড়লে সে লেখার একটা ছাপ নিজের লেখায়ও চলে আসতে পারে। তাই মাহমুদুল হক নিজে কথাসাহিত্যের মানুষ বলে কবিতা পড়তেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় একটা গল্প লিখেছিলেন, সে গল্পটা জগদীশ গুপ্ত লিখেছিলেন আরও আগে। মানিক সে গল্প দিয়েই প্রভাবিত হয়েছিলেন। মানিকের লেখা নকল করে লেখককুল কূল পায় না, সেই মানিকও কিনা প্রভাবিত হয়েছিলেন জগদীশ গুপ্তের দ্বারা!

মাহমুদুল হকদের পারিবারিক ব্যবসা ছিল জুয়েলারির। দামি পাথর বিক্রি করতেন তাঁরা। তিনি যে লেখালেখি করেছেন, তা দোকানে দাঁড়িয়েই করেছেন। ৭-৮-১০ দিনে লিখে ফেলেছেন এক একটা বই। শুধু ‘জীবন আমার বোন’ ছাড়া। তিন মাস ধরে এ বইটি লিখেছেন বাড়িতে বসে।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে পড়তে গিয়ে তাঁর লেখা জটিল বলে মনে হয়েছে। হাসান আজিজুল হকের লেখা পড়ে মনে হয়েছে, একেবারে হিউমার নেই।

তাহলে কি অন্য কারও লেখার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে লেখা ছেড়েছেন? না, সেটাও নয়। মাহমুদুল হক মনে করেন, তাঁর স্টক কম এবং নতুন কিছু বলার নাম থাকলে পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। সেটা এড়ানোর জন্যই লেখালেখি ছেড়ে দেওয়া!

সূত্র: নাসির আলী মামুন, তর্ক বাংলা, পৃষ্ঠা ১৪৩-১৪৫

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত