Ajker Patrika

দারিদ্র্য বিমোচনে করজে হাসানা

মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২২, ০৯: ৪৪
দারিদ্র্য বিমোচনে করজে হাসানা

আল্লাহ তাঁর হেকমত অনুসারে আর্থিকভাবে মানুষকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমিই মানুষের মধ্যে পার্থিব জীবনে তাদের জীবিকা বণ্টন করেছি এবং এ ক্ষেত্রে একজনকে অপরজনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি, যাতে একে অন্যের মাধ্যমে কাজ করিয়ে নিতে পারে।’ (সুরা জুখরুফ: ৩২) তবে অর্থনৈতিক এই বিভাজন যেন কোনোভাবেই ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যে পরিণত না হয় এবং পৃথিবীর সম্পদ কেবল ধনীদের মধ্যে পুঞ্জীভূত হয়ে না পড়ে, এর জন্য ইসলাম একটি সুন্দর অর্থব্যবস্থা প্রণয়ন করেছে। আল্লাহ বলেন, ‘ধন-ঐশ্বর্য যেন কেবল তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যেই পুঞ্জীভূত না হয়।’ (সুরা হাশর: ৭) ইসলামি অর্থব্যবস্থার সুন্দর একটি দিক হলো করজে হাসানা।

করজে হাসানার ফজিলত
যে ঋণে কোনোরূপ সুদের সংশ্লিষ্টতা নেই এবং ঋণগ্রহীতার অবস্থার প্রতি লক্ষ রেখে ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে তার প্রতি ছাড়ের মানসিকতা রাখা হয়, তা-ই ইসলামে করজে হাসানা বা পুণ্যময় ঋণ। পবিত্র কোরআনের পাঁচটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা করজে হাসানের ফজিলত বর্ণনা করেছেন। যথা—

১. ‘এমন কে আছে, যে আল্লাহকে পুণ্যময় ঋণ দেবে? তিনি তার জন্য তা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেবেন।’ (সুরা বাকারা: ২৪৫)

২. ‘আমি তোমাদের সঙ্গে আছি; যদি তোমরা নামাজ পড়ো, জাকাত দাও, আমার রাসুলদের প্রতি ইমান আনো, তাদের সম্মান করো এবং আল্লাহকে পুণ্যময় ঋণ দাও, তবে তোমাদের পাপ অবশ্যই মাফ করব এবং তোমাদের জান্নাতে দাখিল করব, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত।’ (সুরা মায়িদা: ১২)

৩. ‘কে আছে এমন, যে আল্লাহকে পুণ্যময় ঋণ দেবে? তাহলে তার জন্য তিনি তা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন এবং তার জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।’ (সুরা হাদিদ: ১১)

৪. ‘দানশীল পুরুষ, দানশীল নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেয়, তাদের বহুগুণ বেশি দেওয়া হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।’ (সুরা হাদিদ: ১৮)

৫. ‘যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণদান করো, তিনি তোমাদের জন্য তা বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন এবং তিনি তোমাদের ক্ষমা করবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী, ধৈর্যশীল।’ (সুরা তাগাবুন: ১৭)

করজে হাসানার তাৎপর্য
প্রতি আয়াতে আল্লাহকে ঋণ দেওয়ার অর্থ হলো অভাবী ব্যক্তিকে ঋণ দেওয়া। এই ঋণের মাহাত্ম্য বোঝানোর জন্য আল্লাহ এর সঙ্গে নিজের নাম জুড়ে দিয়েছেন। (মাআরিফুল কোরআন) অসংখ্য হাদিসেও করজে হাসানার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। এক হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, মিরাজের রাতে আমি জান্নাতের একটি দরজায় লেখা দেখলাম, ‘দান-খয়রাতে দশ গুণ সওয়াব আর ঋণ প্রদানে আঠারো গুণ সওয়াব।’ আমি বললাম, ‘হে জিবরিল, ঋণ দান-খয়রাতের চেয়ে উত্তম হওয়ার কারণ কী?’ তিনি বললেন, ‘কারণ ভিক্ষুক নিজের কাছে কিছু থাকলেও ভিক্ষা চায়, কিন্তু ঋণগ্রহীতা কেবল প্রয়োজনের তাগিদেই ঋণ চায়।’ (ইবনে মাজাহ) আরেক হাদিসে তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের পার্থিব দুর্ভোগ দূরীভূত করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দুর্ভোগ দূর করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো অক্ষম ব্যক্তির ঋণ পরিশোধে সহজ করবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাত তার প্রতি সহজ করবেন।’ (মুসলিম)

প্রচলিত সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থা দারিদ্র্য বিমোচনের নামে যে ঋণ দেয়, এর মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন হওয়া তো দূরের কথা, উল্টো ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য দিন দিন আরও বাড়ছে। অতএব, দেশে সুদভিত্তিক ঋণব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে করজে হাসানার আদর্শ ব্যবস্থা গড়ে উঠলে তা দারিদ্র্য বিমোচনে ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

মুফতি আবু আবদুল্লাহ আহমদ, ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তানের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার সামনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ভারত: ব্রিটিশ বিশ্লেষক

কী লিখেছিলেন মাহফুজ আলম, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ডিলিট করলেন কেন

প্রশাসনিক আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ ভুল, আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধ সঠিক: বিএনপি

প্রথম ভাষণে গাজা প্রসঙ্গে যা বললেন পোপ লিও চতুর্দশ

এবার ‘পাকিস্তানপন্থার’ বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলেন আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত