Ajker Patrika

ক্রান্তিকাল কাটবে কবে?

অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২২, ০৯: ৫৩
ক্রান্তিকাল কাটবে কবে?

আমরা একটা ক্রান্তিকালে আছি! আরও স্পষ্টভাবে বললে, আমরা একটা মনোসামাজিক ক্রান্তিকালের ভেতর দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব পার করছি। কি হচ্ছে?

আমাদের মস্তিষ্কের ধূসর কোষে কোষে এখনো এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক, মনোসামাজিক, আধ্যাত্মিক, ধর্মীয় ইত্যাদি মূল্যবোধ কাজ করে, যা আমাদের বেড়ে ওঠার ধাপে ধাপে মগজের খাঁজে খাঁজে গুঁজে আছে।

নিজস্ব সংস্কৃতিকে বাদ দিলে একজন মানুষের চিন্তা-চেতনার অনেকটুকুই অসম্পূর্ণ থাকে! তাই না? কারণ, মানুষ তো সামাজিক জীব।

বিয়ে একটি সামাজিক চুক্তি। যেটাকে ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়। দুজন মানুষ যখন বিবাহিত জীবনে সুখী হন না, তখন তাঁদের সেই সম্পর্কটা থেকে বের হয়ে যাওয়ার অধিকার আছে। একবার বের হয়ে গেলে পরবর্তী সময়ে তিনি কী করবেন, এটা একান্তই তাঁর সিদ্ধান্ত।

ওপরের সম্পূর্ণটা ছিল ভূমিকা। এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। বিবাহিত সম্পর্কে থেকেও কখনো কখনো মানুষ আরেকটি বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। চলতি কথায় যাকে পরকীয়া বলে।

প্রথমেই মনে রাখা দরকার, বিবাহিত সম্পর্কটিতে নিশ্চয়ই কিছু একটা ফাঁক আছে, না হলে পরকীয়া শুরু হতো না। এবার একটু মিষ্টি খাওয়ার আশায় যখন পরকীয়া শুরু হলো, তখন মনে রাখা দরকার, প্রতিটা সম্পর্কের একটু নির্দিষ্ট দাবি থাকে। কাজেই দিনে দিনে এই পরকীয়ার শারীরিক, মানসিক, সামাজিক দাবি বাড়তে থাকবে।

তখন আর এক পলকের একটু দেখায় কাজ হবে না। তখনই মানুষ অধিকারের বিস্তৃতি দাবি করে। দুজনের দাবিটি যদি সমান সমান হয় তাহলে দুজন অবস্থা বুঝে সামাল দিতে পারেন।

কিন্তু সমস্যা হয়ে যায়, যখন একজনের দাবি বেড়ে যায়। অন্যজন সেটা সামাল দিতে পারেন না। ফলে দুজনেই সম্পর্কের বৃত্তের বাইরে ছিটকে পড়েন।

উল্লেখ্য, আজকের এই লেখা পরকীয়ার পক্ষে বা বিপক্ষে বলার জন্য নয়। আজকের এই লেখা নির্দিষ্টভাবে তাঁদের জন্য, যাঁরা একাধিক সম্পর্কে সম্পৃক্ত।

একবার নিজের চোখে আয়না ধরে দেখুন, এটি হিপোক্রেসি। কারণ, মানুষের একাধিক ভাইবোন, সন্তান, বন্ধু থাকতে পারে। কিন্তু মা-বাবা যেমন একজনই হন, ঠিক সে রকম মনের একান্ত সঙ্গীও একজনই হওয়ার কথা।

আপনি যদি একাধিক মানসিক সঙ্গীতে বিশ্বাসী হন, তবে আপনি বহুগামী কি না, নিজের মনের চোখে আয়নাটি নিজেই ধরুন। বহুগামিতার সব থেকে বড় সমস্যাটা কি জানেন? এর অর্থ আপনি প্রতারক। আর কেউ না জানুক! আপনি নিজে তো জানছেন!

পরকীয়ার বলি হয়ে সাংবাদিক সোহানা তুলি আত্মহত্যা করেন। রফিকুল ইসলাম রঞ্জু নামের একজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল তাঁর। রঞ্জুর সঙ্গে অভিমান করে তুলি এমন কাজ করেছেন বলে জানা গেছে। সেই ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি বিবাহিত এবং দুই সন্তানের জনক। এখানে আমার কনসার্ন শুধুই ভদ্রলোকের বাচ্চাগুলো। এখন কিছুদিন ধরে এই সম্পর্কটাকে নিয়ে গসিপ হবে, তারপর আর দশটা ইস্যুর মতো সবাই ভুলে যাবেন।

আমি শুধু ভদ্রলোকের বাচ্চা দুটোর বেড়ে ওঠার আগামী ২০ বছরের অসহায়ত্বের কথা ভাবতে বলছি, যাঁরা বহুগামী সম্পর্কে জড়াচ্ছেন, তাঁদের।

একটিবার নিজেকে ওই বাচ্চা দুটোর জায়গায় দাঁড় করান। যারা দেখে এসেছে মা-বাবার সম্পর্কহীনতা, যারা দেখেছে বাবার জন্য আরেকজনের মৃত্যু, যারা দেখছে তার সামনে অনিশ্চিত অনিরাপদ ভবিষ্যৎ।

কারণ, এই দিন দিন নয়, আরও দিন আছে...। আর দিন শেষে, ‘উই আর নট ইনডিপেনডেন্ট, উই আর ইন্টারডিপেনডেন্ট!’

লেখক: চিকিৎসক ও কাউন্সেলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অপারেশন সিন্দুর ঘিরে আলোচিত কে এই কর্নেল সোফিয়া কুরেশি

কাশ্মীরে বিধ্বস্ত বিমানের অংশবিশেষ ফরাসি কোম্পানির তৈরি, হতে পারে রাফাল

সীমান্তে সাদা পতাকা উড়িয়ে আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী

নিজ কার্যালয়ে র‍্যাব কর্মকর্তার গুলিবিদ্ধ লাশ, পাশে চিরকুট

আকাশ প্রতিরক্ষায় কে এগিয়ে, পাকিস্তান কি ভারতের আক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত