Ajker Patrika

ইটভাটায় চলে যাচ্ছে কৃষিজমির মাটি

সিঙ্গাইর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ মে ২০২২, ১৬: ০৮
ইটভাটায় চলে যাচ্ছে কৃষিজমির মাটি

মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার অনেক কৃষিজমির মাটি চলে যাচ্ছে ইটভাটায়। এর পেছনে কাজ করছে প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, এই সিন্ডিকেট প্রশাসন এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ‘ম্যানেজ’ করে সরলমনা কৃষকদের টাকার প্রলোভনে ফেলে কৃষিজমিগুলো পুকুর-ডোবায় পরিণত করছে।

জানা গেছে, উপজেলার প্রতিটি গ্রামই তিন ফসলি চাষাবাদের উপযোগী। তিন ফসলি এসব জমি থেকে প্রতিনিয়ত মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। উপজেলায় বৈধ-অবৈধ শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার প্রধান উপকরণ মাটি আসে সারা উপজেলার কৃষিজমি থেকে। এতে করে প্রতি বছরই কমছে চাষাবাদের জমি। রাতের অন্ধকারে মাটি কাটায় প্রশাসনও তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। স্থানীয় বাসিন্দারা কৃষিজমির মাটি কাটা বন্ধে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন করেও কোনো ফল পাচ্ছেন না। সম্প্রতি উপজেলার জামির্ত্তা ইউনিয়নের বাসিন্দারা একটি ভেকু মেশিন আগুনে পুড়িয়ে দেন। কিন্তু এত কিছুর পরও বন্ধ হচ্ছে না কৃষিজমি থেকে মাটি কাটা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১০ বছর আগে উপজেলায় আবাদযোগ্য জমি ছিল ১৬ হাজার ৫০০ হেক্টর। গত ১০ বছরে উপজেলায় আবাদযোগ্য জমি কমেছে ১ হাজার ১৫৫ হেক্টর। অর্থাৎ প্রতি বছরই উপজেলায় ১১৫ হেক্টর করে আবাদযোগ্য জমি কমে আসছে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় চাষাবাদের জন্য জমি পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন স্থানীয় কৃষকেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাটি ব্যবসায়ীরা এককালীন মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি জমির মাটি কিনে থাকেন। পরে সেই মাটি বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করা হয়। ভেকু মেশিনের মাধ্যমে কৃষি জমিগুলো এমন গভীর করে কাটা হয় যেন পাশের জমিটিও ভেঙে পড়ে। বাধ্য হয়ে পাশের কৃষিজমির মালিকও ব্যবসায়ীদের কাছে মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হন।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার মাটি ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম জামির্ত্তা ইউনিয়নের বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া, মিজান রামচন্দ্রপুর এলাকার মো. দানেস, আয়নাল, খোকন চান্দহর ইউনিয়নের আব্দুল মালেক, হাতনি এলাকার সিরাজুল, বলধারা ইউনিয়নের আলী হোসেন এবং বেরুন্ডি এলাকার আব্দুর রহিম।

স্থানীয় বাসিন্দা মকবুল হোসেন জানান, রামনগর এলাকার দারোগালিতে তাঁর বাড়ির পাশের কয়েক বিঘা জমিতে বোরো ধানসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ করতেন তিনি। মাটি ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়া মোটা অঙ্কের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে তাঁর কৃষি জমির মাটি ইটভাটায় বিক্রি করেন। এতে তাঁর ৩-৪ বিঘা জমি এখন পুকুর-ডোবায় পরিণত হয়েছে। জমিগুলো এমনভাবে কাটা হয়েছে যে পাশের জমিগুলোও ভারী বৃষ্টি হলে ভেঙে পড়বে।

চাপড়াইল গ্রামের বাসিন্দা প্রকৌশলী আবু সাঈম বলেন, ‘মাটি ব্যবসায়ীরা প্রথমে উপজেলা মৎস্য ও কৃষি অফিস থেকে তিন ফসলি জমিতে পুকুর করার অনুমতি নেয়। এরপর কৌশলে পুকুর খননের নাম করে ফসলি জমির মাটি বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রি করেন। তাঁদের উদ্দেশ্য পুকুর খনন নয়। ইটভাটাতে মাটি বিক্রি করাই তাঁদের উদ্দেশ্য।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিপন দেবনাথ এ বিষয়ে বলেন, ‘কৃষিজমি থেকে যারা মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। খবর পেলেই ভ্রাম্যমাণ আদালতে বসিয়ে মাটি ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হচ্ছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

পিটুনিতে নিহত সেই শামীম মোল্লাকে বহিষ্কার করল জাবি প্রশাসন, সমালোচনার ঝড়

চিন্ময় দাসের জামিন স্থগিতের আবেদন, শুনানি রোববার

মধুপুরে বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষককে জুতাপেটা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত