Ajker Patrika

বিনা ভোটের হিড়িকে ব্যতিক্রম ভেড়ামারা

বাবলু মোস্তাফিজ, ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া)
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২১, ১০: ৫৮
বিনা ভোটের হিড়িকে ব্যতিক্রম ভেড়ামারা

সারা দেশে একেবারেই ব্যতিক্রম কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা। সর্বত্র যেখানে বিনা ভোটে জেতার হিড়িক চলছে, সেখানে ভেড়ামারার ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ছয়টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। এখানে মূল লড়াই হচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক জাসদের সঙ্গে। কারণ, ভেড়ামারায় আছেন এই দুই দলের দুই হেভিওয়েট নেতা মাহবুব উল আলম হানিফ ও হাসানুল হক ইনু।

১১ নভেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে চেয়ারম্যান পদে ২৪, সংরক্ষিত নারী সদস্যপদে ৬৫ ও সাধারণ সদস্যপদে ১৯৩ প্রার্থী রয়েছেন। প্রতিটি ইউনিয়নের মোড়ে রাস্তার ধারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে।

পাশাপাশি প্রার্থীদের প্রচারণা ও পথসভা চলছে। আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন প্রার্থীরা। উপজেলার ছয় ইউনিয়নজুড়ে জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা। সন্ধ্যার পর ভিড় বাড়ছে পাড়া-মহল্লা ও বাজারের চায়ের দোকানে। প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।

জানা গেছে, জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ মাহবুব-উল আলম হানিফের বাড়ি ভেড়ামারায়। এ কারণে নির্বাচনে আলাদা উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। নেতার সম্মান রক্ষায় দুই দলের নেতারা কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন।

নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী আছেন ২৪ জন। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ছয় ও জাসদের ছয়জন। বাকিরা ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশসহ স্বতন্ত্র প্রার্থী। স্বতন্ত্রদের মধ্যে আওয়ামী লীগের তিন বিদ্রোহী প্রার্থী ও বিএনপির নেতারা রয়েছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নির্বাচনী প্রচারে নৌকার প্রার্থীরা সভা-সমাবেশ করে সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরছেন। পাশাপাশি হাসানুল হক ইনু উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছেন উল্লেখ করে তাঁর দল জাসদের সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছেন। এদিকে জোট সরকারের অপর শরিক জাসদের প্রার্থীরা তাঁদের নেতা হাসানুল হক ইনুর এলাকার উন্নয়ন ও তাঁদের চেয়ারম্যানদের দুটি ইউনিয়নের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরছেন।

এদিকে স্থানীয় সাংসদ নির্বাচিত এলাকাসহ আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানের ইউনিয়নে উন্নয়ন করেননি বলে পথসভায় অভিযোগ করছেন প্রার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে পথসভায় জাসদ নেতারা বলছেন, সাংসদের উন্নয়ন দৃশ্যমান হোক—আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যানরা কখনো সেটি চাননি। সেখানে যা উন্নয়ন হয়েছে, বর্তমান জাসদের চেয়ারম্যান প্রার্থীর কল্যাণে হয়েছে।

নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, আওয়ামী লীগ ও জাসদ নেতাদের কথার বাহাসে নির্বাচনী মাঠ ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবি করে ভোট ডাকাতি, কেন্দ্র দখল, ফলাফল পক্ষে নেওয়ার অপকৌশলের চেষ্টা করলে দাঁতভাঙা জবাব দিয়ে প্রতিহত করা হবে বলে জাসদ নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধরমপুর ও জুনিয়াদহ ইউপিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন। তাঁদের মতে, আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের অনেক নেতা মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। তাই জয়ের ব্যাপারে এ দুটি জায়গায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা চিন্তিত।

জমজমাট নির্বাচন নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ শামিমুল ইসলাম ছানা বলেন, ‘জাসদের নেতারা বাঁশের লাঠি কাটতে বলেছেন ভোট ডাকাতি ঠেকাতে। লাঠি দিয়ে কী হবে? আমরা ভোট দখল করব না। ভোট ডাকাতিতে বিশ্বাসী নই।’

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আলিম স্বপন বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কমিশন ও সরকার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমনটি হলে জাসদ মনোনীত ছয় প্রার্থীই বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের অনেক প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর মতো আচরণ করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত