Ajker Patrika

অবশেষে ‘সুন্দর’-এর কাছে

জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
অবশেষে ‘সুন্দর’-এর কাছে

ঝক্কিটা এল সাতরাস্তার মোড়ে আসার পর। হাতিরঝিল থেকে বেরিয়ে সাতরাস্তার মোড় দিয়ে ঘুরে ওভারপাসে উঠব, কিন্তু সেখানে স্থবির হয়ে গেছে যানবাহন। সেই যে এক একটা গাড়ি এসে দাঁড়াচ্ছে, আর নড়ছে না। মনে পড়ে গেল ছেলেবেলার একটি খেলার কথা, ‘নড়ে না, চড়ে না, কলাপাতার ঝুপ, ওরে সালেকা মালেকা সালামালাইকুম।’

আমরা অবশ্য এতটা বিশদে যেতাম না, বলতাম, ‘নড়ে না নড়ে না চুপ।’ ব্যস, ওটুকুতেই সবাই মূর্তি হয়ে যেত। হাসানোর কত যে চেষ্টা! কিন্তু হেসে ফেললেই শূন্য হাতে ফেরা! গাড়িতে বসে ফেরার কথা ভাবা যায় না। না সামনে, না পেছনে, কোনো দিকেই নড়ে না, চড়ে না গাড়ি। আর তখন নতুন করে চলে আসেন শাহ আবদুল করিম, ‘গাড়ি চলে না চলে না, চলে না রে, গাড়ি চলে না...’।

ঢাকা শহরের যে যানজটের ইতিহাস, তাতে কিছু সময় জ্যামে কাটবে, এ তো ললাটলিখনের মতোই মেনে নিয়েছে নাগরিকেরা। শনিবার, ৬টা ৩৫ বেজে গেছে। ৭টার মধ্যে বেইলি রোডের মহিলা সমিতি মিলনায়তনে না পৌঁছালে শুরু থেকে নাটক দেখা হবে না। আর মঞ্চনাটক শুরু থেকে না দেখলে নিজেকে কেমন গবেট মনে হয়। নাটকটি ছোঁয়া যায় অথচ ছোঁয়া যায় না বলে মনে হয়।

জানালার বাইরে এক পথচারীকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ভাই, এত ভিড় কেন, বলতে পারেন?’

‘প্রধানমন্ত্রী আইসে। এক ঘণ্টায়ও রাস্তা কিলিয়ার হইব না।’

তথ্যটি বস্তুনিষ্ঠ কি না, তা যাচাই-বাছাই করার অবকাশ নেই। শুধু মনে হচ্ছে, তাহলে কামরুন নূর চৌধুরীকে দেওয়া কথা রাখা যাচ্ছে না। দর্শকেরা যখন নাটক দেখবে, আমি তখন এই ‘এক ঘণ্টা’র জ্যামে বসে নিজেরই পিণ্ডি চটকাব।

কিন্তু হঠাৎ ভোজবাজির মতো নড়েচড়ে উঠল রাস্তাটা। এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে দ্রুতবেগে চলতে শুরু করল বাস, অটোরিকশা, মাইক্রোবাস…। লোক নাট্যদলের ৩১তম প্রযোজনা এটি। মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘সুন্দর’ নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন কামরুন নূর চৌধুরী।

নাটকটি ‘সুন্দর’ নিয়ে আবর্তিত হয়েছে। যেকোনো মানুষের ভেতরের সুন্দর নিয়ে কথা বললে সে মানুষের মন প্রশান্ত হয়ে ওঠে। আপাতদৃষ্টে খটমটে, বিদঘুটে মানুষেরাও নিজের ভেতরের সুন্দরের স্বীকৃতি পেলে হয়ে উঠতে পারেন সব দিক থেকেই সুন্দর। এই কথাগুলোই সংলাপ আর আবহের মাধ্যমে উঠে এসেছে নাটকে।

নাটকটিতে তীক্ষ্ণ সংলাপ নেই। কঠিন, প্যাঁচালো সংকট নেই। খুবই প্রশান্তি নিয়ে এগিয়ে দৃশ্যের পর দৃশ্য পার হয়। সুন্দরবিষয়ক দর্শনটি প্রয়োগ করে সমস্যার সমাধান হয়ে যায় সবখানেই।

নাটকের ব্যাকরণ ঠিকভাবে জানি না বলে একটি ব্যাপার আমার মাথায় ঢোকেনি। আমাদের মঞ্চনাটকে সংলাপ প্রক্ষেপণে একটি ধারার সৃষ্টি হয়েছে, যা কখনো কখনো কৃত্রিম বলে মনে হয়। আর যার উদ্দেশে কথা বলা হচ্ছে, তার দিকে না তাকিয়ে দর্শকদের দিকে তাকিয়ে সংলাপ বলাটাও অস্বস্তিতে ফেলে দিতে পারে দর্শককে। সংলাপ প্রক্ষেপণে আরেকটু কম নাটকীয় হলে কি আরও বেশি ভালো লাগত? তবে নাটক নির্মাণে যে পরিশ্রম ও মেধার পরিচয় পাওয়া গেছে, তা অতুলনীয়। আর মল্লিকা চরিত্রে কী সাবলীল অভিনয়ই-না করে গেলেন তানজিনা রহমান, সে কথা জানিয়ে রাখা ভালো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত আমদানির ঘোষণা দিতেই ভারতে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখামাত্র পুতিনকে গ্রেপ্তারের আহ্বান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত