Ajker Patrika

পঙ্কজ বনাম শচীন

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
পঙ্কজ বনাম শচীন

গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীরা যখন স্কুলের ছাত্র, তখন খুব মাতামাতি শুরু করলেন পঙ্কজ মল্লিককে নিয়ে। তাঁর গাওয়া ‘ও কেন গেল চলে’ গানটি কিংবা ‘আমারে ভালো আমারই লাগিয়া’ গানগুলো খুবই নাম করেছিল। হিন্দি গান ‘পিয়া মিলনকে যানা’ ভুলভাল সুরে গাইতেন নীরেনরা।

পঙ্কজ যখন গানের মধ্য গগনে, তখন খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে থাকল শচীন দেববর্মনের। ‘যদি দখিনা পবন আসিয়া ফিরে গো দ্বারে’ কিংবা ‘আলোছায়া দোলা’ গান দুটি তরুণদের ছুঁতে 
পারেনি। তবে এরপর ‘প্রেমের সমাধিতীরে নেমে’ গানটি তরুণদের মন কেড়ে নিল।

সে সময় নীরেনদের স্কুলের ক্লাসটাও বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল পঙ্কজ আর শচীনের ফ্যানদের দিয়ে। একেবারে অন্ধ ভক্ত বলতে যা বোঝায়। পঙ্কজের দল ঝগড়ার সময় বলত, ‘গান বলতে যে নাঁকি সুরের কান্না বোঝায় না, সেটা মনে রাখিস।’ শচীনের দল বলত, ‘আরে দূর দূর! হেঁড়ে গলায় কি গান হয়?’

কথায় কথায় দুই পক্ষে ঝগড়া বেধে যেত। সেই ঝগড়ায় যে ভাষা ব্যবহৃত হতো, তা কহতব্য নয়। যাঁদের নিয়ে ঝগড়া, তাঁরা তাদের ভক্তকুলের ব্যবহৃত ভাষা শুনলে নিশ্চয়ই কানে আঙুল দিতেন। সেই তর্ক যেন ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের রেষারেষির মতো। কিংবা আমাদের দেশের একসময়ের আবাহনী-মোহামেডানের দ্বন্দ্ব যেন।

ঝগড়াটা শুধু স্কুলেই সীমাবদ্ধ ছিল না। রাস্তাঘাটে, হাটেবাজারেও তা ছড়িয়ে গিয়েছিল। তবে এই ঝগড়া নিয়ে বেশ হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছিল যখন একজন কমেডিয়ান ‘মৌমাছি মৌমাছি কোথা যাও নাচি নাচি’ ছড়াটি দুজনের মতো করে গাইতেন। প্রথমে পঙ্কজ কুমার মল্লিকের মতো ভারী গলায় গাইতেন, এরপর গাইতেন শচীন দেববর্মনের মতো নাঁকি সুরে। তাতে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি যেতেন। ঝগড়া-বিবাদ মেটানোর জন্য এ ধরনের হাস্যরসের বিকল্প নেই। পঙ্কজ আর শচীনকে নিয়ে যে দ্বৈরথের সৃষ্টি হয়েছিল, এই কমিক আবহাওয়া তাকে নামিয়ে আনল মাটিতে। ঝগড়া থামিয়ে দিল। 

সূত্র: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, নীরবিন্দু ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০৫-২০৭

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সমাবেশে দলীয় স্লোগান ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে এনসিপির বিবৃতি

তোরা যারা রাজাকার, সময় থাকতে বাংলা ছাড়: ফেসবুকে বাকের মজুমদার

কঠোর হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতি, স্থায়ী বসবাসের আবেদনে অপেক্ষা ১০ বছর

যুদ্ধ বলিউডের সিনেমা নয়: ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান

রাজপথের চাপে কোনো বিচার করা সম্ভব নয়: চিফ প্রসিকিউটর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত