Ajker Patrika

গোলমরিচে নতুন আশা

নুরুল আলম, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) 
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২১, ১৭: ৪৭
গোলমরিচে নতুন আশা

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বাণিজ্যিকভাবে গোলমরিচ চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন কৃষকেরা। উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নে ৫০০ শতাংশ জমিতে গোল মরিচের চাষ শুরু করেছেন ২০ জন চাষি। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অপকা’র সহায়তায় প্রত্যেকে ২৫ শতাংশ জমিতে এই চাষ শুরু করেন।

পাহাড়ের উর্বর মাটি গোল মরিচের জন্য আদর্শ জমি। কয়লা খামারপাড়া এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে গোল মরিচ চাষ হচ্ছে। ২০১৭ সালে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ব্যবস্থাপনায় ও অপকা’র সহযোগিতায় গোল মরিচ চাষ শুরু হয়। এতে অর্থায়ন করছে ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট (আইএফডি)।

কয়লা খামারপাড়া এলাকায় শ্রীকান্ত ত্রিপুরা, দীপন ত্রিপুরা, মোকছেদুর রহমানসহ ২০ চাষি গোলমরিচ চাষ শুরু করেছেন। এ ছাড়া পূর্ব সোনাই বালুটিলা, খামার পাড়া কয়লা, পশ্চিম মসিকদার খীল, গলাচিপা কয়লা, রহমত পুর কয়লা, মুসলিম পুর, কয়লা বড়োপাড়া এলাকার পাহাড়ি আর্দ্র মাটিতে গোল মরিচের আবাদ হচ্ছে। গত সোমবার কয়লা খামারপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ৩ ফুট দূরত্বে ৮ ফুট লম্বা পিলারের একটি সারি। একটি সারি থেকে অন্যটির দূরত্ব ৭ ফুট। প্রতি পিলারে ৪-৫টি গোল মরিচের লতা বেড়ে উঠছে।

স্থানীয় চাষি সুরেশ ত্রিপুরা বলেন, ‘৫ বছরে আমরা লাভের মুখ দেখছি। গোল মরিচের চাহিদার পাশাপাশি প্রতি মৌসুমে গাছের কলমের চাহিদা বাড়ছে। আশা করি ভালো ফলন পাব।’

গোলমরিচের চারা উৎপাদন সম্পর্কে আমির হোসেন জানান, গোলমরিচের ডাল থেকে গাঁটযুক্ত কলম কেটে লাগাতে হবে। রোপণের এক থেকে দেড় মাস পর ওই কাটিং থেকে শিকড় বেরিয়ে আসবে। প্রতিটি কলম স্থানীয়ভাবে চাষিদের মাঝে ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়। বৈশাখের ১০ থেকে ১৫ তারিখ থেকে আষাঢ়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত চারা ও বীজ রোপণের উপযুক্ত সময়।

চাষি দীপন ত্রিপুরা বলেন, ‘সম্ভাবনাময় গোলমরিচ চাষে চাষিরা বিপণন ও পানির সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এ ছাড়া এলাকায় একটি নার্সারি শেড প্রয়োজন। এখন আমরা কয়লা বাজারে পাইকারি হিসেবে প্রতি কেজি গোল মরিচ ৬০০ টাকা দামে বিক্রি করে থাকি।’

অপকা’র এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের টেকনিশিয়ান অয়ন সাহা বলেন, ‘মিরসরাইতে উৎপাদিত গোলমরিচের গুণগত মান আমদানি করা গোল মরিচ থেকে অনেক ভালো। ২৫ শতাংশের প্রতিটি প্লটে ১২৫টি খুঁটিতে ৫০০টি চারা রোপণ করেছেন চাষিরা। এপ্রিল মাসে চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। রোপণের ৩ বছর পর গাছে ফুল আসে। ফুল থেকে ফলন সংগ্রহের জন্য সময় লাগে ৬ মাস। ২৫ বছর পর্যন্ত একটি মরিচ গাছ ফলন দিতে সক্ষম।’

অপকা’র নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘বিশ্ব বাজারে গোলমরিচের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া দেশের গোলমরিচের বাজার আমদানির ওপর নির্ভরশীল। একজন কৃষক ২৫ শতাংশ জমিতে গোল মরিচ চাষ করে যা আয় করবে, তার দ্বিগুণ আয় করা সম্ভব গাছের কাটিং চারা বিক্রি করে।’

পিকেএসএফের ভ্যালু চেইন স্পেশালিস্ট ড. এস এম ফারুক উল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাহাড়ি অঞ্চলে কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য গোল মরিচ এবং সাথি ফসল হিসেবে আদা-হলুদ-সবজি ও মসলাজতীয় ফসলকে বেছে নিয়েছি। কৃষকদের প্রশিক্ষণ, বীজ সরবরাহ, বিনিয়োগসহ সব সহায়তা দিয়েছি। এখন ২০টি প্রদর্শনী ফলন দেওয়া শুরু হবে। ২৫ বছর পর্যন্ত কৃষকেরা ফসল পাবেন।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ সাহা বলেন, ‘মিরসরাইয়ে আপকা নতুনভাবে গোলমরিচ চাষ করেছে। এ বছর থেকে সব খেতে ফলন দেবে। এখন কাটিং শুরু হয়েছে। মিরসরাইয়ে যদি গোলমরিচের ভালো ফলন হয়, আমরা কাটিং সংগ্রহ করে কৃষকদের গোল মরিচ চাষের জন্য প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিস আলমের শ্বশুর

কুমিল্লায় দুই ট্যাংকে পানি, তদন্ত শেষ হয়নি ১ মাসে

জিন সম্পাদনায় নতুন সাফল্য, ডায়াবেটিস রোগীদের আর ইনসুলিন নিতে হবে না

কনস্যুলেটে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হামলা, ব্যবস্থা নিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে চিঠি

ট্রাম্পের শুল্ক এড়াতে ১০৩টি বোয়িং বিমান কিনবে দক্ষিণ কোরিয়া

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত