Ajker Patrika

ঘুষ যখন পারিশ্রমিক

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ০৮: ১৪
ঘুষ যখন পারিশ্রমিক

কোনো সরকারি কর্মকর্তা যদি ঘুষকে পারিশ্রমিক বলে মনে করেন, তাহলে তাঁকে কি দোষ দেওয়া যায়? তিনি তো পারিশ্রমিক বলে মনে করছেন, ঘুষ বা উপরি বলে মানছেন না। এ রকম ‘সৎ’ ঘুষখোর কি সহজে মেলে? যাঁরা ঘুষ খান, তাঁরা তো খান গোপনে, কেউ যেন জানতেও না পারে। ডান হাতে ঘুষ খান, বাঁ হাতও যেন জানতে না পারে—এটাই থাকে তাঁদের কামনা। সেভাবে পারও পেয়ে যান। স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের কাছ থেকেও তাঁরা এই ঘুষ খাওয়ার ঘটনা লুকিয়ে রাখেন। তবে ইদানীং ঘুষ খাওয়াটা শিল্পে পরিণত হয়েছে কি না, তা আমাদের জানা নেই। কেউ ঘুষ খেয়ে লজ্জা পান, এমন বাস্তবতা বুঝি আর নেই এখন।

যাঁরা ঘুষ দেন, তাঁরাই কেবল জানেন ‘কী হারাইলাম’ এবং যাঁরা ঘুষ খান, তাঁরাই কেবল জানেন, ‘পাইলাম, ইহাকে পাইলাম!’ বাকিরা জানতে পারে পরে। যখন ঘুষদাতা একটা বিশ্রী গাল দিয়ে বলতে থাকেন, ‘শালা (একটি অশ্রাব্য গাল), কথা বলার সময় একেবারে সৎমানুষ, কিন্তু ঘুষ না দিলে কাজ হয় না!’

ঘুষ নিয়ে কত না গল্প ছড়িয়ে আছে আমাদের সাহিত্যে। এর মধ্যে সেরা হলো, এক ইংরেজের কাছে এক বাঙালি কেরানির বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেটা ব্রিটিশ আমল। কেরানি যে ঘুষ খান, এ কথা অন্য কর্মকর্তারা গিয়ে বললেন ‘সায়েব’কে; অর্থাৎ তাঁদের ব্রিটিশ বসকে। বস তো বুঝতে পারছেন না, ঘুষ মানে কী! বুঝতে পারছেন না, ঘুষ খাওয়ার মধ্যে সমস্যা কোথায়! যেহেতু আভাসে, ইঙ্গিতে বলে-কয়ে বোঝানো যাচ্ছে না, তাই সরেজমিনে ঘুষ খাওয়া দেখাতে সায়েবকে নিয়ে আসা হলো ঘুষখোরের দপ্তরে। সে সময় ঘুষখোর কেরানিকে কেউ একজন এক কাঁদি কলা ঘুষ দিয়েছেন। একেবারে ‘বমাল গ্রেপ্তার’! ‘সায়েব’কে দেখালেন তাঁরা, ‘এই যে স্যার, ঘুষ!’ ‘সায়েব’ দেখেন, এক কাঁদি কলা রয়েছে ‘ঘুষখোরের সামনে।’

সায়েব দেখেন, ভদ্রলোকের সামনে কলা। তার মানে কলাই হচ্ছে ঘুষ। তিনি উৎফুল্ল হয়ে কলা দেখিয়ে বললেন, ‘ইহা ঘুষ? ইহা তো খুবই ভালো। স্বাস্থ্যকর খাবার। ঘুষ খুব ভালো। প্রত্যেকের প্রত্যহ ঘুষ খাওয়া উচিত!’

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থেকে আমাদের প্রতিনিধি একটা ‘বেআক্কেল’ খবর পাঠিয়েছেন। তা ছাপাও হয়েছে আজকের পত্রিকার প্রথম পাতায়। আক্কেলপুর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ঘোষণা দিয়েই ঘুষ-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের অনলাইনে এমপিও ফাইল অগ্রায়ন করতেও ঘুষ দিতে হচ্ছে তাঁকে। তিনি তাকে পারিশ্রমিক বা সম্মানী বলে দাবি করছেন। এ কাজ যদি সম্মানীর বিনিময়ে করাতে হয়, তাহলে আদতে তাঁর সরকারি কাজটা কী?

‘ঘুষ’ শব্দটি যে কবে থেকে এ রকম ‘ইতিবাচক’ শব্দে পরিণত হলো, তা আমাদের জানা নেই। এই ঘুষ যদি বেআইনি হয়ে থাকে, তবে নির্দিষ্ট এই কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় আনার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু কে আনবে—এই প্রশ্নের যথার্থ উত্তর জানা নেই বলে হতাশারই জয় হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

কোটি টাকা ‘ভর্তুকি’র জিম্বাবুয়ে সিরিজে বাংলাদেশ যা পেল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত