Ajker Patrika

৫১ স্কুলে নেই প্রধান শিক্ষক

মিজানুর রহমান নয়ন, কুমারখালী (কুষ্টিয়া)
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪: ৪২
৫১ স্কুলে নেই প্রধান শিক্ষক

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় শিক্ষক সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরে ১৪৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫১ টিতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। সহকারী শিক্ষকদের পদ শূন্য রয়েছে ৪৬ টি। দপ্তরি ও কাম প্রহরীর শূন্য পদ ৩ টি।

প্রতিটি বিদ্যালয়ে ন্যূনতম চারজন শিক্ষক থাকার বিধান থাকলেও উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে রয়েছে দুই থেকে তিনজন। এতে পাঠদানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় রয়েছে ১৪৭ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর মধ্যে ৫১ টিতে রয়েছে প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য এবং সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৪৬ টিতে। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম।

এ ছাড়া কর্মরত শিক্ষকেরা বাৎসরিক নিয়মিত ছুটি, মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং পিটিআই ট্রেনিংসহ উপজেলার রিসোর্স সেন্টারে বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে থাকছেন। অনেক প্রধান শিক্ষককে ব্যস্ত থাকতে হয় দাপ্তরিক কাজে। এতে করে অনেক বিদ্যালয়ে স্বল্প শিক্ষক দিয়ে করোনাকালীন কয়েকটি শিফটে ক্লাস চালিয়ে নেওয়া হয়ে পড়েছে কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

উপজেলার পান্টি বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পীতামবরবশী, লক্ষ্মীপুর, জোতমোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ থাকলেও নেই শিক্ষক। ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধার জন্য ডেপুটেশন নিয়ে অনেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। কেউ আবার মেডিকেল ছুটি কাটাচ্ছেন বছরের পর বছর। ফলে শিক্ষক স্বল্পতায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। এ ছাড়া প্রধান শিক্ষকবিহীন স্কুলগুলোতে অন্যান্য শিক্ষকেরা যাওয়া আসা করেন ইচ্ছামতো।

স্থানীয়রা ও অভিভাবকেরা জানান, অনেক শিক্ষকই গ্রামের স্কুল থেকে শহরের স্কুলে বদলির চেষ্টায় ব্যস্ত থাকেন। যাতায়াতের সু-ব্যবস্থা থাকার পরও তাঁরা গ্রামে স্থায়ী হচ্ছেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন সহকারী শিক্ষক জানান, ৫০০ কিংবা তার চেয়েও অধিক শিক্ষার্থীকে মাত্র দু-তিন জন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করতে হয়। এতে করে পাঠদানে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। আবার শিক্ষার্থীরাও মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

পান্টি ইউনিয়নের পীতামবরবশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মশিউর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে বিদ্যালয়ে ২৩০ জন শিক্ষার্থী আছে। সাতটি শিক্ষক পদের বিপরীতে আমিসহ শিক্ষক আছে মাত্র দুজন। প্রায় বিশ বছর বিদ্যালয়ে শিক্ষক নেই। খুব বিপাকে আছি।’

যদুবয়রা ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬৭ জন। শিক্ষকের পদ আছে নয়টি, বিপরীতে শিক্ষক আছে পাঁচজন। শিক্ষকের সংকট থাকায় শিক্ষাদানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘উপজেলাতে ১৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট ৩২ হাজার ২৭৬ জন ছাত্র-ছাত্রী। এর মধ্যে ছাত্র ১৫ হাজার ৩২৯ জন এবং ১৬ হাজার ৯৪৭ জন ছাত্রী।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো সবেমাত্র খুলেছে আর আমি সদ্য যোগদান করেছি। শিক্ষক স্বল্পতায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে এমন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে যেসব বিদ্যালয়ে বেশি শিক্ষক আছে, সেখান থেকে ডেপুটেশন করে শিক্ষকসংকটে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থানাস্তর করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত