Ajker Patrika

সৈয়দপুরে ২৫৬ কিন্ডারগার্টেন!

রেজা মাহমুদ, সৈয়দপুর (নীলফামারী)
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২২, ১৫: ১৭
সৈয়দপুরে ২৫৬ কিন্ডারগার্টেন!

নীলফামারীর সৈয়দপুরে নামে-বেনামে কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হয়ে কোমলমতি শিশুরা শুরুতেই হোঁচট খাচ্ছে। অনভিজ্ঞ শিক্ষক, সঠিক সিলেবাসের অভাব ও উপযুক্ত নির্দেশনা না থাকায় মানসম্মত শিক্ষার ছিটেফোঁটা পাচ্ছে না তারা। দ্রুত এ সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়ন না হলে এ ‘শিক্ষাবাণিজ্য’ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা বয়েছে। তবে, ২০১৩ সালের শিক্ষা আইন বাস্তবায়ন করা গেলে তা বহুলাংশে বন্ধ করা সম্ভব হবে বলে জানান সৈয়দপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান হাফিজ। তিনি বলেন, এসব স্কুলে শিশুদের ওপর রীতিমতো টর্চার (নিপীড়ন) করা হচ্ছে। অথচ এর ছিটেফোঁটাও ধারণা করতে পারছেন না অসচেতন অভিভাবকেরা।

অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান বলেন, পাঠদানের অনুমোদন ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করাটা বড় ধরনের অপরাধ। অবৈধ স্কুল-কলেজগুলোতে শিক্ষার নামে বাণিজ্য হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের চিহ্নিত করে বন্ধ করে দেওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, কিন্ডারগার্টেনগুলো নিজেরাই পাঠ্যক্রম তৈরি করে এবং পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বাইরেও তিন থেকে পাঁচটি অতিরিক্ত বই পড়ায়। সে জন্য বাড়তি ফিও আদায় করা হয়। এ ছাড়া কিন্ডারগার্টেনে যে মানের শিক্ষক নিয়োগ পাচ্ছেন, তাঁদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে সব সময়ই প্রশ্ন উঠেছে।

জানা যায়, সৈয়দপুর উপজেলায় অনুমোদিত কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে ৯৪টি। এ ছাড়া কিছু এনজিও পরিচালিত কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা ৬২টি। আর বাইরে রয়েছে আরও প্রায় ১০০টি। এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করছে প্রায় দেড় লাখ কোমলমতি শিক্ষার্থী। সারা বছরই শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজেদের তৈরি করা সিলেবাসে পাঠ দেওয়া হয়। বাড়ি কিংবা রুম ভাড়া নিয়ে চলে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম। স্কুলগুলোতে শিশুদের খেলাধুলা কিংবা সমাবেশের জন্য নেই কোনো মাঠ। শ্রেণিকক্ষ ছোট হওয়ায় শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসতে হয়।

শহরের গোলাহাট এলাকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানান, সে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছে সেখানে সপ্তম থেকে নবম শ্রেণির গণিত, পদার্থ ও ইংরেজি ক্লাস নেন অনার্স তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী। তিনি একাদশ শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় শিক্ষক হিসেবে সেই প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন।

সুমাইয়া আক্তার নামের এক শিক্ষক বলেন, সপ্তাহে পাঁচ দিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সাত থেকে আটটি ক্লাস নিতে হয়। মাসে বেতন হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা। তবে এ স্কুলে ক্লাস করানোর চেয়ে টিউশনি করিয়ে বেশি টাকা আয় হয়। কয়েকজন শিক্ষার্থীকে টিউশনি করিয়ে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করেন।

সৈয়দপুর কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শাকিল হোসেন জানান, ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে চলছে কোনো কোনো স্কুল। তবে এখনো অনুমোদন মেলেনি। বাধ্য হয়ে তাঁরা অন্য বিদ্যালয়ের মাধ্যমে জেএসসি ও এসএসসি রেজিস্ট্রেশন করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। কাগজপত্র অনুযায়ী শিক্ষার্থী তাঁদের প্রতিষ্ঠানের না হলেও ক্লাস-পরীক্ষা সেখানেই হয়।

সৈয়দপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহজাহান মণ্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী শুধু বই বিতরণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো ক্ষমতা আমার নেই। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ম্যাপিং করে ক্যাচমেন্ট এরিয়া তৈরি করার সময় হয়েছে। সেটি করা হলে অভিভাবকেরা অনুমোদনহীন স্কুলে তাঁদের সন্তানদের ভর্তি করাতে চাইবেন না। তাই অনুমোদন ছাড়া গড়ে ওঠা স্কুল বন্ধ করে দিলে কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে জানান এ কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অপারেশন সিঁদুরে নিহত প্রায় দেড় শ সেনার তালিকা প্রকাশ করে মুছে ফেলল পাকিস্তানি টিভি

ঢাবিতে পাঁচ প্যানেলে ভোটের যুদ্ধ

দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে এনসিপির মাহিন সরকারকে বহিষ্কার

যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকারকে বহিষ্কারের কারণ জানাল এনসিপি

আদালতে আসামির স্বীকারোক্তি—১০ লাখ টাকা লোন দেয়নি বলে ব্যাংকে চুরির সিদ্ধান্ত নিই

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত