
আজকের পত্রিকা: হঠাৎ করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে কি?
জি এম কাদের: আমার কাছে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা খুব ভালো মনে হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকেই যেন বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। কোনো পক্ষই পেছনে হটতে চায় না। তাই আগামীতে সংঘর্ষ অনিবার্যই বলা যায়। রাজশাহী বিএনপির স্থানীয় যে নেতা প্রধানমন্ত্রীকে কবরে পাঠানোর কথা বলেছেন, সেটা সম্ভবত মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া একটি কথা। এটাকে খুব বেশি সিরিয়াসলি না নিলেও চলত বলে আমি মনে করি। কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কৃতিটা যেহেতু বিদ্বেষপূর্ণ, সেহেতু এ কথা নিয়ে উত্তেজনা তৈরি করা হচ্ছে। বিএনপির নেতৃত্ব শুরুতেই এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করলে পরিস্থিতি এতটা বিস্ফোরণোন্মুখ না-এ হতে পারত। আমার মতে, এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানোটাও ঠিক হচ্ছে না।
অথচ এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, কোনো পক্ষই ছাড় দিতে রাজি নয়। ছাড় দিলে সেই পক্ষের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে; বিশেষ করে সরকারপক্ষ পশ্চাদপসরণ করলে তাদের আরও বেশি ক্ষতি হয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু যা হচ্ছে তাতে রাজনৈতিকভাবে কতটা লাভ হচ্ছে, সেটা ভাবার বিষয়। উত্তেজনা ছড়ালে বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে। তাই দেশ ও জাতির জন্য এসব ব্যাপার মঙ্গলজনক হবে না।
আজকের পত্রিকা: আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু হবে বলে মনে করেন?
জি এম কাদের: দেশের সব মানুষই চাইছে, আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক। আসলে নির্বাচন তো হয়ই জনগণের মতামতটা ভোটের মাধ্যমে প্রতিফলিত হওয়ার জন্য। আর সেই মতামতের ভিত্তিতে যেন পরবর্তী সময় রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। এটা তো একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটাকে যাঁরা অস্বাভাবিক ভাবেন, তাঁদেরই স্বাভাবিকত্ব নেই।
আমাদের দুর্ভাগ্য, দেশের রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি করেন এবং তাঁরা ক্ষমতায় থেকে এমন কতগুলো কাজ করেন যে কারণে জনগণের মুখোমুখি হতে, অর্থাৎ নির্বাচনকে ভয় পান। জনগণের কাছে সরাসরি জবাবদিহি করতে চান না। ক্ষমতা পেলে তার অপব্যবহার করেন। অবশ্য এই পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি। নির্বাচনী পরিস্থিতিকে নিজের আওতায় নিয়ে এসে নির্বাচন করা এবং প্রয়োজন বোধে একে প্রতিহত করা—এটা স্বাধীনতার পর থেকে চলে আসছে। আমরা ক্ষমতায় থাকতেও একই কাজ করেছি। নির্দিষ্ট করে বললে, ১৯৯১ সালের পর থেকে এটা বেশি করে দেখা যাচ্ছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। শুধু সে সময়ে ক্ষমতা হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে কোনো সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এর আগে ও পরে প্রতিটি সরকারই নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করেছে, আয়ত্তে নিয়েছে ও দলীয়করণ করেছে। নির্বাচন কমিশনে নিজেদের লোকদের নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
এরশাদ সাহেবের আমলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত জোটবদ্ধ হয়ে কেয়ারটেকার সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিল। কিন্তু ১৯৯১ সালের কেয়ারটেকার সরকার সংবিধানসম্মতভাবে হয়নি। এরপর বিএনপি ক্ষমতায় এসে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে নিজের মতো করে ঢেলে সাজাল। তখন এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিল আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত। ওই আন্দোলনের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন প্রোগ্রামে বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে চিরস্থায়ী করা হবে। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাতিল হলো। এরপর নির্বাচনী ব্যবস্থা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে থাকল। কিন্তু ২০০৬ সালে নির্বাচনকে নিজেদের অনুকূলে নেওয়ার জন্য বিএনপি দলীয় লোকজন দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করার চেষ্টা করায় আমরা তার প্রতি আস্থা রাখতে পারলাম না। তখন আমরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করলাম। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনও যথার্থ সংবিধানসম্মতভাবে হয়নি। সংবিধানের কথা সবাই বলে, কিন্তু কেউই তা মানেনি। নির্বাচনব্যবস্থাকে নিজেদের আয়ত্তে এনে নির্বাচন করতে চায়। এ পরিস্থিতি দেশটাকে বিপজ্জনক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। তবে আমাদের দলের বক্তব্য হলো, বর্তমান অবস্থায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার সুযোগ খুবই কম।
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের এখন দলীয় কর্মীদের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই কারণে সরকারের ইচ্ছার বাইরে তাঁদের কিছু করার নেই। জনগণ রাজনীতির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তাদের বিরাজনীতির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। রাজনীতি এখন গুটিকয়েক গোষ্ঠীর হাতে চলে গেছে।
আজকের পত্রিকা: এ অবস্থায় জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী?
জি এম কাদের: আমরা দেখতে পাচ্ছি দেশে এখন সব বিষয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। সাংগঠনিকভাবে জাতীয় পার্টি যে এখন ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার অবস্থায় নেই, সেটা আমরা বুঝি। ৩২-৩৩ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকায় আমাদের অবস্থান তুলনামূলকভাবে দুর্বল। যখন যে দল ক্ষমতায় ছিল, সবাই আমাদের নাজেহাল করার চেষ্টা করেছে। আমাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ঠিকমতো করতে দেওয়া হয়নি। দলের মধ্যে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করেছে। প্রায় সব সরকারের সময়ই সেটা করা হয়েছে।
সে কারণে আমরা মনে করি, এ সময়ে আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে টিকে থাকা প্রয়োজন। এটা শুধু দলের জন্য নয়, দেশের মানুষের প্রয়োজনেও এটার দরকার আছে। ১৯৯১ সালের পর থেকে সাধারণভাবে দুটি শক্তি বারবার ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু দেখা গেছে, ভালোর চেয়ে তারা খারাপ হওয়ার প্রতিযোগিতা বেশি করেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মূল্যায়নে বিশ্বের মধ্যে দুর্নীতিতে প্রথম হয়েছে। এরপর বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর পরপর চারবার দুর্নীতিতে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করেছে। বিএনপি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা শুরু করেছিল। যা-ই হোক, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এল, তারা কিন্তু এটা বন্ধ করল না। এটা এখন বাড়তে বাড়তে এমন একটা অবস্থায় এসেছে যে বিশ্বের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। আমরা যতই বড়াই করি না কেন, বিশ্ববাসীর কাছে আমরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছি।
একজন খারাপ কাজ শুরু করেছে, কিন্তু আরেকজন সেই খারাপটাকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা থেকে দেশের মানুষ মুক্তি খুঁজছে। কিন্তু দেশে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি নেই। আমরা মনে করি, এই পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টি জাতির সামনে আশার আলো জ্বালিয়ে দিতে পারে। জাতীয় পার্টি কোনোভাবেই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ হতে চায় না। স্বতন্ত্রভাবেই দাঁড়াতে চায়।
এরশাদ সাহেব যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন দেশে তুলনামূলকভাবে সুশাসন ছিল, উন্নয়নও চলছিল, জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা হচ্ছিল। দেশ যখন রাজনীতির দুষ্টচক্র ও জাঁতাকলে পড়ে গেছে, তখন আমরা আমাদের বক্তব্য জনগণের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে চেষ্টা করছি। এতে বিকল্প শক্তির জায়গায় আমরা যেতে পারব বলে মনে করি।
আজকের পত্রিকা: জাতীয় পার্টিতে দেবর-ভাবির বিরোধের কথা শোনা যায়। এর কারণ কী?
জি এম কাদের: ভাবির সঙ্গে আসলে আমার কোনো বিরোধ নেই। এই বিরোধটা সরকার করে রেখেছে। সরকার বিভিন্নভাবে এটাকে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করে এবং তাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়। নানা ধরনের প্রচারণার কারণে অনেকে ভাবেন জাতীয় পার্টিতে কোন্দল আছে। আমরা যেন স্বাধীনভাবে না চলতে পারি, সে জন্য গলায় একটা শিকল লাগানোর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। এর আগেও আমাদের নানাভাবে শিকল লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তবে আমরা মনে করি না যে এসব টিকবে। কারণ জনগণের সমর্থন একটা বড় বিষয়। তাই আমরা নির্বাচনব্যবস্থার প্রতি বেশি জোর দিচ্ছি। দেশে যদি আবার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সত্যিকার অর্থে রাজনীতিতে দেশের মানুষের ভূমিকা প্রতিফলিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়, তাহলে এ বিষয়গুলো আর টিকবে না।
আজকের পত্রিকা: দেশের রাজনীতিতে বিদেশি শক্তির প্রভাবের কথা বারবার শোনা যায়। আপনি কী মনে করেন, বিদেশি শক্তির কোনো প্রভাব আছে?
জি এম কাদের: বিদেশিরা আমাদের দেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে চান না, আমি এটা বিশ্বাস করি। বিদেশিরা সহজভাবে একটা কথা বলছেন, তাঁরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চান। দেশের বেশির ভাগ জনগণ এটার সঙ্গে একমত। কেন তাঁরা এসব বলছেন? এ ক্ষেত্রে তাঁদের সুস্পষ্ট যুক্তি আছে। বিশ্বের কিছু দেশ এখানে অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছে। এখানকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাদের ব্যবসা জড়িয়ে আছে।
এখানে আমাদেরও স্বার্থ আছে। দেশ ভালো চললে আমরাও ভালো থাকব। আমরা মনে করি, এখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। ফলে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। তারা তো জোর করে কিছু বলছে না। আর আমেরিকার যুক্তিটা স্পষ্ট। বৃহৎ শক্তি হিসেবে বিশ্বব্যাপী শান্তির জন্য তারা নজরদারি করার চেষ্টা করে। তারা মনে করছে, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে জবাবদিহিহীন সরকার বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি। এ কারণে তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার গঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
আজকের পত্রিকা: যদি জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তাহলে কোন বক্তব্য দিয়ে জনগণের কাছে ভোট চাইবে?
জি এম কাদের: আমরা এখন বলতে চাই, জাতীয় পার্টির সরকারের সময় জনগণ ভালো ছিল। এখন পর্যন্ত আমরা এমন কিছু কাজ করিনি, যেটা জনগণের কাছে খারাপ হয়েছে। আমরা জনগণের পক্ষে ছিলাম, আগামীতেও থাকব।
আমরা সুশাসনের ওপর বেশি জোর দিচ্ছি—মানে আইনের শাসন, ন্যায়বিচারভিত্তিক এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আর একটা হলো, আমরা নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দেব। সাধারণ মানুষ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রের কাছে যে সাহায্য পাওয়ার কথা, সেটা পাচ্ছে না। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলো উন্নয়নের বাহন। কিন্তু জনগণের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন যদি না হয়, তাহলে শুধু এসব উন্নয়ন দিয়ে তাদের কিছু হয় না। দেশে এখন চলছে মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি। এগুলোই আমাদের পার্টির বক্তব্য।
নির্বাচনের আগে দেশের পরিস্থিতি এবং সাধারণ জনগণ কী চায়, তা দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। যেহেতু রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক না, তাই চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।
আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
জি এম কাদের: আপনাদেরও ধন্যবাদ।

আজকের পত্রিকা: হঠাৎ করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে কি?
জি এম কাদের: আমার কাছে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা খুব ভালো মনে হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকেই যেন বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। কোনো পক্ষই পেছনে হটতে চায় না। তাই আগামীতে সংঘর্ষ অনিবার্যই বলা যায়। রাজশাহী বিএনপির স্থানীয় যে নেতা প্রধানমন্ত্রীকে কবরে পাঠানোর কথা বলেছেন, সেটা সম্ভবত মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া একটি কথা। এটাকে খুব বেশি সিরিয়াসলি না নিলেও চলত বলে আমি মনে করি। কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কৃতিটা যেহেতু বিদ্বেষপূর্ণ, সেহেতু এ কথা নিয়ে উত্তেজনা তৈরি করা হচ্ছে। বিএনপির নেতৃত্ব শুরুতেই এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করলে পরিস্থিতি এতটা বিস্ফোরণোন্মুখ না-এ হতে পারত। আমার মতে, এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানোটাও ঠিক হচ্ছে না।
অথচ এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, কোনো পক্ষই ছাড় দিতে রাজি নয়। ছাড় দিলে সেই পক্ষের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে; বিশেষ করে সরকারপক্ষ পশ্চাদপসরণ করলে তাদের আরও বেশি ক্ষতি হয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু যা হচ্ছে তাতে রাজনৈতিকভাবে কতটা লাভ হচ্ছে, সেটা ভাবার বিষয়। উত্তেজনা ছড়ালে বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে। তাই দেশ ও জাতির জন্য এসব ব্যাপার মঙ্গলজনক হবে না।
আজকের পত্রিকা: আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু হবে বলে মনে করেন?
জি এম কাদের: দেশের সব মানুষই চাইছে, আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক। আসলে নির্বাচন তো হয়ই জনগণের মতামতটা ভোটের মাধ্যমে প্রতিফলিত হওয়ার জন্য। আর সেই মতামতের ভিত্তিতে যেন পরবর্তী সময় রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। এটা তো একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটাকে যাঁরা অস্বাভাবিক ভাবেন, তাঁদেরই স্বাভাবিকত্ব নেই।
আমাদের দুর্ভাগ্য, দেশের রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি করেন এবং তাঁরা ক্ষমতায় থেকে এমন কতগুলো কাজ করেন যে কারণে জনগণের মুখোমুখি হতে, অর্থাৎ নির্বাচনকে ভয় পান। জনগণের কাছে সরাসরি জবাবদিহি করতে চান না। ক্ষমতা পেলে তার অপব্যবহার করেন। অবশ্য এই পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি। নির্বাচনী পরিস্থিতিকে নিজের আওতায় নিয়ে এসে নির্বাচন করা এবং প্রয়োজন বোধে একে প্রতিহত করা—এটা স্বাধীনতার পর থেকে চলে আসছে। আমরা ক্ষমতায় থাকতেও একই কাজ করেছি। নির্দিষ্ট করে বললে, ১৯৯১ সালের পর থেকে এটা বেশি করে দেখা যাচ্ছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। শুধু সে সময়ে ক্ষমতা হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে কোনো সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এর আগে ও পরে প্রতিটি সরকারই নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করেছে, আয়ত্তে নিয়েছে ও দলীয়করণ করেছে। নির্বাচন কমিশনে নিজেদের লোকদের নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
এরশাদ সাহেবের আমলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত জোটবদ্ধ হয়ে কেয়ারটেকার সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিল। কিন্তু ১৯৯১ সালের কেয়ারটেকার সরকার সংবিধানসম্মতভাবে হয়নি। এরপর বিএনপি ক্ষমতায় এসে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে নিজের মতো করে ঢেলে সাজাল। তখন এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিল আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত। ওই আন্দোলনের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন প্রোগ্রামে বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে চিরস্থায়ী করা হবে। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাতিল হলো। এরপর নির্বাচনী ব্যবস্থা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে থাকল। কিন্তু ২০০৬ সালে নির্বাচনকে নিজেদের অনুকূলে নেওয়ার জন্য বিএনপি দলীয় লোকজন দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করার চেষ্টা করায় আমরা তার প্রতি আস্থা রাখতে পারলাম না। তখন আমরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করলাম। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনও যথার্থ সংবিধানসম্মতভাবে হয়নি। সংবিধানের কথা সবাই বলে, কিন্তু কেউই তা মানেনি। নির্বাচনব্যবস্থাকে নিজেদের আয়ত্তে এনে নির্বাচন করতে চায়। এ পরিস্থিতি দেশটাকে বিপজ্জনক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। তবে আমাদের দলের বক্তব্য হলো, বর্তমান অবস্থায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার সুযোগ খুবই কম।
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের এখন দলীয় কর্মীদের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই কারণে সরকারের ইচ্ছার বাইরে তাঁদের কিছু করার নেই। জনগণ রাজনীতির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তাদের বিরাজনীতির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। রাজনীতি এখন গুটিকয়েক গোষ্ঠীর হাতে চলে গেছে।
আজকের পত্রিকা: এ অবস্থায় জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী?
জি এম কাদের: আমরা দেখতে পাচ্ছি দেশে এখন সব বিষয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। সাংগঠনিকভাবে জাতীয় পার্টি যে এখন ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার অবস্থায় নেই, সেটা আমরা বুঝি। ৩২-৩৩ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকায় আমাদের অবস্থান তুলনামূলকভাবে দুর্বল। যখন যে দল ক্ষমতায় ছিল, সবাই আমাদের নাজেহাল করার চেষ্টা করেছে। আমাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ঠিকমতো করতে দেওয়া হয়নি। দলের মধ্যে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করেছে। প্রায় সব সরকারের সময়ই সেটা করা হয়েছে।
সে কারণে আমরা মনে করি, এ সময়ে আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে টিকে থাকা প্রয়োজন। এটা শুধু দলের জন্য নয়, দেশের মানুষের প্রয়োজনেও এটার দরকার আছে। ১৯৯১ সালের পর থেকে সাধারণভাবে দুটি শক্তি বারবার ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু দেখা গেছে, ভালোর চেয়ে তারা খারাপ হওয়ার প্রতিযোগিতা বেশি করেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মূল্যায়নে বিশ্বের মধ্যে দুর্নীতিতে প্রথম হয়েছে। এরপর বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর পরপর চারবার দুর্নীতিতে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করেছে। বিএনপি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা শুরু করেছিল। যা-ই হোক, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এল, তারা কিন্তু এটা বন্ধ করল না। এটা এখন বাড়তে বাড়তে এমন একটা অবস্থায় এসেছে যে বিশ্বের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। আমরা যতই বড়াই করি না কেন, বিশ্ববাসীর কাছে আমরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছি।
একজন খারাপ কাজ শুরু করেছে, কিন্তু আরেকজন সেই খারাপটাকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা থেকে দেশের মানুষ মুক্তি খুঁজছে। কিন্তু দেশে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি নেই। আমরা মনে করি, এই পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টি জাতির সামনে আশার আলো জ্বালিয়ে দিতে পারে। জাতীয় পার্টি কোনোভাবেই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ হতে চায় না। স্বতন্ত্রভাবেই দাঁড়াতে চায়।
এরশাদ সাহেব যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন দেশে তুলনামূলকভাবে সুশাসন ছিল, উন্নয়নও চলছিল, জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা হচ্ছিল। দেশ যখন রাজনীতির দুষ্টচক্র ও জাঁতাকলে পড়ে গেছে, তখন আমরা আমাদের বক্তব্য জনগণের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে চেষ্টা করছি। এতে বিকল্প শক্তির জায়গায় আমরা যেতে পারব বলে মনে করি।
আজকের পত্রিকা: জাতীয় পার্টিতে দেবর-ভাবির বিরোধের কথা শোনা যায়। এর কারণ কী?
জি এম কাদের: ভাবির সঙ্গে আসলে আমার কোনো বিরোধ নেই। এই বিরোধটা সরকার করে রেখেছে। সরকার বিভিন্নভাবে এটাকে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করে এবং তাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়। নানা ধরনের প্রচারণার কারণে অনেকে ভাবেন জাতীয় পার্টিতে কোন্দল আছে। আমরা যেন স্বাধীনভাবে না চলতে পারি, সে জন্য গলায় একটা শিকল লাগানোর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। এর আগেও আমাদের নানাভাবে শিকল লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তবে আমরা মনে করি না যে এসব টিকবে। কারণ জনগণের সমর্থন একটা বড় বিষয়। তাই আমরা নির্বাচনব্যবস্থার প্রতি বেশি জোর দিচ্ছি। দেশে যদি আবার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সত্যিকার অর্থে রাজনীতিতে দেশের মানুষের ভূমিকা প্রতিফলিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়, তাহলে এ বিষয়গুলো আর টিকবে না।
আজকের পত্রিকা: দেশের রাজনীতিতে বিদেশি শক্তির প্রভাবের কথা বারবার শোনা যায়। আপনি কী মনে করেন, বিদেশি শক্তির কোনো প্রভাব আছে?
জি এম কাদের: বিদেশিরা আমাদের দেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে চান না, আমি এটা বিশ্বাস করি। বিদেশিরা সহজভাবে একটা কথা বলছেন, তাঁরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চান। দেশের বেশির ভাগ জনগণ এটার সঙ্গে একমত। কেন তাঁরা এসব বলছেন? এ ক্ষেত্রে তাঁদের সুস্পষ্ট যুক্তি আছে। বিশ্বের কিছু দেশ এখানে অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছে। এখানকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাদের ব্যবসা জড়িয়ে আছে।
এখানে আমাদেরও স্বার্থ আছে। দেশ ভালো চললে আমরাও ভালো থাকব। আমরা মনে করি, এখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। ফলে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। তারা তো জোর করে কিছু বলছে না। আর আমেরিকার যুক্তিটা স্পষ্ট। বৃহৎ শক্তি হিসেবে বিশ্বব্যাপী শান্তির জন্য তারা নজরদারি করার চেষ্টা করে। তারা মনে করছে, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে জবাবদিহিহীন সরকার বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি। এ কারণে তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার গঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
আজকের পত্রিকা: যদি জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তাহলে কোন বক্তব্য দিয়ে জনগণের কাছে ভোট চাইবে?
জি এম কাদের: আমরা এখন বলতে চাই, জাতীয় পার্টির সরকারের সময় জনগণ ভালো ছিল। এখন পর্যন্ত আমরা এমন কিছু কাজ করিনি, যেটা জনগণের কাছে খারাপ হয়েছে। আমরা জনগণের পক্ষে ছিলাম, আগামীতেও থাকব।
আমরা সুশাসনের ওপর বেশি জোর দিচ্ছি—মানে আইনের শাসন, ন্যায়বিচারভিত্তিক এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আর একটা হলো, আমরা নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দেব। সাধারণ মানুষ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রের কাছে যে সাহায্য পাওয়ার কথা, সেটা পাচ্ছে না। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলো উন্নয়নের বাহন। কিন্তু জনগণের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন যদি না হয়, তাহলে শুধু এসব উন্নয়ন দিয়ে তাদের কিছু হয় না। দেশে এখন চলছে মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি। এগুলোই আমাদের পার্টির বক্তব্য।
নির্বাচনের আগে দেশের পরিস্থিতি এবং সাধারণ জনগণ কী চায়, তা দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। যেহেতু রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক না, তাই চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।
আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
জি এম কাদের: আপনাদেরও ধন্যবাদ।

আজকের পত্রিকা: হঠাৎ করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে কি?
জি এম কাদের: আমার কাছে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা খুব ভালো মনে হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকেই যেন বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। কোনো পক্ষই পেছনে হটতে চায় না। তাই আগামীতে সংঘর্ষ অনিবার্যই বলা যায়। রাজশাহী বিএনপির স্থানীয় যে নেতা প্রধানমন্ত্রীকে কবরে পাঠানোর কথা বলেছেন, সেটা সম্ভবত মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া একটি কথা। এটাকে খুব বেশি সিরিয়াসলি না নিলেও চলত বলে আমি মনে করি। কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কৃতিটা যেহেতু বিদ্বেষপূর্ণ, সেহেতু এ কথা নিয়ে উত্তেজনা তৈরি করা হচ্ছে। বিএনপির নেতৃত্ব শুরুতেই এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করলে পরিস্থিতি এতটা বিস্ফোরণোন্মুখ না-এ হতে পারত। আমার মতে, এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানোটাও ঠিক হচ্ছে না।
অথচ এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, কোনো পক্ষই ছাড় দিতে রাজি নয়। ছাড় দিলে সেই পক্ষের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে; বিশেষ করে সরকারপক্ষ পশ্চাদপসরণ করলে তাদের আরও বেশি ক্ষতি হয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু যা হচ্ছে তাতে রাজনৈতিকভাবে কতটা লাভ হচ্ছে, সেটা ভাবার বিষয়। উত্তেজনা ছড়ালে বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে। তাই দেশ ও জাতির জন্য এসব ব্যাপার মঙ্গলজনক হবে না।
আজকের পত্রিকা: আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু হবে বলে মনে করেন?
জি এম কাদের: দেশের সব মানুষই চাইছে, আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক। আসলে নির্বাচন তো হয়ই জনগণের মতামতটা ভোটের মাধ্যমে প্রতিফলিত হওয়ার জন্য। আর সেই মতামতের ভিত্তিতে যেন পরবর্তী সময় রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। এটা তো একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটাকে যাঁরা অস্বাভাবিক ভাবেন, তাঁদেরই স্বাভাবিকত্ব নেই।
আমাদের দুর্ভাগ্য, দেশের রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি করেন এবং তাঁরা ক্ষমতায় থেকে এমন কতগুলো কাজ করেন যে কারণে জনগণের মুখোমুখি হতে, অর্থাৎ নির্বাচনকে ভয় পান। জনগণের কাছে সরাসরি জবাবদিহি করতে চান না। ক্ষমতা পেলে তার অপব্যবহার করেন। অবশ্য এই পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি। নির্বাচনী পরিস্থিতিকে নিজের আওতায় নিয়ে এসে নির্বাচন করা এবং প্রয়োজন বোধে একে প্রতিহত করা—এটা স্বাধীনতার পর থেকে চলে আসছে। আমরা ক্ষমতায় থাকতেও একই কাজ করেছি। নির্দিষ্ট করে বললে, ১৯৯১ সালের পর থেকে এটা বেশি করে দেখা যাচ্ছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। শুধু সে সময়ে ক্ষমতা হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে কোনো সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এর আগে ও পরে প্রতিটি সরকারই নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করেছে, আয়ত্তে নিয়েছে ও দলীয়করণ করেছে। নির্বাচন কমিশনে নিজেদের লোকদের নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
এরশাদ সাহেবের আমলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত জোটবদ্ধ হয়ে কেয়ারটেকার সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিল। কিন্তু ১৯৯১ সালের কেয়ারটেকার সরকার সংবিধানসম্মতভাবে হয়নি। এরপর বিএনপি ক্ষমতায় এসে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে নিজের মতো করে ঢেলে সাজাল। তখন এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিল আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত। ওই আন্দোলনের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন প্রোগ্রামে বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে চিরস্থায়ী করা হবে। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাতিল হলো। এরপর নির্বাচনী ব্যবস্থা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে থাকল। কিন্তু ২০০৬ সালে নির্বাচনকে নিজেদের অনুকূলে নেওয়ার জন্য বিএনপি দলীয় লোকজন দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করার চেষ্টা করায় আমরা তার প্রতি আস্থা রাখতে পারলাম না। তখন আমরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করলাম। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনও যথার্থ সংবিধানসম্মতভাবে হয়নি। সংবিধানের কথা সবাই বলে, কিন্তু কেউই তা মানেনি। নির্বাচনব্যবস্থাকে নিজেদের আয়ত্তে এনে নির্বাচন করতে চায়। এ পরিস্থিতি দেশটাকে বিপজ্জনক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। তবে আমাদের দলের বক্তব্য হলো, বর্তমান অবস্থায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার সুযোগ খুবই কম।
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের এখন দলীয় কর্মীদের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই কারণে সরকারের ইচ্ছার বাইরে তাঁদের কিছু করার নেই। জনগণ রাজনীতির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তাদের বিরাজনীতির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। রাজনীতি এখন গুটিকয়েক গোষ্ঠীর হাতে চলে গেছে।
আজকের পত্রিকা: এ অবস্থায় জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী?
জি এম কাদের: আমরা দেখতে পাচ্ছি দেশে এখন সব বিষয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। সাংগঠনিকভাবে জাতীয় পার্টি যে এখন ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার অবস্থায় নেই, সেটা আমরা বুঝি। ৩২-৩৩ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকায় আমাদের অবস্থান তুলনামূলকভাবে দুর্বল। যখন যে দল ক্ষমতায় ছিল, সবাই আমাদের নাজেহাল করার চেষ্টা করেছে। আমাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ঠিকমতো করতে দেওয়া হয়নি। দলের মধ্যে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করেছে। প্রায় সব সরকারের সময়ই সেটা করা হয়েছে।
সে কারণে আমরা মনে করি, এ সময়ে আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে টিকে থাকা প্রয়োজন। এটা শুধু দলের জন্য নয়, দেশের মানুষের প্রয়োজনেও এটার দরকার আছে। ১৯৯১ সালের পর থেকে সাধারণভাবে দুটি শক্তি বারবার ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু দেখা গেছে, ভালোর চেয়ে তারা খারাপ হওয়ার প্রতিযোগিতা বেশি করেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মূল্যায়নে বিশ্বের মধ্যে দুর্নীতিতে প্রথম হয়েছে। এরপর বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর পরপর চারবার দুর্নীতিতে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করেছে। বিএনপি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা শুরু করেছিল। যা-ই হোক, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এল, তারা কিন্তু এটা বন্ধ করল না। এটা এখন বাড়তে বাড়তে এমন একটা অবস্থায় এসেছে যে বিশ্বের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। আমরা যতই বড়াই করি না কেন, বিশ্ববাসীর কাছে আমরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছি।
একজন খারাপ কাজ শুরু করেছে, কিন্তু আরেকজন সেই খারাপটাকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা থেকে দেশের মানুষ মুক্তি খুঁজছে। কিন্তু দেশে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি নেই। আমরা মনে করি, এই পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টি জাতির সামনে আশার আলো জ্বালিয়ে দিতে পারে। জাতীয় পার্টি কোনোভাবেই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ হতে চায় না। স্বতন্ত্রভাবেই দাঁড়াতে চায়।
এরশাদ সাহেব যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন দেশে তুলনামূলকভাবে সুশাসন ছিল, উন্নয়নও চলছিল, জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা হচ্ছিল। দেশ যখন রাজনীতির দুষ্টচক্র ও জাঁতাকলে পড়ে গেছে, তখন আমরা আমাদের বক্তব্য জনগণের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে চেষ্টা করছি। এতে বিকল্প শক্তির জায়গায় আমরা যেতে পারব বলে মনে করি।
আজকের পত্রিকা: জাতীয় পার্টিতে দেবর-ভাবির বিরোধের কথা শোনা যায়। এর কারণ কী?
জি এম কাদের: ভাবির সঙ্গে আসলে আমার কোনো বিরোধ নেই। এই বিরোধটা সরকার করে রেখেছে। সরকার বিভিন্নভাবে এটাকে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করে এবং তাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়। নানা ধরনের প্রচারণার কারণে অনেকে ভাবেন জাতীয় পার্টিতে কোন্দল আছে। আমরা যেন স্বাধীনভাবে না চলতে পারি, সে জন্য গলায় একটা শিকল লাগানোর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। এর আগেও আমাদের নানাভাবে শিকল লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তবে আমরা মনে করি না যে এসব টিকবে। কারণ জনগণের সমর্থন একটা বড় বিষয়। তাই আমরা নির্বাচনব্যবস্থার প্রতি বেশি জোর দিচ্ছি। দেশে যদি আবার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সত্যিকার অর্থে রাজনীতিতে দেশের মানুষের ভূমিকা প্রতিফলিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়, তাহলে এ বিষয়গুলো আর টিকবে না।
আজকের পত্রিকা: দেশের রাজনীতিতে বিদেশি শক্তির প্রভাবের কথা বারবার শোনা যায়। আপনি কী মনে করেন, বিদেশি শক্তির কোনো প্রভাব আছে?
জি এম কাদের: বিদেশিরা আমাদের দেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে চান না, আমি এটা বিশ্বাস করি। বিদেশিরা সহজভাবে একটা কথা বলছেন, তাঁরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চান। দেশের বেশির ভাগ জনগণ এটার সঙ্গে একমত। কেন তাঁরা এসব বলছেন? এ ক্ষেত্রে তাঁদের সুস্পষ্ট যুক্তি আছে। বিশ্বের কিছু দেশ এখানে অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছে। এখানকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাদের ব্যবসা জড়িয়ে আছে।
এখানে আমাদেরও স্বার্থ আছে। দেশ ভালো চললে আমরাও ভালো থাকব। আমরা মনে করি, এখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। ফলে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। তারা তো জোর করে কিছু বলছে না। আর আমেরিকার যুক্তিটা স্পষ্ট। বৃহৎ শক্তি হিসেবে বিশ্বব্যাপী শান্তির জন্য তারা নজরদারি করার চেষ্টা করে। তারা মনে করছে, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে জবাবদিহিহীন সরকার বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি। এ কারণে তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার গঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
আজকের পত্রিকা: যদি জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তাহলে কোন বক্তব্য দিয়ে জনগণের কাছে ভোট চাইবে?
জি এম কাদের: আমরা এখন বলতে চাই, জাতীয় পার্টির সরকারের সময় জনগণ ভালো ছিল। এখন পর্যন্ত আমরা এমন কিছু কাজ করিনি, যেটা জনগণের কাছে খারাপ হয়েছে। আমরা জনগণের পক্ষে ছিলাম, আগামীতেও থাকব।
আমরা সুশাসনের ওপর বেশি জোর দিচ্ছি—মানে আইনের শাসন, ন্যায়বিচারভিত্তিক এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আর একটা হলো, আমরা নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দেব। সাধারণ মানুষ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রের কাছে যে সাহায্য পাওয়ার কথা, সেটা পাচ্ছে না। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলো উন্নয়নের বাহন। কিন্তু জনগণের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন যদি না হয়, তাহলে শুধু এসব উন্নয়ন দিয়ে তাদের কিছু হয় না। দেশে এখন চলছে মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি। এগুলোই আমাদের পার্টির বক্তব্য।
নির্বাচনের আগে দেশের পরিস্থিতি এবং সাধারণ জনগণ কী চায়, তা দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। যেহেতু রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক না, তাই চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।
আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
জি এম কাদের: আপনাদেরও ধন্যবাদ।

আজকের পত্রিকা: হঠাৎ করে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে কি?
জি এম কাদের: আমার কাছে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা খুব ভালো মনে হচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকেই যেন বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। কোনো পক্ষই পেছনে হটতে চায় না। তাই আগামীতে সংঘর্ষ অনিবার্যই বলা যায়। রাজশাহী বিএনপির স্থানীয় যে নেতা প্রধানমন্ত্রীকে কবরে পাঠানোর কথা বলেছেন, সেটা সম্ভবত মুখ ফসকে বেরিয়ে যাওয়া একটি কথা। এটাকে খুব বেশি সিরিয়াসলি না নিলেও চলত বলে আমি মনে করি। কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কৃতিটা যেহেতু বিদ্বেষপূর্ণ, সেহেতু এ কথা নিয়ে উত্তেজনা তৈরি করা হচ্ছে। বিএনপির নেতৃত্ব শুরুতেই এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করলে পরিস্থিতি এতটা বিস্ফোরণোন্মুখ না-এ হতে পারত। আমার মতে, এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানোটাও ঠিক হচ্ছে না।
অথচ এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, কোনো পক্ষই ছাড় দিতে রাজি নয়। ছাড় দিলে সেই পক্ষের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে; বিশেষ করে সরকারপক্ষ পশ্চাদপসরণ করলে তাদের আরও বেশি ক্ষতি হয়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু যা হচ্ছে তাতে রাজনৈতিকভাবে কতটা লাভ হচ্ছে, সেটা ভাবার বিষয়। উত্তেজনা ছড়ালে বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে। তাই দেশ ও জাতির জন্য এসব ব্যাপার মঙ্গলজনক হবে না।
আজকের পত্রিকা: আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু হবে বলে মনে করেন?
জি এম কাদের: দেশের সব মানুষই চাইছে, আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠিত হোক। আসলে নির্বাচন তো হয়ই জনগণের মতামতটা ভোটের মাধ্যমে প্রতিফলিত হওয়ার জন্য। আর সেই মতামতের ভিত্তিতে যেন পরবর্তী সময় রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। এটা তো একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটাকে যাঁরা অস্বাভাবিক ভাবেন, তাঁদেরই স্বাভাবিকত্ব নেই।
আমাদের দুর্ভাগ্য, দেশের রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি করেন এবং তাঁরা ক্ষমতায় থেকে এমন কতগুলো কাজ করেন যে কারণে জনগণের মুখোমুখি হতে, অর্থাৎ নির্বাচনকে ভয় পান। জনগণের কাছে সরাসরি জবাবদিহি করতে চান না। ক্ষমতা পেলে তার অপব্যবহার করেন। অবশ্য এই পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয়নি। নির্বাচনী পরিস্থিতিকে নিজের আওতায় নিয়ে এসে নির্বাচন করা এবং প্রয়োজন বোধে একে প্রতিহত করা—এটা স্বাধীনতার পর থেকে চলে আসছে। আমরা ক্ষমতায় থাকতেও একই কাজ করেছি। নির্দিষ্ট করে বললে, ১৯৯১ সালের পর থেকে এটা বেশি করে দেখা যাচ্ছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। শুধু সে সময়ে ক্ষমতা হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে কোনো সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। এর আগে ও পরে প্রতিটি সরকারই নির্বাচনী ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করেছে, আয়ত্তে নিয়েছে ও দলীয়করণ করেছে। নির্বাচন কমিশনে নিজেদের লোকদের নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
এরশাদ সাহেবের আমলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত জোটবদ্ধ হয়ে কেয়ারটেকার সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিল। কিন্তু ১৯৯১ সালের কেয়ারটেকার সরকার সংবিধানসম্মতভাবে হয়নি। এরপর বিএনপি ক্ষমতায় এসে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে নিজের মতো করে ঢেলে সাজাল। তখন এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিল আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত। ওই আন্দোলনের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন প্রোগ্রামে বলেছিলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে চিরস্থায়ী করা হবে। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাতিল হলো। এরপর নির্বাচনী ব্যবস্থা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে থাকল। কিন্তু ২০০৬ সালে নির্বাচনকে নিজেদের অনুকূলে নেওয়ার জন্য বিএনপি দলীয় লোকজন দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করার চেষ্টা করায় আমরা তার প্রতি আস্থা রাখতে পারলাম না। তখন আমরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করলাম। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনও যথার্থ সংবিধানসম্মতভাবে হয়নি। সংবিধানের কথা সবাই বলে, কিন্তু কেউই তা মানেনি। নির্বাচনব্যবস্থাকে নিজেদের আয়ত্তে এনে নির্বাচন করতে চায়। এ পরিস্থিতি দেশটাকে বিপজ্জনক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। তবে আমাদের দলের বক্তব্য হলো, বর্তমান অবস্থায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার সুযোগ খুবই কম।
প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের এখন দলীয় কর্মীদের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই কারণে সরকারের ইচ্ছার বাইরে তাঁদের কিছু করার নেই। জনগণ রাজনীতির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তাদের বিরাজনীতির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। রাজনীতি এখন গুটিকয়েক গোষ্ঠীর হাতে চলে গেছে।
আজকের পত্রিকা: এ অবস্থায় জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী?
জি এম কাদের: আমরা দেখতে পাচ্ছি দেশে এখন সব বিষয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। সাংগঠনিকভাবে জাতীয় পার্টি যে এখন ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার অবস্থায় নেই, সেটা আমরা বুঝি। ৩২-৩৩ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকায় আমাদের অবস্থান তুলনামূলকভাবে দুর্বল। যখন যে দল ক্ষমতায় ছিল, সবাই আমাদের নাজেহাল করার চেষ্টা করেছে। আমাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ঠিকমতো করতে দেওয়া হয়নি। দলের মধ্যে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করেছে। প্রায় সব সরকারের সময়ই সেটা করা হয়েছে।
সে কারণে আমরা মনে করি, এ সময়ে আমাদের অস্তিত্ব নিয়ে টিকে থাকা প্রয়োজন। এটা শুধু দলের জন্য নয়, দেশের মানুষের প্রয়োজনেও এটার দরকার আছে। ১৯৯১ সালের পর থেকে সাধারণভাবে দুটি শক্তি বারবার ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু দেখা গেছে, ভালোর চেয়ে তারা খারাপ হওয়ার প্রতিযোগিতা বেশি করেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মূল্যায়নে বিশ্বের মধ্যে দুর্নীতিতে প্রথম হয়েছে। এরপর বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর পরপর চারবার দুর্নীতিতে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করেছে। বিএনপি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা শুরু করেছিল। যা-ই হোক, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এল, তারা কিন্তু এটা বন্ধ করল না। এটা এখন বাড়তে বাড়তে এমন একটা অবস্থায় এসেছে যে বিশ্বের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। আমরা যতই বড়াই করি না কেন, বিশ্ববাসীর কাছে আমরা দোষী সাব্যস্ত হয়েছি।
একজন খারাপ কাজ শুরু করেছে, কিন্তু আরেকজন সেই খারাপটাকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা থেকে দেশের মানুষ মুক্তি খুঁজছে। কিন্তু দেশে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি নেই। আমরা মনে করি, এই পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টি জাতির সামনে আশার আলো জ্বালিয়ে দিতে পারে। জাতীয় পার্টি কোনোভাবেই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ হতে চায় না। স্বতন্ত্রভাবেই দাঁড়াতে চায়।
এরশাদ সাহেব যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন দেশে তুলনামূলকভাবে সুশাসন ছিল, উন্নয়নও চলছিল, জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা হচ্ছিল। দেশ যখন রাজনীতির দুষ্টচক্র ও জাঁতাকলে পড়ে গেছে, তখন আমরা আমাদের বক্তব্য জনগণের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে চেষ্টা করছি। এতে বিকল্প শক্তির জায়গায় আমরা যেতে পারব বলে মনে করি।
আজকের পত্রিকা: জাতীয় পার্টিতে দেবর-ভাবির বিরোধের কথা শোনা যায়। এর কারণ কী?
জি এম কাদের: ভাবির সঙ্গে আসলে আমার কোনো বিরোধ নেই। এই বিরোধটা সরকার করে রেখেছে। সরকার বিভিন্নভাবে এটাকে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করে এবং তাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়। নানা ধরনের প্রচারণার কারণে অনেকে ভাবেন জাতীয় পার্টিতে কোন্দল আছে। আমরা যেন স্বাধীনভাবে না চলতে পারি, সে জন্য গলায় একটা শিকল লাগানোর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। এর আগেও আমাদের নানাভাবে শিকল লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তবে আমরা মনে করি না যে এসব টিকবে। কারণ জনগণের সমর্থন একটা বড় বিষয়। তাই আমরা নির্বাচনব্যবস্থার প্রতি বেশি জোর দিচ্ছি। দেশে যদি আবার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সত্যিকার অর্থে রাজনীতিতে দেশের মানুষের ভূমিকা প্রতিফলিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়, তাহলে এ বিষয়গুলো আর টিকবে না।
আজকের পত্রিকা: দেশের রাজনীতিতে বিদেশি শক্তির প্রভাবের কথা বারবার শোনা যায়। আপনি কী মনে করেন, বিদেশি শক্তির কোনো প্রভাব আছে?
জি এম কাদের: বিদেশিরা আমাদের দেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে চান না, আমি এটা বিশ্বাস করি। বিদেশিরা সহজভাবে একটা কথা বলছেন, তাঁরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চান। দেশের বেশির ভাগ জনগণ এটার সঙ্গে একমত। কেন তাঁরা এসব বলছেন? এ ক্ষেত্রে তাঁদের সুস্পষ্ট যুক্তি আছে। বিশ্বের কিছু দেশ এখানে অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছে। এখানকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাদের ব্যবসা জড়িয়ে আছে।
এখানে আমাদেরও স্বার্থ আছে। দেশ ভালো চললে আমরাও ভালো থাকব। আমরা মনে করি, এখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। ফলে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। তারা তো জোর করে কিছু বলছে না। আর আমেরিকার যুক্তিটা স্পষ্ট। বৃহৎ শক্তি হিসেবে বিশ্বব্যাপী শান্তির জন্য তারা নজরদারি করার চেষ্টা করে। তারা মনে করছে, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে জবাবদিহিহীন সরকার বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি। এ কারণে তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার গঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
আজকের পত্রিকা: যদি জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তাহলে কোন বক্তব্য দিয়ে জনগণের কাছে ভোট চাইবে?
জি এম কাদের: আমরা এখন বলতে চাই, জাতীয় পার্টির সরকারের সময় জনগণ ভালো ছিল। এখন পর্যন্ত আমরা এমন কিছু কাজ করিনি, যেটা জনগণের কাছে খারাপ হয়েছে। আমরা জনগণের পক্ষে ছিলাম, আগামীতেও থাকব।
আমরা সুশাসনের ওপর বেশি জোর দিচ্ছি—মানে আইনের শাসন, ন্যায়বিচারভিত্তিক এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। আর একটা হলো, আমরা নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দেব। সাধারণ মানুষ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রের কাছে যে সাহায্য পাওয়ার কথা, সেটা পাচ্ছে না। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলো উন্নয়নের বাহন। কিন্তু জনগণের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন যদি না হয়, তাহলে শুধু এসব উন্নয়ন দিয়ে তাদের কিছু হয় না। দেশে এখন চলছে মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি। এগুলোই আমাদের পার্টির বক্তব্য।
নির্বাচনের আগে দেশের পরিস্থিতি এবং সাধারণ জনগণ কী চায়, তা দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। যেহেতু রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক না, তাই চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।
আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
জি এম কাদের: আপনাদেরও ধন্যবাদ।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বুয়েট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চাকরিজীবন শেষে জি এম কাদের সপ্তম, অষ্টম, নবম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর পুরো নাম গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
২৮ মে ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বুয়েট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চাকরিজীবন শেষে জি এম কাদের সপ্তম, অষ্টম, নবম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর পুরো নাম গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
২৮ মে ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বুয়েট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চাকরিজীবন শেষে জি এম কাদের সপ্তম, অষ্টম, নবম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর পুরো নাম গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
২৮ মে ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বুয়েট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চাকরিজীবন শেষে জি এম কাদের সপ্তম, অষ্টম, নবম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর পুরো নাম গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
২৮ মে ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫