Ajker Patrika

কোটিপতির বাম্পার ফলন

সম্পাদকীয়
কোটিপতির বাম্পার ফলন

আজকের পত্রিকার বাণিজ্য পাতায় বৃহস্পতিবার ছাপা হয়েছে এক দারুণ খবর। দেশে নাকি ‘কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে’। তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছে, এই সংকটকালেও কোটিপতির উচ্চ ফলন হচ্ছে দেশে। আয়বৈষম্য বাড়লেই এ ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হয়, এ কথা বলে থাকেন অর্থনীতির পণ্ডিতেরা।

একসময় আমরা পাকিস্তানের বাইশ পরিবার নিয়ে কম কটাক্ষ করিনি। পাকিস্তান রাষ্ট্রের যে খানাখন্দ ছিল, তার একটি বড় 
গর্তই ছিল এই বাইশ পরিবার। দেশের মানুষ যখন দারিদ্র্যে নিমজ্জিত, তখন কীভাবে এই পরিবারগুলো ফুলে-ফেঁপে উঠছে, 
তা নিয়ে ছিল বিশাল সমালোচনা। সেই সমালোচনাগুলো ছিল খুবই যুক্তিসংগত। রাষ্ট্রক্ষমতা বাঙালি নিজের হাতে পেলে এই বৈষম্য 
আর থাকবে না—এ রকম ভাবনায় বিভোর ছিল আমাদের রাজনীতি।

কিন্তু আজ যখন স্বাধীন দেশেও কোটিপতির সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে, তখন পুরোনো দিনের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, আমরা আমাদের অঙ্গীকারগুলো রাখিনি। ২০২৩ সালে কোটিপতির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৫। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ৮৩ হাজার ৮৩৯। করোনা এসে মানুষকে দারুণভাবে বিপর্যস্ত করল ২০২০ সালে, আর তাতে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯৩ হাজার ৮৯০। এরপর কি আর থেমে থাকে! দেশের মাটিতে কোটিপতির চাষবাস বেড়ে গেল। ২০২১ সালে কোটিপতির সংখ্যা লাখ ছাড়াল—এবার তাদের সংখ্যা ১ লাখ ১ হাজার ৯৭৬। ডলার-সংকট বেড়ে যায় ২০২২ সালে, আর তখন কোটিপতির সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৬।

দেশে বড়লোকের সংখ্যা বাড়লে সেটা অর্থনীতির নিরিখে কোনো দুঃসংবাদ নয়। কিন্তু মন খারাপ করা তথ্য হচ্ছে, এই কোটিপতির দল কিন্তু স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বেড়ে উঠছে না। কোনো কাজে ফাঁকফোকর খুঁজে নিয়ে তাঁরা বাড়িয়ে নিচ্ছেন আয়। ন্যূনতম বিনিয়োগে দ্বিগুণ-তিন গুণ বা তার চেয়েও বেশি মুনাফা অর্জন করে তাঁরা কোটিপতি হচ্ছেন বটে, কিন্তু তাতে দেশে কর্মসংস্থান হচ্ছে কোথায়? তাতে দেশের অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা কাটছে কোথায়? নাকি এসবই লুটপাট বলে চিহ্নিত হবে?

ভিন্ন একটি প্রসঙ্গ উত্থাপন করে এই লেখার ইতি টানি। ইতিহাস-পড়ুয়া মানুষ জানেন ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা। সে সময় ব্রিটিশদের মুৎসুদ্দি, বেনিয়া হয়ে একশ্রেণির মানুষ প্রচুর টাকা আয় করেছিল। তাদের বেতন আর আয়ের মধ্যে কোনো সামঞ্জস্য ছিল না।

কত টাকা খাজনা পরিশোধ করবে, তা বর্ণনা করে নিলামে তারা কিনে নিয়েছিল জমিদারি। জমির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। এই মানুষেরাই খেটে খাওয়া মানুষদের জীবন অতিষ্ঠ করে দিয়েছিল। আমাদের দেশে এখন জমিদারি প্রথা নেই, কিন্তু কোটিপতি আছে—চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কথা চিন্তা করলে এই নব্য কোটিপতিদের আমরা কী নামে অভিহিত করব? সাধারণ মানুষ কি সেই তিমিরেই অবস্থান করবে—এই হলো আমাদের জিজ্ঞাসা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ: এক্সিম ব্যাংকের নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ ৩০ জনের নামে মামলা

‘কথিত আওয়ামী লীগ সদস্যদের’ বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতার বিষয়ে ভারত অবহিত নয়: মুখপাত্র

কলকাতার নিউটাউনে বসে আয়েশ করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা

চাকরি না ছেড়েই বিদেশে পাড়ি, ৪৮ শিক্ষক বরখাস্ত

ভিসা ছাড়া পাকিস্তান সফরের চুক্তি হতে পারে শিগগির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত