Ajker Patrika

মুচলেকা নয়

মমতাজ বেগম
আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০: ০৬
মুচলেকা নয়

মমতাজ বেগম ছিলেন নারায়ণগঞ্জের মর্গান হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। তাঁর সাংগঠনিক তৎপরতা ছিল অকল্পনীয়। ১৯৫১ সালে তিনি মর্গান হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জও ছিল প্রতিবাদমুখর। বিক্ষোভ সমাবেশ, মিছিল নারায়ণগঞ্জকে উত্তাল করে রেখেছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতা আলমাস আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় বক্তৃতা করেন প্রবীণ নেতা আবুল হাশিম, মুস্তাফা সারওয়ার, বজলুর রহমান, শফি হোসেন খান প্রমুখ। সেই সভা থেকেই জানা যায়, ঢাকায় গুলি চলেছে, শহীদ হয়েছেন কয়েকজন। মমতাজ বেগম সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে সেই সভায় মিছিল নিয়ে যোগ দেন। মর্গান স্কুলের ছাত্রীরা ছাড়াও সেই মিছিলে বিভিন্ন পেশার নারীরাও অংশ নিয়েছিলেন। সে সময় নারায়ণগঞ্জে পর্দাঘেরা রিকশায় নারীরা চলাচল করতেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এ ছিল দারুণ সাহসিকতার কাজ। ২২ ফেব্রুয়ারি চাষাঢ়া মাঠে একুশের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে যে সভা হয়, তাতেও মমতাজ বেগমের নেতৃত্বে নারীদের একটি বিরাট মিছিল এসে সমাবেশস্থলে পৌঁছায়। আন্দোলন সংগঠিত করতে রাজনৈতিক ও শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে গোপন মিটিং করেন মমতাজ বেগম।

নারায়ণগঞ্জ মহকুমা প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করে। আন্দোলনে তাঁর অংশগ্রহণ বন্ধ করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মর্গান স্কুলের তহবিল তছরুপের মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। ২৯ ফেব্রুয়ারি তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। জনতা বুঝতে পারে প্রশাসনের অভিসন্ধি। হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষ কোর্ট প্রাঙ্গণে সমবেত হয়। মমতাজ বেগমের মুক্তির দাবি জানিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। পুলিশের সঙ্গে জনতার ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পুলিশভ্যানে তাঁকে ঢাকা কারাগারে নিয়ে আসার চেষ্টা চালালে জনতা তা বানচাল করে দেয়। পরে ঢাকা থেকে অতিরিক্ত ইপিআর আর রিজার্ভ পুলিশ এনে রাতে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যায়। সরকার এই তেজস্বিনী নারীকে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি কিনতে বলেছিল। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। দেড় বছর পর তিনি মুক্তি পান।

সূত্র: এম আর মাহবুব সম্পাদিত ভাষাসংগ্রামী মমতাজ বেগম, পৃষ্ঠা ৩০-৩২

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত