Ajker Patrika

আবদুর রাজ্জাকের ভবিষ্যদ্বাণী

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২১, ১১: ৪২
আবদুর রাজ্জাকের ভবিষ্যদ্বাণী

বিচারপতি ইব্রাহিম একসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছিলেন। অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের ব্যাপারে তাঁর ধারণা খুব ভালো ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরে গিয়েছিলেন তিনি, তাঁকে আইয়ুব খান তাঁর সংবিধান রচনা দলের সদস্য করে নিয়েছিলেন। আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের ফলাফল কী হতে পারে, সে বিষয়ে বিচারপতি ইব্রাহিম প্রশ্ন করেছিলেন অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাককে। আবদুর রাজ্জাক বলেছিলেন, ‘সামরিক আইন এই অবস্থার কোনো উন্নতি করতে পারবে না। এতে খুব অবাক হয়ে বিচারপতি ইব্রাহিম বলেছিলেন, ‘রাজনীতিবিদরা দেশকে যে জায়গায় নিয়ে এসেছে, তাতে এ ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না।’

এর কিছুদিন পর তিনি আইয়ুব খানের মন্ত্রী হন। তারপর আবদুর রাজ্জাককে ডেকে বলেন, ‘আপনি আমাকে একটু সাহায্য করবেন? আপনি তো সংবিধান নিয়ে অনেক নাড়াচাড়া করেছেন, সরকার বলেছে নতুন একটা সংবিধান রচনা করবে। আমাকে তার দায়িত্ব দিয়েছে। তারা বলেছে, আমি যা করব, তা-ই তারা গ্রহণ করবেন।’

আবদুর রাজ্জাক বললেন, ‘আপনি তাই বিশ্বাস করেন?’

অবাক হয়ে ইব্রাহিম বললেন, ‘কেন? কেন?’

আবদুর রাজ্জাক বললেন. ‘আপনি সরল মানুষ, তাই বিশ্বাস করেছেন। আসলে কনস্টিটিউশন ওরাই করবে। ওরা কেবল আপনাকে সই করতে বলবে।’

বিচারপতি ইব্রাহিম বিশ্বাস করলেন না অধ্যাপক রাজ্জাকের কথা। এ সময় আবদুর রাজ্জাক কিছুদিনের জন্য দেশ ছাড়লেন। গেলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে।

যখন ফিরলেন, তখন বিচারপতি ইব্রাহিম বললেন, ‘রাজ্জাক সাহেব, আপনি ঠিকই বলেছিলেন। ওরা কী একটা তৈরি করেছে। আমার সঙ্গে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ নাই। এখন বলছে, সই করো। আমি ওসব সইটই করব না! আমি ঢাকা এসে বসে আছি।’

আইয়ুব খান যখন সংবিধান জারি করেন, তখন বিচারপতি ইব্রাহিম রাগ করে ঢাকায় বসে ছিলেন। তারপর অসুস্থতার কথা বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। আবদুর রাজ্জাকের ধারণাই যে ঠিক ছিল, সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।

সূত্র: সরদার ফজলুল করিম স্মৃতিসমগ্র ২, পৃষ্ঠা ২৫০-২৫১

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত