Ajker Patrika

বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ: কেন পড়বেন ইতিহাস

ড. পিংকি সাহা
বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ: কেন পড়বেন ইতিহাস

কোনো একটি জাতির পূর্ববর্তী সভ্যতার সমাজব্যবস্থা ও দার্শনিক চিন্তার পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তন প্রতিফলিত হয় সেই জাতির ইতিহাসে। তাই একটি জাতিকে বোঝার জন্য তার ভৌগোলিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রগুলো জানার জন্য ইতিহাস পড়ার বিকল্প নেই। জাতি গঠনের মূল ভূমিকাটাই নানান আঙ্গিকে ইতিহাস আমাদের শেখায়। ইতিহাস এমন একটি বিষয়, যা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সমৃদ্ধ করে। এ কারণে ইতিহাস বিষয়টি পড়াশোনা করার বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্র। 

কী কী কোর্স পড়ানো হয়
এখানে রয়েছে বিভিন্ন সভ্যতার ইতিহাস, বাংলাদেশের আদি ইতিহাস, সরকার ও রাজনীতি, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ভূগোল, অর্থনীতি, ইসলামের ইতিহাস, ইউরোপের ইতিহাস, ভারতবর্ষের ইতিহাস, বাংলাদেশের নৃবিজ্ঞান ইত্যাদি। অর্থাৎ, ইতিহাসের যা যা জানা চাই, সবই পড়ানো হয়। 

কারা পড়বেন
যেসব শিক্ষার্থীর মধ্যে সব সময় নিজের শেকড়কে জানার একটি টান থাকে, তাঁর সমাজের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতে তা কোন দিকে যেতে পারে—এসব নিয়ে যাঁরা বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা করেন, তাঁদেরই ইতিহাস নিয়ে পড়ার আগ্রহ থাকবে। কারণ এটি একেবারেই মুখস্থ বিদ্যার কোনো জায়গা না, এটি সৃজনশীলতার জায়গা, অনেক কিছু অনুধাবনের জায়গা। যাঁরা সমাজকে, রাষ্ট্রব্যবস্থাকে এই ইতিহাস কী দিতে পারছে এটি চিন্তা করতে পারেন, তাঁরাই আসলে ইতিহাস পড়ার জন্য যোগ্য শিক্ষার্থী। 

কোথায় পড়বেন
বাংলাদেশের বেশির ভাগ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস একটি প্রতিষ্ঠাকালীন বিভাগ। যেসব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিষয়টি পড়ানো হয়, সেগুলো হলো: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ ও বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলো ছাড়াও এখন সরকারি নিয়মানুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য কোর্সের পাশাপাশি ‘বাংলাদেশ স্টাডিজ’ নামের একটি কোর্স পড়ানো হয়, যা ইতিহাসের পড়াশোনারই একটি অংশ। 

গবেষণার সুযোগ
ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করার সুযোগও অনেক বেশি। বিশেষ করে এই অঞ্চলের প্রাচীন যুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ইতিহাসের প্রতিটি ক্ষেত্র নিয়ে গবেষণার সুযোগ আছে। কেউ চাইলে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করতে পারবেন। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেখানে ইতিহাস পড়ানো হয়, সেখান থেকে মাস্টার্সের পর এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করা যায়। এ ছাড়া বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় যেমন—অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ, স্ট্যানফোর্ডসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিষয়টি বেশ জনপ্রিয়। 

কর্মক্ষেত্রের সুযোগ
অন্য সবার মতো ইতিহাসের শিক্ষার্থীদেরও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, এনজিও, সিভিল সার্ভিসে চাকরি করার সুযোগ রয়েছে। ইতিহাস পড়ে টেকনিক্যাল ও ননটেকনিক্যাল দুই ধরনের চাকরির সুবিধা পাওয়া যায়। এ ছাড়া দেশের প্রতিটি স্কুল-কলেজে ইতিহাস পড়ানো হয়। ইতিহাসে পড়ে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকতার সুবিধা পাওয়া যায়। রয়েছে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে আবেদন করার সুযোগ। অর্থাৎ, আপনি শিক্ষকতায় নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করতে পারেন। এখন প্রাইভেট ফার্মগুলোতেও ইতিহাসের শিক্ষার্থীরা যোগদান করছেন।

ইতিহাস পড়ার মূল উদ্দেশ্যই হলো নিজ শেকড়কে জানা। আমরা যদি এই জনপদের সৃষ্টি, এখানকার মানুষ, ভাষা, সংস্কৃতি, শাসনামল ইত্যাদি সম্পর্কে না জানি, তাহলে আমরা জাতিগতভাবে আমাদের উৎপত্তি, ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক চরিত্র কোনো কিছুই জানতে পারব না।

এর পাশাপাশি জাদুঘরে সহকারী কিউরেটর/কিপার (৯ম গ্রেড) হিসেবে যোগদানের সুযোগ রয়েছে। আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর-সিনিয়র/জুনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট (আর্কাইভ) হিসেবেও চাকরির সুবিধা বিদ্যমান। যেহেতু ইতিহাস সৃজনশীলতা চর্চার জায়গা, তাই এখানকার শিক্ষার্থীরা পত্র-পত্রিকা ও নিউজ চ্যানেলগুলোতেও কাজের সুযোগ পান। বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর গণহত্যা ও নির্যাতন নিয়ে বর্তমান সরকারের বেশ কিছু প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগের প্রকল্পগুলোতেও ইতিহাসের শিক্ষার্থীরা কাজ করতে পারেন। এটি মানুষের চিন্তাধারার দৈন্যতা যে ইতিহাস পড়লে হয়তো কেউ ভালো কোনো চাকরি পাবেন না, ভালো পর্যায়ে যেতে পারবেন না। যদি যৌক্তিকভাবে ইতিহাস পড়ানো হয় এবং শিক্ষার্থীরা যদি সেটা বুঝতে পারেন, তাহলে অবশ্যই সেটা তাঁর একটি সফল কর্মক্ষেত্র তৈরিতে সাহায্য করবে। ইতিহাস শিক্ষার সবচাইতে বড় দিক হলো, এটি এমন একজন সফল মানুষ গড়ে তোলে, যাঁর চিন্তা-চেতনায় তিনি তাঁর রাষ্ট্র, জাতি, সমাজ ও সংস্কৃতিকে ধারণ করতে পারবেন।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। 

অনুলিখন: মুসাররাত আবির

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গভর্নর আমাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়ার কে: বিএফআইইউর প্রধান শাহীনুল

সেই রুহুল আমিনের বসুন্ধরা, বনানী ও উত্তরার জমিসহ ৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক

ছাত্রীকে তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ, গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে বিয়ে

ঠাকুরগাঁওয়ের ৩টি আসনেই জয়ী হবে জামায়াত: মাওলানা হালিম

কেশবপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বর্ণের কারিগরসহ দুই ব্যক্তি নিহত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত