Ajker Patrika

অযত্নে মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থান

শেখ আবু হাসান, খুলনা
আপডেট : ১১ মার্চ ২০২২, ১৫: ৩৩
অযত্নে মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থান

দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে খুলনা মহানগরীর নিরালা কবরস্থানের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্ধারিত কবরস্থান। এই অংশের সামনের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে পড়ে আছে দীর্ঘদিন। এ ছাড়া মূল কবরস্থানের পূর্বপাশের ফটক দীর্ঘদিন ধরে ভাঙা। ফলে অবাধে বিচরণ করছে গবাদিপশু।

কবরস্থানের ভেতরের অংশ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নেই কোনো পৃথক রেজিস্ট্রি বই এবং নেই স্থায়ী নামফলক। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে জাতির বীরসন্তানদের শেষ স্মৃতিটুকু।

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) সূত্রে জানা যায়, নগরীর নিরালায় ১৪ একর জমির ওপর সরকারি কবরস্থানে শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের কবর দেওয়ার জন্য নির্ধারণ করা হয়। এই অংশটুকু আলাদা করে সীমানাপ্রাচীর, নামফলকসহ ফটক নির্মাণ করে দেয় কেসিসি। ২০১৩ সালের ৮ মে মহানগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডভুক্ত কবরস্থানটির ফলক উন্মোচন করেন কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। স্বাধীনতার পর মৃত্যুবরণ করা ৩২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে দাফন করা হয়েছে নিরালা মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানে।

গতকাল সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানের সামনের প্রাচীর ভেঙে পড়ে রয়েছে। ভেতরের অংশে আগাছার ঝোপঝাড়ে পরিণত হয়েছে। কবরস্থানের পূর্ব পাশের ফটক দীর্ঘদিন ধরে ভেঙে পড়ে থাকায় সাধারণ মানুষের অবাধ চলাচলের রাস্তায় পরিণত হয়েছে। গবাদিপশুও অবাধে বিচরণ করছে।

আশপাশের বাসিন্দাদের গরু-ছাগল বিচরণ করছিল। তবে এই প্রতিবেদককে দেখে কবরস্থানের নিরাপত্তারক্ষী কবরস্থানে বিচরণ করা গরু-ছাগল তাড়িয়ে বের করে দেয়। এ সময় আলাপ হয় নিরালা কবরস্থান জামে মসজিদের ইমাম মুফতি অলি উল্লাহ মাহমুদের সঙ্গে।

অলি উল্লাহ মাহমুদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কবরস্থানের দেয়াল ভেঙে পড়ে আছে। সংস্কার করা হচ্ছে না। কবরস্থান সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে রেজিস্ট্রিম্যান ও সিটি করপোরেশনের। আমরা বহুদিন ধরে কবরস্থান সংস্কারের কথা বলে আসছি। শুনেছি শিগগির এ ব্যাপারে কেসিসি উদ্যোগ নেবে।’

কবরস্থানের নিরাপত্তাকর্মী কাজী লিটন বলেন, ‘প্রাচীর ও গেট ভাঙা থাকায় আশপাশের মানুষ তাঁদের গরু-ছাগল ঘাস খাওয়াতে এর ভেতরে নিয়ে আসেন। তাঁদের বাধা দিতে চেষ্টা করি। কিন্তু সবসময় তা হয়ে ওঠে না।’

কবরস্থানের দায়িত্বরত রেজিস্ট্রিম্যান মাহমুদুল হাসান বলেন, গত আম্ফানে গাছ পড়ে কবরস্থানের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে গেছে। এ বিষয়ে তিনি কেসিসির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে কবরস্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। তবে এতে খুব একটা কাজ হচ্ছে না। কবরস্থান সংস্কারের সময়ই সম্পূর্ণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হবে বলে। তবে এর মধ্যে কেউ ব্যক্তি উদ্যোগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে চাইলে করতে পারবেন।

কেসিসির এস্টেট কর্মকর্তা নুরুজ্জামান তালুকদার আজকের পত্রিকাকে জানান, পুরাতন হওয়ায় দু-চার মাস আগে কবরস্থানের সীমানাপ্রাচীরের একাংশ ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করায় কবরস্থানের ভেতরের অংশ আগাছায় ছেয়ে গেছে। বিষয়টি কেসিসি কর্তৃপক্ষ জানার পর সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। শিগগির কাজ শুরু হবে। সংস্কার শুরু হলে পুরো কবরস্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত