Ajker Patrika

দুই জরিনা

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২২, ১৭: ৪৮
দুই জরিনা

মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলে ফেরদৌসী মজুমদার নাটক করতেন থিয়েটারে। সবাই জানেন, মঞ্চনাটক মুক্তিযুদ্ধের সেরা ফসলের একটি। সে সময় মঞ্চে এসেছিলেন যাঁরা, তাঁরা চিন্তায়-চেতনায় বাংলা সংস্কৃতিকে ধারণ করেছিলেন।

থিয়েটার তাদের দ্বিতীয় মঞ্চনাটক ‘এখন দুঃসময়’ মঞ্চে এনেছিল ১৯৭৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। আবদুল্লাহ আল-মামুন সেই নাটকটি লিখেছিলেন। নির্দেশনাও দিয়েছিলেন তিনি। সে সময়কার ভয়ানক বন্যার পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে ছিল নাটকটি। সেই নাটকে একটিই মাত্র নারী চরিত্র—জরিনা। এই চরিত্রে অভিনয় করতেন ফেরদৌসী মজুমদার। ব্যাপারীর ভূমিকায় অভিনয় করতেন আবদুল্লাহ আল-মামুন স্বয়ং। এই নাটকে জরিনা চরিত্রটির মধ্যে পরিবর্তন আছে। শুরুতে মেয়েটি মলিন, শীর্ণ। ক্ষুধার জ্বালায় জ্বলন্ত তার দুটি চোখ। ময়লা শতচ্ছিন্ন সুতির শাড়ি পরনে। ব্লাউজটাও ছেঁড়া। এ রকম পোশাকে অভিনয় করেই পরের দৃশ্যে দেখা যেত পরিবর্তিত জরিনাকে। এই জরিনা ব্যাপারীর কল্যাণে ঝকঝকে জরিনা। ব্যাপারী জরিনার দারিদ্র্যের সুযোগে তাকে নিজের কাছে নিয়ে এসেছে। ভাতে-কাপড়ে ভালোই রেখেছে। কিন্তু জরিনা তাকে ঘৃণা করে।

মজার ব্যাপার হলো, মলিন জরিনা আর চকচকে জরিনা মাত্র দুই মিনিটের ব্যবধানে মঞ্চে আসে। এত কম সময়ে পোশাক পাল্টে মঞ্চে আসা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু দর্শকেরা এত দ্রুত ফেরদৌসী মজুমদারকে দুই পোশাকে দেখবেন, তা ভাবতেই পারতেন না। এটা তাঁদের চোখে এক অসম্ভব ব্যাপার ছিল।

কী করে ঘটনাটি ঘটাতেন ফেরদৌসী মজুমদার? আসলে তিনি প্রথমে চকচকে জরিনার গেটআপ নিতেন। তার ওপর পরতেন শতচ্ছিন্ন শাড়ি-ব্লাউজ। ফলে চকচকে ছাপা শাড়িটা ঢেকে যেত শতচ্ছিন্ন শাড়ি দিয়ে। দর্শক বুঝতেই পারতেন না তা। ক্ষুধার্ত অভাবী জরিনা মঞ্চ থেকে বের হয়েই দ্রুত খুলে ফেলতেন ওপরের শাড়ি। উইংসের পাশে কেউ একজন দাঁড়িয়ে থাকত রঙিন কাচের চুড়ি, ফিতে আর দুল নিয়ে। দ্রুত সেগুলো পরে আবার ফিরে আসতেন মঞ্চে। খোঁপা খুলে হাওয়াই মিঠাই ফিতে দিয়ে চুল পেছনে বাঁধলেই এ এক অন্য জরিনা!

সূত্র: ফেরদৌসী মজুমদার, অভিনয়জীবন আমার, পৃষ্ঠা ২৯-৩০

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত