Ajker Patrika

অবৈধ ভাটায় পুড়ছে কাঠ

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২২, ১৫: ৩৮
অবৈধ ভাটায় পুড়ছে কাঠ

পরিবেশ দূষণের অপরাধে বরিশালে গত এক সপ্তাহ ধরে অবৈধ ইটভাটাগুলোতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। প্রধান কার্যালয় থেকে আসা একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এ অভিযানে জেলার ১৭টি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সপ্তাহ পার হতে না হতেই ভেঙে ফেলা ইটভাটার অনেকগুলোই ফের চালু হয়েছে।

ঘটা করে চালানো এ বিশেষ অভিযান সত্ত্বেও জেলায় ১৭২টি অবৈধ ইটভাটার অধিকাংশে এখনও দেদার পুড়ছে কাঠ। এর অনেকটাই হয় স্কুল-কলেজের পাশে না হয় ধানি জমিতে। জানা গেছে, রাজনৈতিক চাপে অনেক স্থানে দূষণকারী অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক আবদুল হালিম স্বাক্ষরিত গত ১২ জানুয়ারির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নওরীন হকের নেতৃত্বে মেঘনাঘেরা মেহেন্দীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে ৪টি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে ফেলার পাশাপাশি ১১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এসব ইটভাটা কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশ দূষণ ঘটাত।

অভিযানে থাকা ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ৪টি ইটভাটার মধ্যে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ধুলিয়া মধ্যচর এলাকার মেসার্স ধনিয়া ব্রিকসের মালিক উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ভাইস চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম ভুলু। খোরশেদ আলম স্থানীয় সাংসদ পংকজ নাথের ঘনিষ্ঠ সহচর। সূত্র জানায়, ওই ইটভাটা ভাঙার জেরে তোলপাড় ঘটে সর্বত্র। দুই দিন পর ১৫ জানুয়ারি একই উপজেলায় অভিযান চালিয়ে আরও ৫টি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে ফেলার পাশাপাশি ৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে মেহেন্দীগঞ্জের পশ্চিম ভাঙ্গা এলাকার মেসার্স আলম ব্রিকসের মালিক উপজেলা চেয়ারম্যান মাহফুজুল আলম লিটন। এক সপ্তাহ আগে ভেঙে ফেলা এসব ইটভাটা ক্ষমতার জোরে আবার চালু করা হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। চেয়ারম্যান লিটন ও খোরশেদ দুজনই সাংসদ পংকজের অনুসারী হলেও সম্প্রতি উপজেলা চেয়ারম্যান লিটন সাংসদের বলয় থেকে বেরিয়ে এসেছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান লিটন অবশ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তার ইটভাটায় জরিমানা করায় তিনি ভাটার কাজ আবার শুরু করেছেন। অপরদিকে ভাইস চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম ভুলু সাংবাদিকদের বলেছেন, পরিবেশ অধিদপ্তর বেছে বেছে ইটভাটায় হানা দিয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বরিশাল জেলায় মোট ২৫০টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে অবৈধ ১৭২টি। গত এক সপ্তাহে অভিযান চালিয়ে ১৭টি অবৈধ ইটভাটার চিমনি ভেঙে ফেলার পাশাপাশি ২৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

কেন এত ইটভাটা অবৈধ এ প্রসঙ্গে জানা গেছে, এসব ইটভাটাগুলোর একাংশের ড্রাম চিমনি, যা পরিবেশ দূষণকারী। আর কিছুর চিমনি জিকজ্যাক হলেও স্কুল-কলেজ অথবা ফসলি জমির মধ্যে হওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পায়নি।

সূত্রমতে, বরিশাল সদর উপজেলায় ২৮টি ইটভাটার মধ্যে ১৭টিই অবৈধ। সদর উপজেলার চরকাউয়া ঘুরে জানা গেছে, সেখানকার ফুজি, আরাফাত, ইকো ব্রিকস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে উঠেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা কলেজছাত্র শাওন খান বলেন, চরকাউয়া ইউনিয়নের জনতার হাটের ফুজি ব্রিকস গড়ে উঠেছে আজাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে। এ ছাড়া আরাফাত ব্রিকস দুর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ঘিরে গড়ে ওঠায় ঘটছে দূষণ।

এদিকে জেলায় সবচেয়ে বেশি ইটভাটা আছে বাকেরগঞ্জে, ৮০টি। এর মধ্যে ৫৭টি অবৈধ বলে জানা গেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর চলমান অভিযানে এ উপজেলার ৬টি ইটভাটা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের চাপে এখানে বরাবরই অভিযান ব্যাহত হচ্ছে বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. আবদুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘লোকবলের অভাবে সব জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না। উচ্ছেদের পরও নতুন করে অবৈধ ভাটা চালু করা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০-১২তম গ্রেডে নিয়োগ: প্রতি পদের বিপরীতে দুজন থাকবেন অপেক্ষমাণ

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

ইতিহাস গড়ে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে আইএসআইপ্রধান

সাবেক ‘র’-এর প্রধানের নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত