Ajker Patrika

জেলি মেশানো চিংড়িতে বিপদ

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম)
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ১৫: ০৫
জেলি মেশানো চিংড়িতে বিপদ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পাইকারি মাছের বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে বিষাক্ত জেলি মেশানো চিংড়ি। ক্রেতাদের অসচেতনতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা এই অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছেন।

অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার আশায় চিংড়ির ওজন বাড়াতে ব্যবহার করছেন বিষাক্ত জেলি। অস্বাস্থ্যকর এসব চিংড়ি খেয়ে পেটের পীড়াসহ কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এর প্রতিকারে অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কিছু ব্যবসায়ী চিংড়ির ওজন বাড়াতে ও অধিক মুনাফার আশায় ফিটকিরির পানি, অ্যারারুট, ময়দা, বার্লিসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে ক্ষতিকর জেলি তৈরি করেন। পরে তা সিরিঞ্জ দিয়ে চিংড়ির শরীরে ঢোকান। চিংড়ির মাথার কাছে ভাঙলে এর উপরিভাগে নরম একটি আলগা আবরণ দেখা যায়, সেটিই হচ্ছে জেলি। সেটা শক্ত কোনো কিছু দিয়ে খোঁচা দিলে বের হয়ে আসে।

সীতাকুণ্ড পৌর সদরের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, বাজারের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক লাভের জন্য চিংড়িতে জেলি মিশিয়ে বিক্রি করছেন। এসব চিংড়ি কম দামে কিনতে গিয়ে ঠকছেন ক্রেতারা।

সীতাকুণ্ড পৌর সদর বাজারের পাইকারি মাছের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জাবেদ আলী বলেন, ‘সাতক্ষীরা, যশোর, বাগেরহাট, খুলনা, রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্থান থেকে এনে সীতাকুণ্ডসহ পুরো চট্টগ্রামের চিংড়ির চাহিদা মেটানো হয়। মূলত সেখানেই চিংড়িতে জেলি মেশানো হয়।’ তিনি দাবি করেন, সাম্প্রতিক সময়ে চিংড়ির জোগান বেড়েছে। ভেজাল বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা না করায় ভেজালকারীরা স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সীতাকুণ্ড উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন অনিক জানান, তিনি পৌর সদরের বাজার থেকে নিয়মিত বাজার করেন। প্রত্যেক মাছ ব্যবসায়ী নিজেকে সাধু দাবি করেন। এক দোকানি পাশের দোকানির বিরুদ্ধে জেলি মেশানোর অভিযোগ করেন। প্রত্যেকেই দাবি করেন, তিনি জেলি মেশান না, পাশের জন করেন। সে হিসেবে দেখা যায়, বাজারের সব কটি দোকানের চিংড়িতে জেলি মেশানো হয়।

নাছির উদ্দিন আরও জানান, উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরকে এ বিষয়ে তদারকি জোরদার করতে হবে। বাজার মনিটরিং ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান বাড়াতে হবে।

পৌর সদর বাজারে আসা ক্রেতা খুরশীদ আলম বলেন, ‘চিংড়িতে জেলি মেশানোর কথা জানি না। আর জেনেই বা কী হবে? যা খাই সবই তো ভেজাল।’

ক্রেতা জহিরুল ইসলাম জানান, চিংড়িতে অপদ্রব্য মেশানোর বিষয় কিছুটা জানা রয়েছে। কেনার সময় প্রতিটি মাছ তো আর দেখে কেনা যায় না। এতে জেনে-শুনে ভেজাল খেতে হচ্ছে। এ কারণে প্রতিনিয়ত অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে প্রতারণার শিকার হতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামীম আহমেদ জানান, ওজন বাড়ানোর জন্য চিংড়িতে জেলি মেশানো হয়। এক কেজি চিংড়িতে ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম জেলি মেশানো হয়। তিনি দাবি করেন, বিশেষ করে পৌর সদরের নামীদামি রেস্টুরেন্টসহ উপজেলার বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্টে জেলি মিশ্রিত চিংড়ি বেশি খাওয়ানো হয়। বড় আকৃতির গলদা চিংড়িতে বেশি পরিমাণে জেলি মেশানো হয়।

শামীম আহমেদ আরও বলেন, ‘অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বার্লি, সাগু, ময়দাসহ ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশিয়ে চিংড়ির মাথায় পুশ করা হয়। চিংড়ি কেনার সময় একটু সচেতন হলে তা ধরা পড়ে।’

সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুর উদ্দিন বলেন, ‘চিংড়িতে আলাদাভাবে প্রতিস্থাপন করা জেলি মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এসব অস্বাস্থ্যকর খাদ্য পেটের পীড়া, ক্ষুধামান্দ্য, ডায়রিয়া, বমিভাব, মুখে ঘা, পেটে আলসার সৃষ্টি করে। সব বয়সী মানুষের পাশাপাশি শিশুদের জন্য জেলি মিশ্রিত চিংড়ি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এতে শিশুদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্রমশই কমতে থাকে। জেলি মিশ্রিত চিংড়ি নিয়মিত খেলে লিভার বা কিডনি আক্রান্ত হতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত