নাফিসা চৌধুরী
সেদিন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন, বিবিএ বিভাগের প্রথম ক্লাস। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পাওয়া অনেক ছাত্র যাঁদের মধ্যে অধিকাংশ একই কলেজ থেকে পাস করে বের হয়েছিলাম। সবাই খুব হতাশ, বাবা-মায়ের কাছ থেকে বকা খেয়ে, নানান জনের নানান কথা শুনে, মাথা নত করে এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি বা করিয়ে দেওয়া হয়েছে আমাদের।
বিজনেস কমিউনিকেশনের একজন শিক্ষক কক্ষে প্রবেশ করলেন। যেহেতু প্রথম দিন তাই সবার সঙ্গে জানাশোনা আর গল্প হবে। কে কোথা থেকে পাস করেছেন জিজ্ঞেস করায় জানতে পারলেন, আমরা প্রায় সবাই এক জেলখানার কয়েদি (কলেজকে আমরা জেলখানা বলতাম)। এরপর জানতে চাইলেন কে কত গ্রেড পেয়েছি, সেটাও প্রায় একই, একটা বা দুটো বিষয়ের জন্য এ প্লাসটা ছুটে গেছে। আমাদের কথা শুনে আর চেহারা দেখেই কিনা জানি না, ম্যাম হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন, আমাদের মনের অবস্থা।
তিনি হঠাৎ জিজ্ঞেস করে বসলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কারও কোনো বন্ধু কি মারা গেছে?’
উত্তর এল, ‘না।’
‘তোমাদের মধ্যে কারও কোনো বন্ধু জেলখানায় আছে?’
এমন প্রশ্ন আমাদের সচকিত করে দিল, উত্তর দেওয়ার বদলে আমরা বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন থাকবে জেলে?’
ম্যাম হেসে ফেললেন। বললেন, ‘বাস্তবতা থেকে তো এখনো অনেক অনেক দূরে আছ তোমরা, এখনই এত হতাশ, তা-ও এই রেজাল্ট আর ভার্সিটি অ্যাডমিশন নিয়ে?’
আমাদের তিনি আরও কিছু কথার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিলেন যে জীবনে আরও অনেক অনেক কঠিন ব্যাপার ঘটে, যার অনেক কিছুই আমরা এখনো দেখিনি বা মুখোমুখি হইনি সেসব ঘটনার।
আমার সেই কথাটা কেন যেন বারবার ঘুরেফিরে মনে হতো। আজ দশ বছর পর বুঝতে পারছি সে কথার মর্মার্থ। বাস্তবতা যে কঠিন, বাস্তবতা যে রঙিন স্বপ্নের মতো নয়। জীবন যে একটা যুদ্ধ, সেটা এখন অনেকটাই বুঝি। আত্মীয় হারানোর বেদনা এক আর বন্ধু হারানোর বেদনা অন্য রকম তীব্র। হ্যাঁ, কলেজে একই কোচিংয়ে পড়ার সময় একটা মেয়ে ছিল যে আমার খুব কাছের বন্ধু ছিল না। শুধু চিনতাম, কলেজে ভর্তির পর জানলাম মেয়েটা মারা গেছে, এসএসসি পরীক্ষার ফলও শুনে যেতে পারেনি। শুনে খুব খারাপ লেগেছিল।
কিন্তু যখন একসঙ্গে আজ ঘোরাঘুরি করার পর, অনেক কথা বলার পর কাল জানা যায়, সেই মানুষটা আর নেই, তখন সেটা মেনে নেওয়া যায় না। সত্য জেনেও বিশ্বাস হয় না। মৃত্যু অবধারিত জেনেও আমরা কাছের মানুষের চলে যাওয়া মেনে নিতে পারি না অথবা চাই না। আর সেটা যদি হয় আত্মহনন, তখন নিজেকে অপরাধী মনে হয়, মনে হয় আমার নিজের কী ভুল ছিল? আমি হয়তো ভালো বন্ধু হতে পারিনি।
স্বপ্ন নিয়ে মানুষ বাঁচে, আর সেই মানুষটা মরে গেলে সঙ্গে তার সব স্বপ্নগুলোও নিয়ে চলে যায়! আমার নিজের জীবনের হতাশার একপর্যায়ে আমিও ভাবতাম হয়তো মরে গেলে মুক্তি, কিন্তু তা কখনোই আত্মাহুতি হওয়া উচিত নয়। কারণ, পৃথিবীতে কেউ থাকে যে আমাকে ভালোবাসে, মন থেকেই বাসে। আমার এক বন্ধু কলেজ পাস করার পর এক মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভাঙার কারণে জীবন শেষ করে দিতে চাইছিল। একটা বছর আমাকে সেই বন্ধুটি রাতে ফোন দিয়ে অনবরত কথা বলে যেত, আমি শুনতাম, ধৈর্য ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আজ সে আমাকে বলে, যদি আমি সে সময় তার কথাগুলো না শুনতাম, হয়তো আজ তাকে জীবিত পেতাম না। রাতের সময়ে তার মধ্যে সেই ভয়ংকর ভাবনা আরও বেশি জেঁকে বসত। আমি বুঝতে পেরেছিলাম কারণ আমিও আরও ভয়ংকর পরিস্থিতি পার করে নিজেকে ভালোবাসতে পেরেছি। বেঁচে থাকাটা সুন্দর।
সেদিন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন, বিবিএ বিভাগের প্রথম ক্লাস। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পাওয়া অনেক ছাত্র যাঁদের মধ্যে অধিকাংশ একই কলেজ থেকে পাস করে বের হয়েছিলাম। সবাই খুব হতাশ, বাবা-মায়ের কাছ থেকে বকা খেয়ে, নানান জনের নানান কথা শুনে, মাথা নত করে এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি বা করিয়ে দেওয়া হয়েছে আমাদের।
বিজনেস কমিউনিকেশনের একজন শিক্ষক কক্ষে প্রবেশ করলেন। যেহেতু প্রথম দিন তাই সবার সঙ্গে জানাশোনা আর গল্প হবে। কে কোথা থেকে পাস করেছেন জিজ্ঞেস করায় জানতে পারলেন, আমরা প্রায় সবাই এক জেলখানার কয়েদি (কলেজকে আমরা জেলখানা বলতাম)। এরপর জানতে চাইলেন কে কত গ্রেড পেয়েছি, সেটাও প্রায় একই, একটা বা দুটো বিষয়ের জন্য এ প্লাসটা ছুটে গেছে। আমাদের কথা শুনে আর চেহারা দেখেই কিনা জানি না, ম্যাম হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন, আমাদের মনের অবস্থা।
তিনি হঠাৎ জিজ্ঞেস করে বসলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কারও কোনো বন্ধু কি মারা গেছে?’
উত্তর এল, ‘না।’
‘তোমাদের মধ্যে কারও কোনো বন্ধু জেলখানায় আছে?’
এমন প্রশ্ন আমাদের সচকিত করে দিল, উত্তর দেওয়ার বদলে আমরা বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন থাকবে জেলে?’
ম্যাম হেসে ফেললেন। বললেন, ‘বাস্তবতা থেকে তো এখনো অনেক অনেক দূরে আছ তোমরা, এখনই এত হতাশ, তা-ও এই রেজাল্ট আর ভার্সিটি অ্যাডমিশন নিয়ে?’
আমাদের তিনি আরও কিছু কথার মাধ্যমে বুঝিয়ে দিলেন যে জীবনে আরও অনেক অনেক কঠিন ব্যাপার ঘটে, যার অনেক কিছুই আমরা এখনো দেখিনি বা মুখোমুখি হইনি সেসব ঘটনার।
আমার সেই কথাটা কেন যেন বারবার ঘুরেফিরে মনে হতো। আজ দশ বছর পর বুঝতে পারছি সে কথার মর্মার্থ। বাস্তবতা যে কঠিন, বাস্তবতা যে রঙিন স্বপ্নের মতো নয়। জীবন যে একটা যুদ্ধ, সেটা এখন অনেকটাই বুঝি। আত্মীয় হারানোর বেদনা এক আর বন্ধু হারানোর বেদনা অন্য রকম তীব্র। হ্যাঁ, কলেজে একই কোচিংয়ে পড়ার সময় একটা মেয়ে ছিল যে আমার খুব কাছের বন্ধু ছিল না। শুধু চিনতাম, কলেজে ভর্তির পর জানলাম মেয়েটা মারা গেছে, এসএসসি পরীক্ষার ফলও শুনে যেতে পারেনি। শুনে খুব খারাপ লেগেছিল।
কিন্তু যখন একসঙ্গে আজ ঘোরাঘুরি করার পর, অনেক কথা বলার পর কাল জানা যায়, সেই মানুষটা আর নেই, তখন সেটা মেনে নেওয়া যায় না। সত্য জেনেও বিশ্বাস হয় না। মৃত্যু অবধারিত জেনেও আমরা কাছের মানুষের চলে যাওয়া মেনে নিতে পারি না অথবা চাই না। আর সেটা যদি হয় আত্মহনন, তখন নিজেকে অপরাধী মনে হয়, মনে হয় আমার নিজের কী ভুল ছিল? আমি হয়তো ভালো বন্ধু হতে পারিনি।
স্বপ্ন নিয়ে মানুষ বাঁচে, আর সেই মানুষটা মরে গেলে সঙ্গে তার সব স্বপ্নগুলোও নিয়ে চলে যায়! আমার নিজের জীবনের হতাশার একপর্যায়ে আমিও ভাবতাম হয়তো মরে গেলে মুক্তি, কিন্তু তা কখনোই আত্মাহুতি হওয়া উচিত নয়। কারণ, পৃথিবীতে কেউ থাকে যে আমাকে ভালোবাসে, মন থেকেই বাসে। আমার এক বন্ধু কলেজ পাস করার পর এক মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভাঙার কারণে জীবন শেষ করে দিতে চাইছিল। একটা বছর আমাকে সেই বন্ধুটি রাতে ফোন দিয়ে অনবরত কথা বলে যেত, আমি শুনতাম, ধৈর্য ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আজ সে আমাকে বলে, যদি আমি সে সময় তার কথাগুলো না শুনতাম, হয়তো আজ তাকে জীবিত পেতাম না। রাতের সময়ে তার মধ্যে সেই ভয়ংকর ভাবনা আরও বেশি জেঁকে বসত। আমি বুঝতে পেরেছিলাম কারণ আমিও আরও ভয়ংকর পরিস্থিতি পার করে নিজেকে ভালোবাসতে পেরেছি। বেঁচে থাকাটা সুন্দর।
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৪ দিন আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৪ দিন আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৪ দিন আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫