Ajker Patrika

বন নিধন, নদীর তীর দখল

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৫১
বন নিধন, নদীর তীর দখল

পাহাড়, সমুদ্র ও নদীর মেলবন্ধনে ছোট্ট এক শহর পর্যটননগরী কক্সবাজার। এই শহরের উত্তর পাশে এঁকেবেঁকে বাঁকখালী নদীর মহেশখালী চ্যানেল হয়ে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। এ নদীর মোহনাকে ঘিরেই এ শহরের সভ্যতা, সাগরপথে যোগাযোগ ও বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। কিন্তু সম্প্রতি এই মোহনার কস্তুরাঘাটের সৃষ্ট প্যারাবন নিধন করে নদীর তীর দখল করে নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী চক্র।

শহরের সদর থানার সামনে কস্তুরাঘাট ও খুরুশকুলের সংযোগ স্থাপনে বাঁকখালী নদীর ওপর ৫৯৫ মিটার দৈর্ঘ্য একটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এই সেতুটি নির্মিত হলে শহরের সঙ্গে বিকল্প সড়ক যোগাযোগ তৈরি হবে।

অভিযোগ রয়েছে, সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করার আগেই প্রভাবশালীরা সেতুর আশপাশে দখলে মেতে উঠেছে। প্রভাবশালীরা ইতিমধ্যে প্যারাবনের গাছপালা কেটে, নদী থেকে বালু তুলে তীরের জলাভূমি ভরাট করে প্লট তৈরি করছে। সেখানে গত দুই মাসের মধ্যে টিনের বেড়া দিয়ে শতাধিক ঘরবাড়ি ও স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর দখলদারদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে। তারপরও থেমে নেই দখল তৎপরতা। গত শুক্রবার কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আমিন আল পারভেজসহ জেলা প্রশাসনের একটি দল সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন।

বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কস্তুরাঘাট ও নুনিয়ারছড়া এলাকায় বাঁকখালী নদীর তীরে ৬০০ হেক্টর প্যারাবন রয়েছে। এ প্যারাবনে প্রায় ২০৫ প্রজাতির পাখ-পাখালি ও জলজ প্রাণীর আবাসস্থল। অন্তত দুই দশক আগে ওয়েস্কা ইন্টারন্যাশনাল নামের জাপানের একটি পরিবেশবাদী সংগঠন এই এলাকায় প্রায় ৬০০ হেক্টর প্যারাবন সৃজন করেছিল।

পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, এভাবে প্যারাবনের গাছপালা উজাড়ের কারণে বিভিন্ন প্রাণী ও পাখির আবাসস্থল সংকটের পাশাপাশি ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য।

সরেজমিন শহরের কস্তুরাঘাট থেকে সংযোগ সড়ক ধরে যেতেই প্যারাবনের ভেতরে অসংখ্য টিনের বেড়া। ঘেরার ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে কেওড়া, বাইনসহ বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্মাণাধীন সেতুর পশ্চিম পাশসংলগ্ন প্যারাবনে সদ্য দেওয়া ঘেরার ভেতরে কাটা হয়েছে বিশাল বন। সেখানে আধা পাকা বাড়ি ও টিনের ঘর তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে অন্তত শতাধিক বাড়ি তোলা হয়েছে।

সেতুর কাছে প্রায় ৫ একর জায়গাজুড়ে টিনের ঘেরা দিয়েছেন স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি। ওই জায়গাটি নদী থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু তুলে ভরাট করা হচ্ছে। এরপর প্লট বানিয়ে একেকটি ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান এলাকাবাসী।

বাঁকখালী নদীর দখল ও দূষণ বন্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটিসহ (ইয়েস) বেশ কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন আন্দোলন করে আসছে।

২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বেলার এক রিট আবেদনে হাইকোর্ট বাঁকখালী নদী দখলদারদের তালিকা তৈরি করে উচ্ছেদ ও দূষণের উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধের আদেশ দেন। পাশাপাশি যেকোনো উদ্দেশ্যে নদীর জমি ইজারা থেকে বিরত থাকতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।

ইয়েসের প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, গত দুই মাসে কস্তুরাঘাট এলাকায় প্যারাবনের প্রায় ৪০ হাজার কেওড়া ও বাইনগাছ কেটে শতাধিক টিনের ঘর তৈরি করা হয়েছে। এতে দখল ও দূষণে নদীর গতিপথ সংকুচিত হয়ে আসছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ এবং কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দখল, দূষণ এবং ভরাটের কারণে এখন এ নদীর কোথাও ৪০০ মিটার, কোথাও ২০০ মিটারে এসে দাঁড়িয়েছে।

বাঁকখালী নদীর দখল ও প্যারাবন নিধন বন্ধে সম্প্রতি দুটি মামলা করেছে বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা। তারপরও প্যারাবন দখল ও দূষণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে নিয়মিত অভিযানও চালানো যাচ্ছে না।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ এ প্রসঙ্গে বলেন, সরেজমিন পরিদর্শনে প্যারাবন নিধন ও দখলের সত্যতা পাওয়া গেছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং দখলদারদের উচ্ছেদে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখামাত্র পুতিনকে গ্রেপ্তারের আহ্বান

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

পাবনায় প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে এএসআই উধাও, থানায় শ্বশুরের জিডি

সিঙ্গাপুরে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ, আবেদন ফি মাত্র ৭ হাজার টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত