Ajker Patrika

পোস্টটি ডিলিট করা হয়েছে, কিন্তু...

সম্পাদকীয়
পোস্টটি ডিলিট করা হয়েছে, কিন্তু...

গান বাজালে জরিমানা করা হবে, এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার একটি গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা। গছিখাইর গ্রামের বদিউজ্জামান ও জামাল মিয়া গান বাজালে ২০ হাজার টাকা জরিমানা হবে—এ-সংক্রান্ত একটি বয়ান ফেসবুকে পোস্ট করেন। এরপর প্রতিবাদ ওঠে স্থানীয়ভাবেই। পুলিশ জানতে চায় ঘটনাটি। তোপের মুখে পড়ে উধাও করে দেওয়া হয় ‘গছিখাইর গ্রামবাসী’র নামে প্রচার করা ফেসবুক পোস্টটি।

পোস্টটি ডিলিট করা হয়েছে, কিন্তু তাতে ওই ‘গছিখাইর গ্রামবাসী’ আদৌ তাঁদের এই কলুষিত ভাবনাটিও মন থেকে ডিলিট করে দিয়েছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়; বরং তাঁদের মনে যে গান-বাজনার ব্যাপারে যথেষ্ট ঘৃণা আছে, সেটা না বোঝার কোনো কারণ নেই।

‘গ্রামবাসী’র নামে প্রচার করা এই পোস্টের একজন রূপকার বদিউজ্জামান সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী। নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে তিনি বলেছেন, তাঁদের ছোট গ্রামটিতে বিয়ে, জন্মদিন, সুন্নতে খাতনা প্রভৃতি অনুষ্ঠানের সময় চার-পাঁচটা সাউন্ড বক্স লাগিয়ে গান-বাজনা করলে সমস্যা হয়। তিনি বলেছেন, ‘গ্রামের সবাই যেহেতু মুসলমান, তাই এ নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি।’ এর একটা অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ‘মুসলমানরা’ গান-বাজনার পক্ষপাতী নয়। যদি গ্রামের কারও কোনো সমস্যাই না হয়, তাহলে পরে তিনি তাঁর পোস্টটি ডিলিট করে দিয়েছেন কেন? সেই সঙ্গে এ প্রশ্নও করা সংগত, তিনি কি উচ্চ স্বরে করা ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করতে পারবেন? স্কুল-কলেজে পরীক্ষা চলাকালে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় ওয়াজের নামে মানুষে মানুষে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, নারীর অবমাননা করা হচ্ছে, অবলীলায় মিথ্যা তথ্যের বয়ান করা হচ্ছে—এ ব্যাপারে ভূমি অফিসের এই কর্মচারীর বক্তব্য কী? এগুলোর ওপরও কি জরিমানা আরোপ করা হবে? 
মূলত মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ এ দেশটায় দুর্নীতি-ঘুষ ইত্যাদি খুব একটা কমেনি। তাই ধর্ম পরিচয়ে কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে তা ধর্মের মূল স্পিরিটের বিপক্ষেই যায়। এ ধরনের কিছু বদিউজ্জামান সমাজের নানা জায়গায় আছেন বলেই সমাজের মূল শক্তি কখনো কখনো বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে।

অন্যের অসুবিধা করে যেকোনো কাজ করারই বিরোধী আমরা। কিন্তু গান-বাজনা করলে জরিমানার কথা যাঁদের মাথায় আসে, তাঁরা অন্যের সঙ্গে বোঝাপড়া না করে সরাসরি ‘নির্দেশ’ দিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। ‘অন্যের অসুবিধা যেন না হয়’ সেভাবে কি গান চালাতে অনুরোধ করেছেন তাঁরা? লোকজ সমাজে, জনপদে মুক্তিকামী মানুষ সব সময়ই মুক্ত সহজাত সংস্কৃতির পক্ষে দাঁড়িয়েছে। এমনকি চলচ্চিত্রেও ‘কোন কিতাবে লেখা আছে গো হারাম বাজনা গান’ বলে একটি অসাধারণ গানের দেখা পাওয়া যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সময়োপযোগী করে নেওয়া না হলে যেকোনো বিশ্বাসই যান্ত্রিক বিশ্বাসে পরিণত হয়, সে কথা মনে রেখেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বদিউজ্জামান গং যেন প্রকাশ্যে তাদের দুর্বিনীত আচরণের জন্য ক্ষমা চায়, তা নিশ্চিত করলেই কেবল এ বিষয়ে সঠিক বার্তা পাবে দেশের জনগণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৫ দেশে সফর বাতিল করলেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনি

বাংলা বলায় কলকাতার মার্কেটে ছুরি, বন্দুকের বাঁট ও হকিস্টিক নিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা

চাকরির নামে মিরপুর-শেওড়াপাড়ায় বাসায় ডেকে নারীর সঙ্গে ভিডিও ধারণের পর টাকা হাতিয়ে নিত ‘হানি ট্র্যাপ’ চক্র

দুস্থদের ৩৪ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা মোহনগঞ্জ সমাজসেবা কর্মকর্তা

জয়পুরহাটে হত্যা মামলায় স্কুলশিক্ষক গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত