Ajker Patrika

চাল ও ডাল কিনলেই মিলছে সয়াবিন তেল

শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
চাল ও ডাল কিনলেই মিলছে সয়াবিন তেল

তারাগঞ্জের হাটবাজারে সয়াবিন তেল বিক্রিতে কৌশল পাল্টাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ উঠেছে, চাল-ডাল কিনলে তবেই মিলছে তেল। সেই সঙ্গে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দামও বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এমন অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা।

গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি লিটার বোতলজাত  সয়াবিন তেল ১৮৫ থেকে ১৯০ এবং খোলা তেল ২০০ টাকা লিটার দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকার নির্ধারিত মূল্যে প্রতি লিটার বোতলজাত তেল ১৬৫ টাকা ও খোলা তেল ১৩৬ টাকা। এ ছাড়া বিক্রেতারা তেলের সঙ্গে চাল ও ডাল প্যাকেজ করে বিক্রি করছেন।

উপজেলার পাঁচটি বাজারের অন্তত ১৫ জন খুচরা বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা পাইকারি পর্যায়ে তেল কিনতে গিয়ে চাহিদার অর্ধেকও পাচ্ছেন না। তেল থাকলেও কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়েছেন পাইকারেরা। এমন অবস্থায় বেশি দামে তেল বিক্রি করতে গিয়ে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত তর্কে জড়াতে হচ্ছে তাঁদের। তেল না থাকায় অনেকে ঈদ উপলক্ষে প্যাকেজ করে এর সঙ্গে চাল ও ডাল বিক্রি করছেন।

বাজারে আসা নিজবাড়ি গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ছে তাক জানি। কিন্তু তেলের সঙ্গে যে ডাল-চাল কিনার নাগবে তাক তো জানি না। কন তো হামার নাগবে তেল, ডাল-চাল দিয়া কী করমো! ওগল্যা তো বাড়িতে আছে। সরকারের লোকজন এইগলা দেখছে না?’
কথা হয় দোলাপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক রবিউল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কোন দ্যাশোত বাস করি কন! নিজের ইচ্ছে মতোন খরচও করির পাই না। ১৬৫ টাকার তেল ২০০ টাকা নেওছে। ফির তেল নিবার গেইল হয় চাল নাই ডাল কিনবার নাগবে বলে দোকানিরা কওছে। কোন আইনোত এই কথা লেখা আছে? হামাক কি বাঁচপার দেবে না?

তেলের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বলে জানান ইকরচালী বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মহুবার হোসেন। তিনি বলেন, পাইকারিতে সরকার নির্ধারিত খুচরা মূল্যের চেয়ে লিটার প্রতি ১০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তবুও তেল পাওয়া যাচ্ছে না। পাইকারেরা বলছেন ডিপো থেকে তেল ছাড় করা হচ্ছে না।     
তেলের দামে আগুন লেগেছে উল্লেখ করে বামনদীঘি বাজারের খুচরা মাল বিক্রেতা মিলন মিয়া বলেন, ‘একবার দাম কমাইলে তিনবার বাড়ে। সেটা জনগণ বুঝে কিন্তু মানে না। তেল কিনার আইলে খাচাল করে, সরকারি নির্দেশনা দেখায়। ডিলারেরা দাম বেশি নিলে হামরা কি জমি বেচে মাগনায় কাস্টমারোক তেল দিমো? কোম্পানির উচিত দাম বাড়ার কথা টেলিভিশনোত, পেপারত প্রচার করা। তা হইলে হামরা আরামে ব্যবসা করির পামো।’

তারাগঞ্জ বাজারের পাইকারি বিক্রেতা অরুণ কুমার রায় জানান, তেল পাওয়া যাচ্ছে না। ১৫ দিন হলো ডিপোতে টাকা জমা করেছেন, কিন্তু এখনো কোনো তেল পাননি। তেল না পেলে কী বিক্রি করবেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

ওই বাজারের আরেক পাইকারি বিক্রেতা রঞ্জিত রায় জানান, বোতলজাত তেলের সংকট চলছে। অনেকেই বাজারে বোতল ঢেলে খোলা তেল হিসেবে ২০০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করছেন।

রঞ্জিত বলেন, ‘আমরা বিক্রি করছি ১৭২ টাকা প্রতি লিটার। কোম্পানি তেলের দাম আরও ২৫ টাকা বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। সে জন্য বাজারে তেমন তেল ছাড়েনি। তাই সংকট দেখা দিয়েছে।’

ভোজ্যতেলের বেশি দাম ও কৃত্রিম সংকটের বিষয়ে কথা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়া বলেন, ‘বাজার মনিটরিং নিয়মিত চলছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিছুদিন আগে ডিপো থেকে ঠিকমতো তেল না দেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন। তেল কিনতে হলে ডাল কিনতে হবে, এটা অবৈধ। বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত