Ajker Patrika

বেকায়দায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত

জাহাঙ্গীর আলম, জামালপুর
আপডেট : ১০ মার্চ ২০২২, ১৪: ০৪
বেকায়দায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত

জামালপুরে দ্রব্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ায় বেকায়দায় নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেকেই বেশি টাকা দিয়ে চাহিদামতো নিত্যপণ্য কিনতে না পারায় হতাশ। মধ্যবিত্তদেরও একই অবস্থা। বাজারে গিয়ে মানুষ শুধু পণ্যের দাম দেখছেন। আর যে পণ্য একটু কম তা কিনছেন।

পণ্যের দাম হু-হু করে বাড়লেও তা নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে জোর মনিটরিংয়ের কোনো ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষের দাবি বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অনেককেই অনাহারে বা অর্ধাহারে কাটাতে হতেে পারে। চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, মরিচ, মাছ, মাংস থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম বাড়ছে লাগামহীনভাবে।

তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, নিম্ন আয়ের মানুষের কিছুটা কষ্ট হচ্ছে, তা সত্য। বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। মনিটরিং টিম বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। জিনিসপত্রের দাম অতিমাত্রায় যাঁরা বৃদ্ধি করবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরেজমিন জামালপুর শহরের দৈনিক আনন্দগঞ্জ বাজার, স্টেশন বাজার, বানিয়াবাজার, ফৌজদারী মোড় বাজার, বটতলা বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নিত্যপণ্যের দাম প্রায় প্রতিদিনই বেড়েছে। বাজারে দেশীয় মাছের সংকট রয়েছে। পুকুরে চাষ করা মাছ কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। মাংসের বাজারও চড়া। প্রতিকেজি মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজিতে। যা গত সপ্তাহেও ছিল ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা। ক্রেতারা বলছেন, কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছে মতো দাম বাড়াচ্ছেন। ব্রয়লার মুরগি ২২০ টাকা কেজি। ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা হালি। প্রতি কেজি সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া বেগুন ৪০ টাকা, আলু ২০ টাকা, কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা। মোটা চাল প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি।

সবজি ব্যবসায়ী লিটন বলেন, ‘বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। কৃষকদের কাছ থেকে সবজি বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই দাম একটু বেশি। দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ক্রেতা কমে গেছে।’

স্টেশন বাজারের ব্যবসায়ী বাপ্পী জানান, ‘বোতল তেল বিক্রি হচ্ছে ৫ লিটার ৭৯৫ টাকায়। বোতলের গায়ে ৭৮৫ টাকা লেখা। খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা কেজি। পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়।’

শহরের ফুলবাড়িয়া গ্রামের বিজলী আক্তার বলেন, ‘তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তেল খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি। ছেলে মেয়েরাও তেল কম খেতে বলেছেন। স্বামীর যে আয় তাতে তেল খাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। ঘরে ভাজা পুড়া রান্না বন্ধ রেখেছি।’

শহরের কাচারীপাড়া অটোরিকশা চালক মঞ্জু মিয়া বলেন, ‘সারা দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। ৫ সন্তান নিয়ে সংসার। ২০০ টাকা ভাড়া দিয়ে বাজারে যাওয়ার মতো সাহস হয় না। মাছ মাংস তো আমাদের কপালে নেই। প্রায় দিনই আলু ভর্তা দিয়ে সন্তান নিয়ে খাই, কি করমু! আমাদের তো বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে।’

চা বিক্রেতা আমেনা বেগম বলেন, ‘খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি আমরা। ঘরে ৫ জনের খাবার মানুষ। সারা দিনে ২০০ টাকাও পাই না। বাজার কি দিয়ে করমু। ২ কেজি মোটা চাল কিনতে ১০০ টাকা লাগে। তেল ২০০ টাকা কেজি। গবির মানুষের মরণ। সরকারতো আমাদের দেখে না।

আবদুর রহিম বলেন, ‘সারা মাস শেষে ৮০০০ টাকা বেতন। দুই ছেলে মেয়েকে লেখাপড়ার খরচই দিতে হিমশিম খাচ্ছি। বাজারে যাওয়ার অবস্থা নেই। আমাদের সংসার চালানো খুব কষ্ট হয়ে পড়েছে।’

জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিটুস লরেন্স চিরাণ বলেন, ‘বাজারে দ্রব্যের দাম বেড়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষের কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। জেলা মনিটরিং টিম বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।’ তিনি বলেন, ‘জিনিসপত্র দাম অতিমাত্রায় যারা বৃদ্ধি করবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হেফাজতসহ ধর্ম ব্যবসায়ীরা নারীবিদ্বেষী প্রচারণা চালাচ্ছে: ৬৮ মানবাধিকার সংগঠন

মানিকগঞ্জে সালিসে বিএনপি নেতার নির্দেশে পাঁচ ভাইকে জুতাপেটা

রাখাইনে মানবিক করিডর: জান্তার আপত্তিতে সরকারে দ্বিধা

ভারতের ব্ল্যাকআউট মহড়া, সীমান্তে আটার মজুত বাড়াচ্ছে পাকিস্তান, যুদ্ধ কি লেগে যাচ্ছে

মানবিক করিডরে বাংলাদেশের ফায়দা কী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত