Ajker Patrika

‘হ্যাঁ, আমি লিখেছি’

মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ০৩
‘হ্যাঁ, আমি লিখেছি’

রাজনীতি করতেন না তিনি। ছিলেন না বাকপটু। তবে পড়াশোনা করেছিলেন অগাধ। ভেতর থেকে জানতেন সংস্কৃতির গভীরতা। যুক্তি দিয়ে বলতে পারতেন কথা। রবীন্দ্রনাথ যে আমাদের সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় শক্তি, তা বিশ্বাস করতেন। তাই একদল অর্বাচীন যখন রবীন্দ্রনাথকে বিসর্জন দিতে চাইল বাংলা সাহিত্য থেকে, তখন তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। সোজা বলেছিলেন, এটা ভুল পথ।

একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন, একই সঙ্গে ক্লাস নিয়েছেন, দাপ্তরিক কাজগুলো করেছেন। শিক্ষকের যে কাজ, শিক্ষার্থীদের মনে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে দেওয়া, সে চেষ্টায় তাঁর ত্রুটি ছিল না কখনো। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর অন্যান্য আলবদর সদস্যের সঙ্গে তাঁর ছাত্র চৌধুরী মঈনুদ্দীনও এসেছিল তাঁকে নিয়ে যেতে। খুবই বিনয়ের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের বলেছিল, ‘স্যারের কোনো ক্ষতি হবে না। অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দিয়ে যাওয়া হবে তাঁকে।’

কিন্তু কী ঘটেছিল মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর সঙ্গে? চিহ্নিত আলবদর সদস্য চৌধুরী মঈনুদ্দীন কি সত্যিই ফিরিয়ে দিয়েছিল তাঁকে?

যাঁদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেদিন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন মুনীর চৌধুরীও। একটি ঘরে বন্দী করে রাখা হয়েছিল তাঁদের। কিছুক্ষণ পর রড নিয়ে এসেছিল কিছুসংখ্যক যুবক। প্রথমে তারা এসেছিল মুনীর চৌধুরীর কাছে। বলেছিল, ‘এত দিন তোমরা শিক্ষা দিয়েছ, এবার আমরা তোমাদের শিক্ষা দেব।’

তারপর জিজ্ঞেস করেছিল, ‘রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বই লিখেছ?’

মুনীর চৌধুরী বলেছিলেন, ‘না, আমি রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বই লিখিনি।’

মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, আমি লিখেছি।’

এরপর রড দিয়ে আঘাত করতে শুরু করে তারা মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীকে। শুধু তাঁকেই নয়, সেই ঘরে যেসব বুদ্ধিজীবী ছিলেন, তাঁদের সবাইকেই প্রচণ্ড রকম মারধর করতে থাকে ওরা। তারপর সবাইকে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় কাটাসুরে।

শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাহিত্যিকসহ অনেকেই ছিলেন সেই দলে। এরপর বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাঁদের হত্যা করা হয়। মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীও হন হত্যাকাণ্ডের শিকার।

সূত্র: তানভীর হায়দার চৌধুরী, আমার বাবার যুদ্ধ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত